খেলাধুলা

উড়ছেন রোনালদো, ডানাকাটা মেসি

ফুটবলে যতদিন লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকবেন, তুলনা করার চল থাকবে ততদিন পর্যন্ত। তা যতই তারা ভিন্ন লিগে খেলুক না কেন! সময়ের সেরা দুই ফুটবলার ত্রিশ পেরিয়ে এখনও মাঠে। এই মৌসুম নতুন ঠিকানায় দুজন, পারফরম্যান্সে একেবারেই আলাদা। একজন উড়ছেন, আরেকজন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

বিশ্ব ফুটবলে ছড়ি ঘুরিয়ে রোনালদো ফিরেছেন তার পুরোনো ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে, আর মেসি ‘সেকেন্ড হোম’ বার্সেলোনা ছেড়ে নতুন পরিবেশ, নতুন ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে। দুজনেই তিনটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছেন নিজ ক্লাবের হয়ে। একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও তিনটি প্রিমিয়ার লিগ জিতে ২০০৯ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে যেখানে শেষ করেছিলেন রোনালদো, সেখান থেকেই শুরু করেছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিশ্ব রেকর্ডধারী গোলদাতা তিন ম্যাচে করেছেন চার গোল। ঘরের মাঠে নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৪-১ এ জয়ে করেছেন জোড়া গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগেও গোলের দেখা পেয়েছেন, কিন্তু সুইশ ক্লাব ইয়াং বয়েসের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে তার দল। রেড ডেভিলদের হয়ে প্রতিপক্ষের মাঠে অভিষেকেও জাল কাঁপান রোনালদো। ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের মাঠে পিছিয়ে পড়ার পর তার সমতাসূচক গোল, পরে জেসি লিনগার্ডের গোলে জয় নিশ্চিত করে ম্যানইউ।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো যখন চার গোল করেছেন, সমান ম্যাচ খেলে তখন মেসি একবারও উদযাপন করতে পারেননি গোল। রেইমসের বিপক্ষে তার অভিষেক হয় বদলি মাঠে নেমে, খেলেন ২৪ মিনিট। চ্যাম্পিয়নস লিগে ক্লাব ব্রুগের বিপক্ষে প্রথমবার একাদশে জায়গা করে নেন, আক্রমণভাগে সঙ্গী ছিলেন নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। শক্তিশালী এই ত্রিশূলে ছিল না ধার। একবার গোলপোস্ট কাঁপালেও আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড দলকে এনে দিতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত জয়, ফল গোলশূন্য ড্র। অবশ্য ওই ম্যাচে তাকে সাহায্য করতে সতীর্থদের ইচ্ছার অভাব ছিল লক্ষ করার মতো। একবার বল পায়ে নিয়ে সতীর্থদের পাস দেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন, কিন্তু কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

যাই হোক, দুই ম্যাচের ব্যর্থতা কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি পার্ক দে প্রিন্সেসে। ঘরের মাঠে দর্শকরা তার গোল দেখতেই এসেছিল। কিন্তু হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে তাদের। প্রথমার্ধে বাঁ পায়ের জাদুকরী ফ্রি কিক পোস্টে আঘাত না করলে পিএসজির জয়ের গল্পটা হতো আরও আকর্ষণীয়। ২-১ গোলে লিওঁকে হারানোর ম্যাচে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ৩৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি। ৭৬তম মিনিটে আশরাফ হাকিমিকে তার বদলি করে নামানো হয়, যখন স্কোর ১-১। মেসি এতটাই বিরক্ত ছিলেন যে বেঞ্চে যাওয়ার সময় বিভ্রান্তিকর অভিব্যক্তি নিয়ে কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনোকে কিছু বলতে দেখা যায়। এমনকি আর্জেন্টাইন কোচ হাত মেলাতে গেলেও প্রত্যাখ্যান করেন ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার। পচেত্তিনো পরে বলেন, ‘আমরা মেসিকে উঠিয়ে নিয়ে সম্ভাব্য চোট পাওয়া থেকে রক্ষা করতে চেয়েছি। সামনে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে, আমরা তাকে রক্ষা করতে চেয়েছি।’

বোঝাই যাচ্ছে মধ্য ত্রিশে এসে মেসিকে অন্য আট-দশটা খেলোয়াড়দের মতো করেই দেখা হচ্ছে। এমন আচরণ করা হয়েছে রোনালদোর সঙ্গেও। ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে রোনালদোকেও মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন উলা গুনার সুলশার। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডও বিরক্ত ছিলেন। তবে বেঞ্চে বসে থাকেননি, সুলশারের সঙ্গে তাকেও নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে ডাগআউটের কাছ থেকে। অবশ্য রোনালদোর বদলি নামা লিনগার্ডেই সর্বনাশ হয়েছিল সেদিন। ব্যাকপাস থেকে প্রতিপক্ষকে গোল উপহার দেন তিনি, যা হারের তিক্ত স্বাদ দেয় ইউনাইটেডকে।

একদিকে যখন রোনালদো আর ম্যানইউর রসায়নের ফল যাচ্ছে তাদের পক্ষে, তখন পিএসজি লিগে শতভাগ সাফল্য ধরে রাখলেও মেসি নতুন ঘরে কতটা স্বস্তিতে সেই প্রশ্ন উঠছে বারবার। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ভক্তরা অধীর হয়ে আছেন কবে স্বরূপে দেখবেন তাকে। মেসি কি তা অনুভব করতে পারছেন? রোনালদোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি জমিয়ে তুলতে পারবেন তিনি? হয়তো উত্তর মিলবে শিগগিরই।