খেলাধুলা

কোভিডে ‘পিক টাইম’ হারানো ও লিটনের ‘টেস্ট’ ব্যাটিংয়ের আদ্যোপান্ত

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ প্রথম সনাক্ত হবার আগে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে লিটনের দোর্দান্ড প্রতাপ চেয়ে দেখেছে বিশ্ব। 

কিন্তু কোভিডের দীর্ঘ বিরতির পর লিটন যখন মাঠে ফেরেন তখন দেখেন উল্টোচিত্র। ব্যাটে রান নেই। আউট হবার ধরন দৃষ্টিকটু। ৮ ইনিংসে টানা ব্যর্থ। তিনটি শূন্যসহ রান মাত্র ১০১। বিবর্ণ পারফরম্যান্সে দল থেকে বাদও পড়েছিলেন। আবার সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিরে লিটন ফিরে পান নিজেকে। প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লিটনের ব্যাট হাসল। পেলেন আরেকটি সেঞ্চুরি। 

শুক্রবার ১০২ রানের ঝকঝকে ইনিংসে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন লিটন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে পেয়েছেন চতুর্থ ম্যাচসেরার পুরস্কার। ব্যর্থতায় গণমাধ্যম এড়িয়ে গেছেন বারবার। আজ ভালো করে মুখ ভরা হাসি নিয়ে কথা বলেছেন। জানালেন, কোভিডের দীর্ঘ বিরতিতে ছন্দ হারান। তালগোল পাকিয়ে বাড়তি চাপ নেওয়ার কারণে রান করতে পারছিলেন না। 

‘আমার চাওয়া সব সময়ই রান করা। শুধু আমি না, প্রতিটি ব্যাটসম্যানই চাইবে যখনই ক্রিজে যায় রান করবে। কোভিডের আগে আমি একটা ভালো ধারাবাহিকতা পেয়েছিলাম। ওই সময় কোভিড না হয়ে যদি স্বাভাবিক খেলা চলত তাহলে হয়ত বা সুযোগ ছিল ভালো পারফর্ম করার। কারণ ওই সময় আমার পিক টাইম চলছিল।’

‘কোভিডের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। কারণ মাথায় অনেক চিন্তা ছিল যে পারফর্ম করতে হবে পরিস্থিতিও কঠিন ছিল। এভাবে দেখতে দেখতে আটটা ইনিংস গেছে। চেষ্টা করেছি যত ইনিংসই খেলি না কেন যেন ভালো করতে পারি, দলকে কিছু দিতে পারি। পাশাপাশি বড়রা সমর্থন দিয়ে গেছেন, পরিবার বিশেষ করে স্ত্রী কাছ থেকে সমর্থন এসেছে।’ – যোগ করেন লিটন। 

লিটনের আজকের ইনিংসের শুরুটা ছিল বেশ ধীরস্থির। রানের খাতা খুলতে ১০ বল নেন। প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান ৩৫তম বলে। ৭৮ বলে আসে তার হাফ সেঞ্চুরি। উইকেটে নিজেকে সময় দিয়েছেন। তাতে রান পেয়েছেন। পাশাপাশি সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে দেয়াল হয়ে ছিলেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে ৭৮ বল খেললেও পরের ৫০ রান পেতে মাত্র ৩২ বল নেন লিটন। খুব বেশি বাউন্ডারিতে জোর দেননি। সিঙ্গেল ও ডাবলসে ছিল তার মনোযোগ।

ম্যাচজয়ী ইনিংস নিয়ে লিটন বলেন, ‘কন্ডিশন ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। প্রথম ২০ ওভার…আবহাওয়া ও ওদের বোলারদের বোলিং মিলিয়ে কঠিন কন্ডিশন ছিল। আমি এমনিতেও ম্যাচের আগে একটু চাপে ছিলাম যে, অনেকদিন ধরে রড় রান করতে পারছি না…পাশাপাশি উইকেটের অপরপ্রান্ত থেকে যখন দেখছিলাম উইকেট পড়ছে, দল চাপে, দলকে একটা ভালো অবস্থানে নেয়ার দায়িত্ব আমার ছিল। সেজন্য আমার উইকেটে থাকতে হবে। চেষ্টা করেছি ২০-২৫ ওভার পর্যন্ত ‘‘টেস্ট’’ ব্যাটিং করে যাওয়ার।’

‘চিন্তা করেছি যে কন্ডিশন এখন আমার অনুকূলে না, এখান থেকে দলকে উদ্ধার করতে হলে উইকেটে থাকতে হবে তাহলে আমি পরের ধাপে যেতে পারবো। রিয়াদ ভাই আসার পর খেলাটা বদলে যায়। ওরা যখন স্পিন আনে তখন ব্যাটিং করাও সহজ হয়। এখানে তো টেস্ট ক্রিকেট খেললাম, পারফর্ম করেছি। মনে ছিল যে, উইকেটে দাঁড়িয়ে যেতে পারলে বড় স্কোর করা যাবে। তাছাড়া দলের মিটিংয়ে বলা হচ্ছিল, শুরুর ৫ জনের কেউ ৪০ ওভার খেললে বড় স্কোর হবে। ওই জিনিসটাই মাথায় ছিল, যেন কমপক্ষে ৩০ ওভার পর্যন্ত খেলতে পারি।’ – বলেন লিটন। 

নিজের ফেরার লড়াইয়ের শুরুটা ভালো হলো। জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে তার ১০২ রানের ইনিংস নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। এবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। দেখার বিষয় ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন কিনা।