খেলাধুলা

সাফল্যে উদ্ভাসিত বোর্ড, ব্যর্থতায় হতোদ্যম

চার বছর পর দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। যেরকম হইচই ও হুলুস্থুল থাকার কথা, এবার বিসিবির সভায় তেমন কিছুই হয়নি। ১৬৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ১২০ জন উপস্থিত হয়ে বিসিবির এজিএম ‘সফল’ করেছেন। কাউন্সিলরদের সামনে বিসিবি চার বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। তুলে ধরা হয়েছে তিন বছরের আর্থিক বিবরণী ও চলতি বছরের বাজেট। সামান্য কিছু ভুল-ত্রুটি ও সংশোধনী বাদে বিসিবির আর্থিক বিবরণী ও কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেননি কেউই। তবে কাউন্সিলরদের থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবও এসেছে।

সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

১) দুটি জাতীয় দল করার পরিকল্পনা।

২) আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা।

৩) ক্রিকেটারদের পেনশন।

৪) বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার খরচ বাড়ানো।

এসব প্রস্তাব বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। বর্তমান পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ থাকাকালে বোর্ড সভা করে সেসব অনুমোদনের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

কাউন্সিলরদের সামনে শেষ চার বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন নাজমুল। সেসব নিয়ে বিস্তারিত কথাও বলেন তিনি। সাফল্যে বিসিবি উদ্ভাসিত, ব্যর্থতায় হতাশ। সেসব কী?

যে সব সাফল্যে উদ্ভাসিত বোর্ড

১) বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে ঘরোয়া ও হোম সিরিজ ও টুর্নামেন্টগুলো বঙ্গবন্ধুর নামকরণ। দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা সিরিজও বঙ্গবন্ধুর নামকরণ। জিম্বাবুয়ে সিরিজে মুজিব শতবর্ষ হাইলাইট।

২) অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন ভেন্যুতে পূর্ণাঙ্গ জিমনেশিয়াম তৈরি। সিলেটের আউটার স্টেডিয়ামে আলাদা মাঠ এবং বরিশালে বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

৩) পাইপলাইন তৈরি করা। স্কুল ক্রিকেট ১৫-১৬ হাজার বাচ্চা নিয়ে আয়োজন করা। যেখানে অংশ নেয় ছয়শ স্কুল। সেখান থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় নির্বাচন করে বয়সভিত্তিক দল গঠন।

৪)  অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য বিদেশি কোচ এবং বিশ্বকাপে আগে ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন। ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তাদের খেলার ব্যবস্থা। সেই ধারাবাহিকতায় যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।

৫) জাতীয় দলের খেলোয়াড় সংকট দূর করা। এখন এক পজিশনে একাধিক খেলোয়াড়।

৬) মেয়েদের এশিয়া কাপ জয়, ছেলেদের ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়, যুবাদের বিশ্বকাপ জয়।

যেসব ব্যর্থতা মেনে নিয়েছে বিসিবি

১) কোভিডের কারণে বর্তমান অনূর্ধ-১৯ দল নিয়ে যেভাবে কাজ করার কথা ছিল কিছুই করতে পারেনি।

২) যুব বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। অথচ তাদের নিয়ে বিরাট পরিকল্পনা ছিল।

৩) আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতা। বোর্ড যেভাবে ভেবেছে সেভাবে হচ্ছে না। আরও বৃহৎ পরিসরে বড় পরিকল্পনা নিয়ে করতে হবে।

৪) মেয়েদের জন্য বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও কোভিডের কারণে কোচ পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থের ঝনঝনানি

আর্থিকভাবে দেশের ক্রীড়া সংস্থাগুলোর মধ্যে এগিয়ে বিসিবি। বোর্ড সভাপতির দাবি, অনেক বড় দেশগুলির তুলনায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। করোনাকালে অনেক বড় দেশ আইসিসির কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছে। সেখানে বিসিবি দেশের সবগুলো সংস্থাকে আর্থিক অনুদান দিয়েছে। দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়ার এটিও একটি বড় চিত্র বলে মনে করছেন নাজমুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে আমরা কোনো সমস্যায় পড়িনি। এটা বলতে পারব। এটার পেছনের কারণও আছে। অনেক বড় বড় দেশের ক্রিকেট বোর্ড পেনডামিকের সময় আর্থিক ঝামেলায় পড়েছিল। ওরা আইসিসির কাছে লোন চাচ্ছে। পেয়েছেও। আমরা কিন্তু এমন কিছু করিনি। আমরা উল্টো সকল খরচ বাদ দেওয়ার পরও, শুধু ক্রিকেট না, ক্রিকেটারদের সাহায্য করার পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা, খেলোয়াড়দের সাহায্য করেছি।’ বোর্ড প্রধান আরো বলেন, ‘২০১২ থেকে ২০১৮, এই ছয় বছরে ৩৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আমরা বোর্ড পেয়েছি স্পন্সরশিপ এবং রাইটস থেকে। সেটা শেষ তিন বছরে ২৯ মিলিয়ন পেয়ে গেছি। কোভিড পরিস্থিতির পরও আমরা এটা করতে পেরেছি। এটা প্রমাণ করে যে, স্পন্সর এবং রাইটস হোল্ডারদের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ওপর আস্থা আছে। যা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।’