খেলাধুলা

কীভাবে বদলে গিয়ে টেস্টের রাজা হলো নিউ জিল্যান্ড?

জানেন কী, ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে জয় পরাজয়ের অনুপাতে ভারতের পরই রয়েছে নিউ জিল্যান্ড। সংখ্যাটা ১.৮৮। অথচ ২০০৭-২০১৩ পর্যন্ত এ অনুপাত ছিল মাত্র ০.৪৪। আরেকটি পরিসংখ্যান আরও চমকে দিতে পারে।

এই দুই অর্ধে নিউ জিল্যান্ড ম্যাচ জিতেছে প্রথম অর্ধের প্রায় তিন গুণ। ২০০৭-২০১৩ পর্যন্ত ৫৭ টেস্টে মাত্র ১২টি জিতেছিল তারা। হেরেছিল ২৭টি। অথচ ২০১৪-২০২১ পর্যন্ত ৫৯ ম্যাচে ৩২টি জিতেছে কিউইরা। হেরেছে ১৭টি। সংখ্যাগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, সংখ্যাগুলো সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার স্তম্ভ, অক্লান্ত পরিশ্রমের একেকটি গল্প, বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার আত্মবিশ্বাস জাগানিয়া অনুভূতি। সেসবের মিশেলে নিউ জিল্যান্ড এবার পেলো টেস্ট ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। প্রথমবারের মতো আয়োজিত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জিতে নিউ জিল্যান্ড এখন টেস্টের রাজা।

নিউ জিল্যান্ড টেস্টের রাজা কেন হলো সেসবের পরিসংখ্যান ওপরে দেওয়া হয়েছে। মাঠের ক্রিকেটের বাইরে তারা কতটা সংবেদনশীল, কতটা ঐক্যবদ্ধ এবং নিজেদের প্রতি বিশ্বাসে অটল, তার চিত্র এবার দেওয়া যাক।

নিউ জিল্যান্ডের মাত্র ১৪জন ক্রিকেটার ৭০টির বেশি টেস্ট খেলেছেন। যেখানে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জেতা খেলোয়াড় আছেন পাঁচজন। রস টেলর, কেন উইলিয়ামসন, টিম সাউদি, বিজে ওয়াটলিং ও ট্রেন্ট বোল্ট। দুজন বোলার, দুজন ব্যাটসম্যান এবং একজন উইকেটরক্ষক। মানে তিন বিভাগে এমন পাঁচজন ক্রিকেটার রয়েছেন তারা দীর্ঘদিন দলে একসঙ্গে ছিলেন। 

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তারা দল থেকে সরে যাননি। সেই সঙ্গে টম ল্যাথাম (৫৮), নিল ওয়াগনার (৫৩) রয়েছেন যারা ৫০টির বেশি টেস্ট খেলেছেন। সব মিলিয়ে এ সাত ক্রিকেটার এক হয়ে গোটা কিউই দলকে চালিয়েছেন। পাশাপাশি টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামার আগে টানা ১৯ মাস একসঙ্গে খেলেছেন টম ব্লান্ডেল, হেনরি নিকলস, মিচেল স্যান্টনার ও কাইল জেমিসন।

ধারাবাহিক ফল পাওয়ায় নিউ জিল্যান্ড খুব বেশি পরীক্ষাও করেনি গত সাত বছরে। ৫৯ টেস্টে ৩৫ ক্রিকেটার কিউই দলে সুযোগ পেয়েছে। অর্থাৎ যে ১১ জন ক্রিকেটার নিয়মিত খেলেছেন, তাদের বাইরে মাত্র ২৪ জনকে দলে ডাকা হয়েছিল। ২.৪২ টেস্টে নতুন একজন করে ক্রিকেটারকে দলে ডেকেছিল তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের থেকে এতটা স্টেবল পুল অন্য কারও ছিল না। এ সময়ে ভারত ৪৫, অস্ট্রেলিয়া ৪৬, ইংল্যান্ড ৫৯ ও শ্রীলঙ্কা ৫০ ক্রিকেটারকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে।

২০১৯ সাল। লর্ডসের সবুজ গালিচায় আম্পায়ারের ছোট্ট একটা ভুলে কেন উইলিয়ামসনে চোখে জল এনে দিয়েছিল। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চে শিরোপা হাতছাড়া তার। লর্ডসের পরিষ্কার আকাশে তাকিয়ে উইলিয়ামসন কতটা আর্তনাদ করেছিলেন, কতটা আক্ষেপে পুড়েছিলেন তা জানে না কেউ! বুঝতেও দেননি কাউকে। হাসিমুখে রানার্সআপ অধিনায়ক মাঠ ছেড়েছিলেন।

২০২১ সালে আবার সেই ইংল্যান্ড। এবার ভেন্যু সাউদাম্পটন। হতে পারতো লর্ডস। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল চলে যায় এজেস বোল স্টেডিয়ামে। সেখানে রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। কখনও আলোকস্বল্পতা, কখনও বৈরি আবহাওয়া। প্রতিকূল সব পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে ২২ গজে যতক্ষণ খেলা হলো ততক্ষণ নিউ জিল্যান্ড নিজেদের আধিপত্য দেখালো। ভারতকে হতাশায় ডুবিয়ে জিতে নেয় টেস্ট ‘মেস’। টেস্টের রাজার মুকুটকে টেস্ট মেস-ই বলে। যা একমাত্র নিউ জিল্যান্ডের প্রাপ্য।