খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের বিদায়, কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়াম

রেফারি বাঁশি বাজাতেই মাথা নিচু করে বসে পড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। চোখেমুখে ছিল বিরক্তির ছাপ। বেলজিয়ামের কাছে পিছিয়ে পড়েও দারুণ সব গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ার খেসারত দিতে হলো তার দলকে। পাঁচ বছর আগে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে যে শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা হারাতে হলো শেষ ষোলোতেই। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের কাছে থামলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার লড়াই। ১-০ গোলে হেরে ইউরো থেকে বিদায় নিলো পর্তুগাল, টানা দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো বেলজিয়াম।

সেভিয়ের মাঠে প্রথম সুযোগ এসেছিল পর্তুগালের কাছে। ৬ মিনিটে রেনেতো সানচেজ বল বাড়ান গোলপোস্টের বাঁ দিকে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিওগো জোতা। বেলজিয়ান ডিফেন্ডার টবি আল্ডারভেইরেল্ডের চাপে পড়ে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি, বল মারেন গোলপোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে।

বক্সের বাইরে ভারমায়েলেনের হ্যান্ডবলে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ২৫ মিনিটে ফ্রি কিক নেন রোনালদো। এ নিয়ে ইউরোতে ২৭তম ফ্রি কিক নিলেও তা গোলে রূপ দিতে পারেননি পর্তুগিজ অধিনায়ক। তার ডান পায়ের শক্তিশালী শট ফিরিয়ে দেন বেলজিয়াম গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া। মুহূর্তের মধ্যে পালহিনহার ফিরতি হেডও ব্যর্থ করেন তিনি।

৩৭ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার সঙ্গে ওয়ান-টু পাসের পর গোলের জন্য শট নেন মুনিয়ের। বল ছিল না গোলপোস্টের ধারেকাছে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বেলজিয়ামের প্রথম প্রচেষ্টা। পাঁচ মিনিট পর তাদের গোল উদযাপনের ক্ষণ আসে। ডি ব্রুইনার শট প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় ব্লক করলেও বল পায়ে পান মুনিয়ের। বক্সের বাইরে বল দেন তিনি। থরগান হ্যাজার্ড পা দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডানপায়ের নিখুঁত শটে বেলজিয়ামকে লিড এনে দেন। রুই প্যাট্রিসিও ঝাঁপিয়ে পড়লেও তার নাগালের বাইরে থেকে বল জড়ায় জালে।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পালহিনহার ট্যাকলে চোট পান ডি ব্রুইনা। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে উঠে দাঁড়ালেও বিরতির পর ফের হাঁটুর চোট পান। দ্রিয়েস মের্টেন্স তার বদলি হয়ে মাঠে নামেন। দারুণ জয়ের দিনে ম্যানসিটির তারকার ইউরো শেষ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া ছিল পর্তুগাল। কয়েকটি সুযোগও তৈরি করেছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। কোর্তোয়াও দারুণ সব সেভে লিড ধরে রাখেন। ৫৯ মিনিটে রোনালদোর পাস থেকে জোতার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর রেনেতোর পাস থেকে জোয়াও ফেলিক্সের শট সহজে রুখে দেন কোর্তোয়া।

৮২ মিনিটে রুবেন দিয়াসের শক্তিশালী হেড ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সেভ করেন কোর্তোয়া। পরের মিনিটে গেরেরোর ডান পায়ের শট ডান পোস্টে আঘাত করে। খেলা শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে তার ক্রস বক্সের মধ্যে থেকে রোনালদো হেড করে দূরের পোস্টে বাড়ান, আন্দ্রে সিলভা শট নিতেই হস্তক্ষেপ করেন কোর্তোয়া।

বড় টুর্নামেন্টে প্রথম দেখায় বেলজিয়ামের ধাক্কা সামলাতে পারলো না পর্তুগাল। ১৯৮৯ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হারের পর সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা পাঁচ ম্যাচ অপরাজিত তারা। এবারের দেখায় সেই মর্যাদা হারালো তারা। আগামী শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ ইতালি।

এই আসরে পাঁচ গোল করে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ডে ইরানের লিজেন্ড আলী দাইয়িকে স্পর্শ করেন রোনালদো। কিন্তু রেকর্ডটা একার করে নিতে পারলেন না। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ওই সময় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে তারা।