খেলাধুলা

পাওয়ার হিটিংয়ে অজি বধের রণপ্রস্তুতি

লম্বা রান-আপে অফ স্টাম্পের বাইরে বল করলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ব্যাটিংয়ে তখন জাতীয় দলের নবাগত সদস্য শামীম হোসেন পাটোয়ারি। জায়গা থেকে সরে সজোরে ড্রাইভ করলেন কাভারে। বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং করে শামীম তখন ঘামে ভিজে একাকার; দ্য ফিজ হাসি দিয়ে কাভারে অঞ্চলের দিকে কী যেন ইঙ্গিত করছেন! হয়তো শামীমকে বলছেন, 'এখানে ফিল্ডার থাকে, এই শটে কিছুই হবে না।'

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের দৃশ্য এটি। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) চলছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের রণপ্রস্তুতি। পরদিন বিকেলেই যে নামতে হবে মাঠের লড়াইয়ে। তাইতো নিজেদের শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিচ্ছেন সবটুকু দিয়ে।

শামীম যখন নেটে ব্যাটিং করছিলেন, তখন তার দুই পাশের নেটে ব্যাটিং করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার ব্যাটে চলছিল বিগ শটের মহড়া। কোনো কোনো শট নেটের বেড়াজাল পেরিয়ে যখন বাইরে আসে তখন সবার কণ্ঠেই সতর্কবাণী- ‘এই বল আসছে, সাবধান!’ তার পাশেই নুরুল হাসান সোহান। তিনিও মাহমুদউল্লাহর থেকে কম যাননি।

শের-ই-বাংলায় বিকেলে ওয়ার্মআপ শেষে যখন সবাই জিরিয়ে নিচ্ছিলেন, তখন সবার আগে সাকিব আল হাসান চলে যান ইনডোরে। পেস-স্পিন আর থ্রোয়ারে ঝালিয়ে নেন নিজের ব্যাটিংয়ের দক্ষতাকে। তামিম-লিটন-মুশফিকবিহীন বাংলাদেশ যে তাকিয়ে থাকবে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের দিকেও। সেটা সাকিব নিজেও বোঝেন বেশ ভালোই।

একে একে নেটে পাওয়ার হিটিং করে গেছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, মোহাম্মদ মিথুন, আফিফ হোসেন ধ্রুবরা। বিশ্বকাপের আসরে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চারটি ম্যাচ খেলে চারটিতেই হারা বাংলাদেশ এই প্রথম তাদের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে। ঘরের মাঠে অনভিজ্ঞ অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর এইতো সবচেয়ে বড় সুযোগ। আর এক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের যে বড় রোল প্লে করতে হবে সেটা না বললেই নয়!

মাহমুদউল্লাহ নিজেই জানিয়েছেন, ক্রিকেটাররা যদি নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সটা দেখাতে পারেন, তাহলে এটা সবচেয়ে বড় সুযোগ। তিনি বলেছেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আমরা আমাদের স্কিলের কতটা ম্যাচে প্রয়োগ করতে পারি। পরিস্থিতি অনুসারে কতটা প্রয়োগ করতে পারছি, সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আমার মনে হয় ভালো একটা সিরিজ হবে। আমরা জিম্বাবুয়েতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো খেলেছি এবং আমাদের আত্মবিশ্বাসও আছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি যেন নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি।'  

তবে শুধু ব্যাটসম্যানরা নয়, বোলাররাও নিজেদের নিংড়ে দিয়েছেন। বল হাতে হাত ঘুরিয়েছেন নাসুম আহমেদ-তাইজুল ইসলামরা। ব্যাটিং শেষে আফিফও নিজের বোলিংকে পরখ করেছেন। তবে স্বস্তির বিষয় হলো মোস্তাফিজের সদর্পে বোলিং করা। প্রথমে ছোট রান-আপে বোলিং করে গেলেও ধীরে ধীরে লম্বা হয় রান-আপ। বাড়তে থাকে বলের গতি। শুরুতেই বোলিং করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। এরপর তাসকিন আহমেদ-রুবেল হোসেনরা গতির ঝড় তোলেন।

ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ঢাকা লিগের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য নামছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েতে স্বস্তির সফর শেষে এবার ঘরের মাঠে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের অগ্নিপরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উতরাতে হলে নিংড়ে দিতে হবে সবাইকেই। সেই রণপ্রস্তুতি নিয়েছেন টাইগাররা; এবার মাঠে প্রয়োগ করার পালা।