খেলাধুলা

আনপ্রেডিক্টেবল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কেমন? এখানে শক্তির বিচার খাটে না, ফেভারিট তকমাও যায় না। দিনটা যার, ফল যায় তার পক্ষে। পুরোপুরি আনপ্রেডিক্টেবল, মানে পূর্বানুমান করা সবচেয়ে দুরূহ কাজ। আর এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপের আসর শুরুই হচ্ছে অপ্রত্যাশিত কিছু বিষয় নিয়ে। প্রথমবার পাঁচ বছর পর হচ্ছে প্রতিযোগিতা। আর খেলা হচ্ছে দুটি দেশে। বাকি সময়ে কী হতে পারে, কত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে পারে তাও অনুমানের অযোগ্য।

প্রতিটি বিশ্বকাপের আসরেই ছিল অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে আনপ্রেডিক্টেবল বললে ভুল হবে না। ২০০৭ সালে দুই দলের প্রথম খেলায় জিম্বাবুয়ে হারাল অস্ট্রেলিয়াকে। যুবরাজ সিং এক ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকালেন তরুণ স্টুয়ার্ট ব্রডের বিরুদ্ধে। ফাইনালের শিরোপা নির্ধারণী শেষ ওভারে যোগীন্দর শর্মা বল করলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ বলে নিশ্চিত হয় ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা।

২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশকে হারিয়ে পৌঁছায় সুপার এইটে। কিন্তু সবচেয়ে চমকানো ফলের দেখা মিলেছিল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে, যখন নেদারল্যান্ডস, হোম অব ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারায়। তারপর ইংলিশরাই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ রানে হারায় তারা।

তরুণ লেগি স্টিভ স্মিথ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের যৌথ উইকেটশিকারি হন এবং মাইক হাসি একা হাতে অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে জেতান। পাকিস্তানকে হারিয়ে অজিরা ওঠে ফাইনালে। তবে ইংল্যান্ডের কাছে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাত্তা পাননি।

দুই বছর পর শেন ওয়াটসন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও দ্বিতীয় শীর্ষ উইকেটশিকারি হয়ে আসর শেষ করেন। কিন্তু ট্রফি যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরে, যারা সেমিফাইনালে বিদায় করেছিল অস্ট্রেলিয়াকে। এই ক্যারিবিয়ানরা ফাইনাল জিতেছিল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে। ১৬তম ওভারে তাদের স্কোর ছিল ৮৭/৫। সেখান থেকে কম স্কোর করেও শ্রীলঙ্কাকে হারায় উইন্ডিজরা।

২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডস আবারো ইংল্যান্ডকে চমকে দেয় এবং সহযোগী দেশটির টম কুপার ও আহসান মালিক যথাক্রমে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যাটসম্যান ও উইকেটশিকারির মর্যাদা পান। ফাইনালে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে দেয় শ্রীলঙ্কা। ২০০৭ ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০০৯ ও ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রানার্সআপরা জেতে শিরোপা।

আর সবশেষ মানে ২০১৬ সালের আসরে আফগানিস্তান হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এই হোঁচট সামলে নিয়ে ঠিকই ক্যারিবিয়ানরা আদায় করে নেয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্ব। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট নামের একজন তরুণ অলরাউন্ডার, যার গড় ৮.৩৩ রান, ফাইনালে শেষ ওভারে টানা চারটি ছক্কা মেরে যেন বলেন, ‘আমাকে তোমরা সবসময় মনে রাখবে।’

এক কথায় এই টুর্নামেন্টে কারো হৃদয় ভাঙে, লিজেন্ড তৈরি হয়। আনপ্রেডিক্টেবল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার ছাপ রাখতে যাচ্ছে কারা, তা সময়ই বলে দিবে।