খেলাধুলা

শেষের ঝড়ে পাকিস্তানের আরেকটি দুরন্ত জয়

বলা হয়, একটি দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে অনেক অসাধ্য সাধন হয়। ডেভন কনওয়ে সীমানায় মোহাম্মদ হাফিজের ক্যাচটা নিয়ে তেমন কিছুই করেছিলেন। 

বাজপাখি কনওয়ে দৌড়ে, ঝাঁপিয়ে চোখের পলকে প্রায় অসম্ভব এক ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়েছিলেন হাফিজকে। শারজায় নিউ জিল্যান্ডের দেওয়া ১৩৫ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ওই সময়ে হাফিজকে হারিয়ে হোঁচটই খেয়েছিল। এর আগে পরে আরও চার উইকেট হারায় তারা। এক পর্যায়ে পাকিস্তানের রান ৫ উইকেটে ৮৭। 

জয়ের সমীকরণ সহজ ছিল না, ৩১ বলে ৪৮ রান। কিন্তু অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ও আসিফ আলী কাজটা চোখের নিমিষেই করে ফেলেন। ৮ বল আগে ৫ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা।

১২ বলে ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন আসিফ। ২২৫ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসটিতে ছিল ১ চার ও ৩ ছক্কার মার। শোয়েব ২০ বলে করেছেন ২৭ রান। তার ইনিংসেও ছিল ২ চার ও ১ ছক্কা। মাত্র ২৩ বলে ৪৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান। ভারতকে হারানোর পর নিউ জিল্যান্ডকে বধ করে পাকিস্তান এখন উড়ছে।  

বোলাররা নিউ জিল্যান্ডকে এগিয়ে রেখেছিলেন। বাবর আজম ও রিজওয়ানের ২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ফখর জামান (১১), হাফিজকে (১১) বড় কিছু করতে দেয়নি। এরপর রিজওয়ান (৩৩) ও ইমাদ ওয়াসিমও (১১) সাজঘরে ফেরেন।  

কিন্তু আসিফ ক্রিজে আসার পর সব ওলটপালট। প্রথম বল কাট করে পয়েন্ট দিয়ে চার। ১৭তম ওভারে সাউদির দুই স্লোয়ারে দুই ছক্কা তার ব্যাটে। পরের ওভারে শোয়েব স্পিনার স্ট্যানারকে এক চার ও এক ছক্কা উড়ান। তাতে কাজটা সহজ হয়ে যায় পাকিস্তানের। ১৯তম ওভারে বোল্টকে লং অন দিয়ে ছক্কা উড়ালে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। 

ব্যাটসম্যানদের দাপটের আগে পাকিস্তানের বোলাররাও দ্যুতি ছড়িয়েছে। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নিউ জিল্যান্ড ৮ উইকেটে ১৩৪ রান তুলে। অথচ প্রথম পাঁচ ওভারে উড়েছিল কিউইরা। ৭.২০ রান রেটে ৩৬ রান তুলে নেয়। 

কিন্তু পরের পাঁচ ওভারে আরেক চিত্র। ৩ উইকেট তুলে নিয়ে সমানে সমান লড়াই করে পাকিস্তান। ১০ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৬০। ষষ্ঠ ওভারে পেসার হারিস রউফ বোলিংয়ে এসে বোল্ড করেন মার্টিন গাপটিলকে। ২০ বলে ৩ চারে ১৭ রান করেন গাপটিল।

এরপর নবম ওভারে বিপদজনক ওপেনার ডার্ল মিচেলকে আউট করেন ইমাদ ওয়াসিম। ওভারের প্রথম বল লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর পর দ্বিতীয় বলে আউট হন ২০ বলে ২৭ রান করা মিচেল। ১টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি। টানা বোলিং করা ইমাদ ৪ ওভারে ২৪ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট।

দশম ওভারে বোলিংয়ে আসেন হাফিজ। প্রথম বলেই উইকেট। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জিমি নিশাম টার্নের বিপরীতে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ফখর জামানের হাতে। শুরুর পাঁচ ওভারে কোনো উইকেট না হারানো নিউ জিল্যান্ড পরের পাঁচ ওভারে ৩ উইকেট হারায়। 

এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৭৪ রান তোলে। নিউ জিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসমানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। কেন উইলিয়ামসন ২৬ বলে ২৫ রান করে ফেরেন রান আউট হয়ে। ডেভন কনওয়ে ২৪ বলে করেন ২৭ রান। এছাড়া গ্লেন ফিলিপস ১৫ বলে করেন ১৩ রান। ইনিংসে হাতেগোনা কয়েকটি বাউন্ডারি হয়েছে। চার হয়েছে মাত্র ১২টি, ছক্কা ৩টি। 

পাকিস্তানের বোলাররা দুটি নো বল দিলেও কোনো ওয়াইড দেননি। অতিরিক্ত রান এসেছে ৮টি। নিউ জিল্যান্ড ইনিংসে ডট বল ছিল ৫৩টি। ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে হারিস রউফ পাকিস্তানের সেরা। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তিনিই পেয়েছেন। এছাড়া ১টি করে উইকেট পেয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি, ইমাদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ হাফিজ।

টানা দুই জয়ে পাকিস্তান এখন বিশ্বকাপে হট ফেবারিট। সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত তাদের। ভারত ও নিউ জিল্যান্ডকে হারানোর পর তাদের সামনে আফগানিস্তান, নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ড। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল খেলতে না পারলে অবাকই হবেন সমর্থকরা।