খেলাধুলা

‘বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে চাই’

‘এতগুলো প্রশ্ন কেউ পাঠায়?’- হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নের লম্বা তালিকা দেখে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সরল অভিব্যক্তি। দুয়ারে কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, দেশের স্বপ্নপূরণের মিশনে যে মশাল মাহমুদউল্লাহর হাতে। প্রশ্ন তো একটু বেশি হবেই।

বছর সাতেক আগের ঘটনা। ফর্ম না থাকায় এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ফিরে পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে জোড়া সেঞ্চুরিতে ভাস্বর। ২০১৯ সালে সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব পান। মেধা ও সামর্থ্যের সবকুটু দিয়ে সেই দায়িত্ব স্থায়ী করেছেন। এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডও গড়েছেন। টি-টোয়েন্টি র‌্যাংঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন ছয়ে।

মরুর বুকে অধিনায়কের বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনা, তার ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন, অধিনায়কত্বসহ নানা বিষয়ে আদ্যোপান্ত তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানার চেষ্টা করেছেন রাইজিংবিডির ক্রীড়া প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম রিয়াদ।

বিশ্বকাপের আগে লম্বা একটি ছুটি পেলেন। এই ছুটিটা কতটা দরকার ছিল?

মাহমুদউল্লাহ: আমাদের নিজেদের এবং পরিবারের জন্য ছুটিটা দরকার ছিল। আশা করি সবাই পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছে। ছুটিটা আমরা ভালোমতো কাটিয়ে আমরা আবার মাঠে ফিরব।

আপনার নেতৃত্বে টানা তিনটি সিরিজ জয় (জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড)। অধিনায়ক তো বটেই, ক্রিকেটার হিসেবেও তৃপ্তিদায়ক কি না?

মাহমুদউল্লাহ: তিনটি সিরিজ জিতেছি, এটার পুরো কৃতিত্বটাই পুরো দলের সবার, টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যেক সদস্যের। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। অবশ্যই কিছু কিছু চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। ওই সময়গুলো আমরা পার করেছি এবং আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, আশা করছি জয়ের আত্মবিশ্বাস আমাদের বিশ্বকাপে কাজে আসবে।

অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার ম্যাচ জয়, সিরিজ জয়। ক্যারিয়ারে বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে?

মাহমুদউল্লাহ: এটা আমাদের দলের জন্যই বিশেষ সিরিজ জয় হয়ে থাকবে কারণ এর আগে আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোনো সিরিজ জিতিনি। আমরা অস্ট্রেলিয়াকে ভালোভাবেই হারিয়েছি এবং নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গেও এর আগে আমরা কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে পারিনি। দুটি সিরিজ আমাদের দলের জন্য যতটুকু স্পেশাল, আমার জন্যও ততটুকু স্পেশাল।

২০১৯ সালে আপনি যখন নেতৃত্ব পান, তখন কি ভেবেছিলেন একদিন বিশ্বকাপের আসরে অধিনায়কত্ব করবেন?

মাহমুদউল্লাহ: না। যখন প্রথম অধিনায়কত্ব পেয়েছিলাম তখন এত লম্বা সময়ের কথা আমি কিছুই ভাবিনি। আমি শুধুমাত্র আমার দায়িত্বটা পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটাই এবং প্রতিটি দায়িত্বই অনেক সম্মানের, দেশের জন্য যখন আপনি প্রতিনিধিত্ব করবেন, প্রতিটি ম্যাচ যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন; এটা সব সময়ই স্পেশাল।

একটু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের সামর্থ্যের সবকুটু উজাড় করে দলকে সঠিক পথে নিয়ে আজ পূর্ণাকালীন অধিনায়ক। এ যাত্রাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মাহমুদউল্লাহ: দলের এখন যে অবস্থা আছে সেটার পেছনে সবারই অপরিহার্য অবদান আছে। সবচেয়ে বড় কথা যে টিম ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন তাদের সবারই অবদান আছে, খেলোয়াড়দের মনোভাব বলেন বা মন-মানসিকতা সবকিছু মিলে দলের আজকের যে চিত্রটা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটাতে সবারই অবদান আছে এবং অধিনায়ক ও নেতা হিসেবে আমার তরফ থেকে মাঠে, মাঠের বাইরে আমার ভূমিকা যতটুকু থাকা উচিত আমি চেষ্টা করি যে যেন পুরোটাই সততার সঙ্গে দিতে পারি এবং ওভাবে টিমকে নেতৃত্ব দিতে পারি।

এই সময়ে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ কতটা পরিবর্তন হয়েছে। নতুন যারা এসেছে তাদের প্রতি আপনার বার্তা কী ছিল এবং মুশফিক, সাকিব ও তামিমকে কতটা পাশে পেয়েছিলেন?

মাহমুদউল্লাহ: ড্রেসিংরুমের সংস্কৃতি আমাদের অনেক ইতিবাচক, তো এটা দিনে দিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, অনেক ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা যে খেলোয়াড়দের মন-মানসিকতা ইতিবাচকভাবে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের প্রতিটি প্রস্ততি, সব কিছুতেই নিজেরা এখন দায়িত্ববান, তো এটা খুব ভালো একটা সংকেত একটি ভালো টিম হওয়ার জন্য। আপনি যেটা বললেন যে সাকিব, মুশফিক, তামিম তারা সবাই অনেক অভিজ্ঞ এবং তারা খুব সহায়ক। সব সময়ই টিমের প্রতি অনেক নিবেদনশীল। এছাড়াও অন্য যারা আছে- সৌম্য, লিটন, মোস্তাফিজ,  তাসকিন, রুবেল তারাও সিনিয়র। তারা ভালোর জন্যই খেলছে। আমরা সবাই একসঙ্গে এই মুহূর্তে ভালো অবস্থায় আছি।

আপনার ক্যারিয়ারে উত্থান পতন অনেক। দল থেকে হুটহাট বাদ পড়েন। আবার ফিরে আসেন। একটু পেছনে ফিরে তাকালে কি অবাক হন, নিজেকে কতটা পরিণত করেছেন যে আপনি এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন?

মাহমুদউল্লাহ: দেখুন ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন থাকবেই, সব প্লেয়ারেরই ক্যারিয়ারে কম বেশি উত্থান-পতন থাকে, হয়ত আমার ক্ষেত্রে একটু বেশি। কিন্তু আমি সব সময় নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য বা নিজের পারফরম্যান্সটা টিমের জন্য দেওয়ার জন্য যতটুক কষ্ট করা দরকার আমি আসলে সব সময় সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করি এবংআমি এইভাবেই চিন্তা করি যে আপনি যদি সৎভাবে কষ্ট করেন, আপনি ওটার ফল পাবেন। তো এর বাইরে ওরকম আমি নেতিবাচক জিনিস নিয়ে খুব একটা চিন্তা করি না, আমি ইতিবাচকভাবে সব কিছু দেখার চেষ্টা করি এবং খুব সাধারণভাবে চিন্তা ভাবনা করি।

এ সময় একজন মানুষের কথা কি বলা যাবে যিনি পিঠ চাপড়ে আপনাকে প্রতিকূলক স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার সাহস জুগিয়েছে?

মাহমুদউল্লাহ: হ্যাঁ, একজন মানুষের কথা আমি অবশ্যই বলব সেটা হচ্ছে মাশরাফি ভাই, যিনি আমার দুঃসময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। অধিনায়ক, সিনিয়র ক্রিকেটার এবং আমার ভাই হিসেবে (বিং ক্যাপ্টেন, বিং সিনিয়র প্লেয়ার বিং মাই ব্রাদার) সব সময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন এবং আমাকে মানসিকভাবে অনেক সহযোগিতা করেছেন তো এটার জন্য উনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।

বিশ্বকাপে দলের সাফল্যের মন্ত্র কী হতে পারে?

মাহমুদউল্লাহ: বিশ্বকাপে সাফল্যের মন্ত্র আমি মনে করি ভয় ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। সব কিছু ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে এবং অবশ্যই ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।

সাকিব-মোস্তাফিজ আইপিএল খেলছেন আরব আমিরাতে। তাদের প্রতি বিশেষ আশা থাকবে কি না!

মাহমুদউল্লাহ: সাকিব-মোস্তাফিজ আইপিএলে গিয়েছে, আশা করি ইনশাআল্লাহ তারা ভালো করবে এবং ওখানে ওই কন্ডিশনে ভালো করলে ওদের আত্মবিশ্বাসটা আমাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করবে এবং ওদের ওই অভিজ্ঞতা যখন আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে আমি আশা করি সেগুলো কাজে লাগবে।

বিশ্বকাপ দলের ব্যাটিং-বোলিং বিভাগের মধ্যে কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

মাহমুদউল্লাহ: আমার মতে এই মুহূর্তে আমাদের বোলিং বিভাগ খুবই ভালো কাজ করছে। গত যে কয়েকটা সিরিজে আমরা জিতলাম সেখানে বোলারদের বেশ অনেক বড় ভূমিকা ছিল কিন্তু আমি আমাদের ব্যাটসম্যানদের এবং ব্যাটিং ইউনিটের ওপর আস্থা রাখি। ইনশাআল্লাহ বিশ্বকাপেও আমরা আমাদের ব্যাটিংয়ের সামর্থ্যের জানান দিতে পারব এবং ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা ভালো কিছু করতে পারব।

এই দলে ৮ জন আছেন প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন। তাদের কাছ থেকে আপনার কী চাওয়া? বিশেষ কোনো বার্তা আছে?

মাহমুদউল্লাহ: এই দলে আটজন আছেন যারা প্রথমে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে, তো তাদের প্রতি প্রত্যাশাটা খুব বেশি, যদি আমি বেশি প্রত্যাশা করি তো আমার কাছে এটা ভুল হবে। কিন্তু প্রত্যাশা তো সব সময়ই থাকবে নিজেদেরও থাকবে, দলেরও থাকবে, দেশবাসীর থাকবে। কিন্তু আমি মনে করি স্বাধীনভাবে যেন ওরা খেলে ইনশাআল্লাহ তাতে ওরা সাফল্য এনে দিবে।

নিজের কাছে এই বিশ্বকাপে কী চাওয়া থাকবে?

মাহমুদউল্লাহ: নিজের কাছে আমি শুধু এতটুকই চাই যে, অধিনায়ক হিসেবে, সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আমরা এই বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করতে চাই। যেহেতু বিগত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগুলোতে আমাদের ওরকম সুখ স্মৃতি নেই। তো দল হিসেবে আমরা এ মুহূর্তে আল্লাহ রহমতে একটা ভালো ছন্দে আছি, আমরা বিজয়ের বেশে আছি, তো অবশ্যই আমরা চাইব যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমরা একটা ভালো ফলাফল করতে পারি। সেটা বিশেষ কিছু হতে পারে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ জিততে চাই, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।