খেলাধুলা

মেসি বনাম নেইমার, দুই বন্ধুর লড়াই

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালোবাসা পোশাকি৷ বন্ধুত্বের আটপৌরে কাপড়ের দুই-এক জায়গায় ছেড়া থাকিলেও চলে, ঈষৎ ময়লা হইলেও হানি নাই, হাঁটুর নিচে না পৌঁছালেও পরিতে বারণ নাই৷ গায়ে দিয়া আরাম পাইলেই হইলো৷’ বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কী হতে পারে!

বন্ধুত্ব, সে এক আত্মার সম্পর্ক। বলা হয়ে থাকে, প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব। তবে বন্ধুত্বের মাঝে যখন চলে আসে দায়িত্ব, কর্তব্য, অঙ্গীকার তখন বন্ধুও হয়ে যায় শত্রু। জীবনের মোড়ে ঠিক এমন অবস্থানেই আছেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র।

কোপা আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে তারা দুজন মুখোমুখি। ২০০৭ সালে শেষবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। সেবার ব্রাজিল ৩-০ গোলের জয় পায়। এবারের কোপায় কী হবে? ব্রাজিলই শিরোপা রেখে দেবে নাকি আর্জেন্টিনা ২৮ বছর পর জিতবে বড় কোনও শিরোপা। উত্তরটা জানা যাবে, রোববার সকালেই।

মাঠে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের লড়াই মানেই ভিন্ন আবহ। এবার দুই পাশে ফুটবলের দুই মহাতারকা রয়েছেন। ফলে লড়াইয়ের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। দুইজনই আছেন সুপারফর্মে। দলকে ফাইনালে নিয়ে আসতে দুইজনই রেখেছেন বড় ভূমিকা। কখনও গোল করেছেন। কখনও অ্যাসিস্ট। সব মিলিয়ে তাদের উপস্থিতি পাল্টে দিয়েছে গোটা দলকে।

এবার ফাইনাল মঞ্চে দুই বন্ধুর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণের পালা। দুইজনের বন্ধুত্ব শুরু হয় ২০১৩ সালে যেবার নেইমার সান্তোস ছেড়ে যোগ দেন বার্সেলোনায়। ক্যাম্প ন্যু মেসির স্থায়ী ঠিকানা। পাঁচ মৌসুম সেখানে থেকে নেইমার উড়াল দিয়েছেন পিএসজিতে। এ পাঁচ মৌসুমে মেসি, নেইমার জুটি বেঁধে আটটি শিরোপা জিতেছেন। দুটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে, একটি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। ২০১৪-১৫ মৌসুমে জিতেছেন মহাদেশীয় ‘ট্রেবল’- লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা দেল রে। বার্সায় পরের মৌসুমে (২০১৫-১৬) জিতেছেন ঘরোয়া ‘ডাবল’। ধারাবাহিক সাফল্য আসায় দুজনের সম্পর্কটা মজবুত হয়, অটুট থাকে।

নেইমার রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে বার্সেলোনা ছাড়লেও বন্ধুর জন্য ভালোবাসা ও সম্মান একটুও কমেনি মেসির। ঠিক নেইমারও মেসির জন্য বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়েছেন বারবার। মেসি নেইমারকে বার্সেলোনায় ফেরানোর চেষ্টা কেরছেন। নেইমারও তার সঙ্গে আবারও খেলার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু হিসাবনিকাশ না মেলায় দুইজনের একই জার্সিতে আর মাঠে নামা হয়নি।

তবে দুজনের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়েছে দিনকে দিন। ক্লাব ফুটবলে দুজন এর আগেও মুখোমুখি হয়েছে। সাফল্যের হাসি হেসেছেন দুইজন। এবার শিরোপার লড়াইয়ে কে উড়াবেন বিজয়ের পতাকা? মারাকানায় নেইমারের হাতে শিরোপা উঠবে নাকি মেসি শিরোপা জিতে তার চিরকালীন শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করবেন। সময়ের কাছেই উত্তরটা তোলা থাক। আর দুই বন্ধুর জমজমাট লড়াই উপভোগ করা যাক।