খেলাধুলা

যে বিশ্বাস ছড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ ‘এক’ করেছেন বাংলাদেশকে

মেহেদীর শর্ট বল পুল করে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা উড়ালেন অ্যালেক্স ক্যারি। ৬ বলে ২২ রানের প্রয়োজনে ব্যাটিং করে শুরুতেই ৬ রান পেয়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ কমে আসে। মেহেদী ছক্কা হজম করলেও মাহমুদউল্লাহ তাকে একটা কথাও বললেন না! কাছেও গেলেন না!

অথচ দুই ওভার আগে পয়েন্টে তার হাতে বল দিয়ে এক রান নিয়ে যাওয়ায় মাহমুদউল্লাহর চোখ রাঙানি, বকা, শাসন সব হজম করতে হয়েছে তরুণ খেলোয়াড়কে। শুধু তাকেই নয়, শামীমের হাত ফসকে এক রান বেরিয় যাওয়ায় সে কি চিৎকার মাহমুদউল্লাহর।

শেষ ওভারে মেহেদী ফুলটস বল করে নো করলেন। ফ্রি হিট দিলেন। তবুও মাহমুদউল্লাহ তাকে কিছু বলেন না। কারণটা জানা না গেলেও বোঝা যাচ্ছিল, তরুণ স্পিনারের ওপর অগাধ বিশ্বাস অধিনায়ক। সেই বিশ্বাস থেকেই মিলল কাঙ্খিত ফল। পরের ৫ বলে মাত্র ৫ রান দিয়ে মেহেদী জিতিয়ে দেন বাংলাদেশকে, মাহমুদউল্লাহকে।

টানা তিন জয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো ফরম্যাটে সিরিজ জয় বাংলাদশের। মাহমুদউল্লাহর উদযাপনও ছিল দেখার মতো। মুষ্টিবদ্ধ হাত শূণ্যে ঘুষি ছুঁড়ে দেন কয়েকবার। বড় কিছু শিকারের পর তৃপ্ত বাঘের অবয়ব তার চোখেমুখে ফুটে উঠে। তাকে ঘিরে ধরেন সতীর্থরা। চলে নিত্যানন্দ। অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে তালি দিয়ে ফিরে আসা পথে আবারও উল্লাস মাহমুদউল্লাহর। আবার মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে শূণ্যে ঘুষি ছুঁড়েন। মাহমুদউল্লাহ সামনে, পেছনে ওরা ১৬ জন।

ড্রেসিংরুমে ঢোকার পর ব্যাট-প্যাড সামনে যে যেটা পেয়েছে সেটা আঘাত করে উল্লাস। সবশেষে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ড্রেসিংরুমে চলল, ‘আমরা করবো জয়, আমরা করবো জয়….।’

বাংলাদেশ জয়ের নায়ক মাহমুদউল্লাহ। মন্থর ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি পেলেও তার ইনিংসটি ছিল কার্যকরী, দলের হয়ে সর্বোচ্চ।তিন ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং, বোলিং পারফরম্যান্সের থেকেও তার অধিনায়কত্ব ছিল দেখার মতো। তিনটি ম্যাচই লো স্কোরিং। ফলে অধিনায়কের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটা নেওয়া। এই যেমন, গতকাল ১৪তম ওভারে সাকিবকে বোলিংয়ে আনা। মিচেল মার্শ ও ম্যাকডরমেটোর ৬৩ রানের জুটি বাংলাদেশকে ভয় দেখাচ্ছিল। সে সময় সাকিব বোলিংয়ে এসে ফেরান ম্যাকডরমেটকে। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহ নিজের পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছেন গণমাধ্যমে,‘ টি-টোয়েন্টিতে পরিকল্পনা মাফিক আগাতে হয়। আবার পরিকল্পনা থেকে সরে গিয়েও কাজ করতে হয়। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সাকিবকে যখন ১৪তম ওভারে আনা হলো তখন আমার উইকেটের দরকার ছিল। সাকিব সেই কাজটাই করেছে।’

অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন লিখা হয়ে গেছে গতকাল। বলার অপেক্ষা রাখে না বড় মঞ্চে অধিনায়কত্বও পাকাপাকি হয়ে গেছে তার। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিশ্চিতভাবেই তার হাত ধরেই মাঠে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তার অধিনায়কত্বের রসদ না থাকলে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারানো যেত না সহজে। তবে দলীয় খেলা ক্রিকেটে মাহমদুউল্লাহ একা নেননি কোনো কৃতিত্ব। বিরাট সাফল্যের জন্য দলকেই ভাসিয়েছেন প্রশংসার স্তুতিতে।

‘ক্রেডিট গোউস টু ফুল টিম। ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, তাদের ক্ষুধা, অ্যাটিটিউড মিলিয়ে টিম অ্যাফোর্ট ছিল, ইনক্লুডিং টিম ম্যানেজমেন্ট। আমরা সবাই নিজেরা একজন আরেকজনকে ব্যাক করেছি যে, সিরিজটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আমরা সব সময় বিশ্বাস করি, টি-টোয়েন্টিতে র‌্যাংকিংয়ে আমরা নিচে আছি কিন্তু আমাদের ভেতরের বিশ্বাস ছিল আমরা টিম হিসেবে ভালো, আমাদের আরো ভালো করা উচিত এবং করতে পারি। এই বিশ্বাসটা সবার ভেতরে ছড়ানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছেলেরা মন থেকে একজন আরেকজনকে সাপোর্ট করেছে। মাঠে সেটার প্রতিফলন দেখতে পেয়েছি। টিমের সাফল্যে খুশি। ছেলেদের সাফল্যে খুশি। ক্রেডিট সবার যাওয়া উচিত’– বলেন মাহমুদউল্লাহ।