খেলাধুলা

নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে অবশেষে মিরপুরে ক্রিকেটানন্দ

অনেকটা নাক উচুঁ স্বভাবের বলেই একগাদা বায়না! বায়নাও নয়, রীতিমত শর্ত। ক্রিকেটীয় কূটনীতিতে পিছিয়ে থাকা ক্রিকেট বোর্ডের থেকে যত বেশি সুবিধা নেওয়া যায় ততই লাভ। বৈশ্বিক মহামারিতে নিজের সুরক্ষা সবার আগে!

কোভিডকালিন পরিস্থিতিতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিজেদের খেলোয়াড়দের সুরক্ষা নিশ্চিতে ব-দ্বীপে আসতে কড়া শর্ত দেবে তা জানা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু এতোটা কড়াকড়ি হবে ধারণা করতে পারেনি কেউ!

সাতদিনে পাঁচ ম্যাচ, এক ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজন, সিরিজ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে ১০ দিনের বাধ্যতামূক কোয়ারেন্টাইন, পাঁচ তারকা পুরো হোটেল বুকিং করা, তিনদিনের বিরতিতে কোভিড পরীক্ষা, দেশে আসার পর বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে মুখোমুখি না হয়ে বিশেষ সুবিধা নেওয়াসহ আরও কত কিছু। পান থেকে চুন খসলেই সমস্যা- তাইতো মুশফিকুর রহিম পুরোপুরি ফিট হয়েও কোয়ারেন্টাইন শর্ত না পূরণ করায় খেলতে পারছেন না।

এর আগে বাংলাদেশ ৩২টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেললেও কখনো চারটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেনি। সেটাও আবার খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ফলে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশের কাছে বিরাট কিছু। এর ওপরে দুই দলের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাড়তি উন্মাদনা তৈরি করেছে। এর আগে চারটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে।   কিন্তু এখানে খেলার আলোচনাটাই নেই। জৈব সুরক্ষা বলয় যেন সবকিছু। কি করা যাবে, কি করা যাবে না, সেই হিসাব মিলাতে মিলাতে শেষ রাতের ঘুম! ক্রিকেটের বাইরে এতো শর্ত ছিল যে বিসিবিও হিমশিম খাচ্ছিল। অবশেষে সব চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এখন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে ক্রিকেটানন্দ। শোনা যাচ্ছে ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ।

বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আজ। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ক্রিকেটে আলো পড়তেই আলোচনা দুই দলের লক্ষ্য নিয়ে। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দুই দলের নজর সেদিকেই। বাংলাদেশের দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়ে রাখলেন সেরা টিম কম্বিনেশন তৈরি করবেন এই সিরিজ দিয়েই, ‘আমাদের তরুণদের এটা অনেক বড় সুযোগ। নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করার। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। আমাদেরকে সেদিকেই মনোযোগী হয়ে সেরা কম্বিনেশন বের করতে হবে।’

তবে বিশ্বকাপের চিন্তায় অজিবধের লক্ষ্য আড়াল করতে চান না মাহমুদউল্লাহ। ওয়ার্নার, স্মিথ, ফিঞ্চ, ম্যাক্সওয়েল, কামিন্সদের ছাড়া অস্ট্রেলিয়া দল অনেকটাই তারুণ্য নির্ভর। এ দলটিকে হারিয়ে সিরিজ জয়ের বড় সুযোগ দেখছেন বাংলাদেশের দলপতি, ‘আমাদের দলের জন্যও বড় সুযোগ, দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্য বড় সুযোগ আমাদের দক্ষতা দেখানোর জন্য। আমি বিশ্বাস করি আমরা ঘরের মাটিতে শক্তিশালী একটি দল। চেষ্টা করবো যেন নিজেদের প্রমাণ করতে পারি।’

র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দশে, অস্ট্রেলিয়ার পাঁচে। তবে টি-টোয়েন্টিতে এসব বড় ভূমিকা রাখে না বলেই মন্তব্য করলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি টি-টোয়েন্টিতে যত উপরের র‌্যাংকিংয়ের দল হোন না কেন নির্দিষ্ট দিনে যদি ভালো খেলতে না পারেন তাহলে যেকোনো দলের কাছেই হারতে পারেন। আমাদের দলের জন্যও বড় সুযোগ তাদের হারানোর। খেলোয়াড়দের নিজেদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ এটি।’

ফিঞ্চের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন ম্যাথু ওয়েড। তরুণদের নিয়ে ভালো করতে মুখিয়ে তিনি। পাশাপাশি মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউডের থেকে সেরা ক্রিকেট প্রত্যাশা করছেন নতুন অধিনায়ক।

২০০৫ সালে ওয়ানডে, ২০১৭ সালে টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে জয়ের সেরা সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। এবার ক্ষুধা মেটাতে পারবে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী? কাজটা সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। অধরা কাজটাই করতে হবে সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের।