খেলাধুলা

এই দিনটি সম্মান জানানোর বা স্মরণ করার নয়!

এক বছর কেটে গেল ডিয়েগো ম্যারাডোনা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গত বছর ২৫ নভেম্বর কোটি কোটি ভক্তদের কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান ফুটবল ঈশ্বর। তিনি সশরীরে না থাকলেও হৃদয়ের মণিকোঠায় আছেন। মৃত্যুর পরও কিন্তু ম্যারাডোনাকে নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। তার মৃত্যুর কারণ জানতে চলছে তদন্ত, তার প্রধান চিকিৎসকসহ একাধিক ব্যক্তি নজরদারিতে। অতীতে বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও সমালোচনা থেমে নেই। কিন্তু মাঠের বাইরের বহু বিতর্ক নিয়ে পড়ে নেই ভক্ত-সমর্থকরা। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছে কোটি কোটি ভক্ত।

গত বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক চিরনিদ্রায় শায়িত থাকলেও তাকে হৃদয়ে ধারণ করছেন ভক্ত-সমর্থকরা। তিনি ‘পেলুসা’ নামে খ্যাত, স্প্যানিশ শব্দটির মানে দাঁড়ায় ‘ঈশ্বর’। বুয়েন্স আয়ার্সের উপশহরে জন্ম নেওয়া ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনায় অনেকের কাছে আইকন, দেশের বাইরেও। বিশেষ করে ইতালির নাপোলি শহরে তিনি বীর। যে শহরের আন্ডারডগ ক্লাবকে এনে দিয়েছেন গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।

নিজ দেশ তো বটেই, ইতালির এই শহরেও তার ভাস্কর্য, দেয়ালচিত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে। অনেকে তার ছবি ট্যাটু করে রেখেছে, কেউ কেউ তার ছেলে বা মেয়েদের নামও রাখছেন তার নামে। আর্জেন্টিনার ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষক এজিকুয়েল রসি বলেছেন, ‘ডিয়েগো আমাদের অনেক কিছু অনুভব করায়। এটি চমৎকার। এই বাচ্চার যখন শুরু হয়েছিল তখন কিছুই ছিল না, হঠাৎ করে সব পেয়ে গেল। তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, কল্পনা করতে শিখিয়েছেন যে আমরাও দারুণ কিছু করতে পারি।’

ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত জীবন ছিল বিতর্কে ভরা। মাত্রাতিরিক্ত মাদক ও অ্যালকোহলে ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া একাধিক বিয়ে, তাদের ঘরে সন্তান এবং শক্তিশালী রাজনীতিবিদ ভেনেজুয়েলার হুগো চাভেজ ও কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ছিলেন আলোচনায়।

এই তো কদিন আগে এক কিউবান নারী অভিযোগ করল, দুই দশক আগে তাকে জোর করে ধর্ষণ করেছিলেন ম্যারাডোনা। যখন ফুটবল গ্রেটের বয়স ৪০ আর ওই নারীর ১৬। তার শৈশব কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও ম্যারাডোনার প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। ৬১ বছর বয়সী শুটিং ইনস্ট্রাক্টর আলেহান্দ্রো স্টারলি বলেছেন, ‘তিনি তার জীবনের নানা বাঁকে কী করেছিলেন সেটা দিয়ে তাকে আমি বিচার করতে পারি না। ঠিক এই কারণে আমি খেলোয়াড়দের মানুষ থেকে আলাদা চোখে দেখার চেষ্টা করি।’

ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলি, ১৯৮৭ ও ১৯৯০ সালে ম্যারাডোনায় ভর করে জিতেছিল সিরি আ শিরোপা। তারা এই শোকাবহ দিনটি উদযাপন করবে নভেম্বরের তিন ম্যাচ বিশেষ জার্সিতে খেলে, তরুণ ম্যারাডোনার ছবি সম্বলিত সাদা-কালো জার্সি পরবেন খেলোয়াড়রা। তার অন্য দুটি ক্লাব বার্সেলোনা ও বোকা জুনিয়র্স ম্যারাডোনা কাপ খেলবে।

কিংবদন্তির প্রস্থানের এক বছর অনেকেই স্মরণ করছে, করবে নানা আয়োজনে। কিন্তু তার মেয়ে ডালমা ম্যারাডোনার অন্য মত, ‘ওই দিনটি (ম্যারাডোনার মৃত্যুর দিন) ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি মনে করি এই দিনটি সম্মান করার কিংবা তাকে স্মরণ করার নয়, যেন কম উদযাপন করা হয়।’