খেলাধুলা

শেকল ভাঙা সাহসী তাইজুলের অদম্য গল্প

লাল বলের ক্রিকেট মানেই তাইজুল ইসলামের উপস্থিতি। আর সাদা বলে? তাইজুলকে নিয়ে ভাবেন-ই না কেউ! একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকলে নির্বাচকদের হৃদয়ে খানিকটা উঁকি দেন তাইজুল। তখন সুযোগ হয় এক বা দুই ম্যাচের জন্য। এরপর আবার আউট অব টিম!

রঙিন পোশাকে এমন ‘অবজ্ঞা’ তাইজুলকে খুব ভাবাচ্ছিল। এজন্য তৎকালিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির সঙ্গে কাজ করে নিজের বোলিং অ্যাকশনে পরিবর্তন আনেন। পরিবর্তন কি রকম? যেমন, অ্যাকশন একইরকম রেখে পেস ভেরিয়েশন করার জন্য বডি পজিশন কেমন হবে, বডির অ্যাঙ্গেল, হাত কোথায় থাকবে, মাথার পজিশন, বলের গ্রিপ, বল রিলিজ করার পজিশন, এসব নিয়েই কাজ হয়েছে।

কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়। উন্নতি তো হয়নি বরং সাদা পোশাকেও আড়াল থাকতে হয় কয়েক ম্যাচে। এজন্য স্থানীয় কোচ ও শৈশব গুরুর সোহেল ইসলামের সঙ্গে কাজ করে আবার পুরোনো অ্যাকশনে ফিরে যান।

নতুন কিছু শেখার তাড়ণা, শেকল ভেঙে এগিয়ে যাওয়া এবং উইকেট ক্ষুধায় মগ্ন তাইজুলের সাহসিকতায় মুগ্ধ জাতীয় দলের অন্তবর্তীকালিন কোচ সোহেল ইসলাম, ‘তার বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল কিন্তু আমি মনে করি সে অত্যন্ত সাহসী যে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমি সব সময় এমন কাউকেই পছন্দ করি যারা সাহসী এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে। সুযোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাড়ণা দেখাবে।’

‘পুরোনো বোলিং অ্যাকশন সব সময়ই তার কাছে ছিল। সে চেয়েছিল একটু দেখতে, নতুন কোনো অ্যাকশনে কাজ করলে তার নতুন কোনো সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হবে। যদিও কোনো কাজে আসেনি তবে তার কোনো ক্ষতি নেই। এখন সে দারুণ ছন্দে আছে এবং তার সেরা দিক হচ্ছে সে ধৈর্য্যশীল। আমরা কয়েক মাস ধরে ফ্ল্যাট উইকেটে কাজ করছি যেখানে বৈচিত্র্য এবং ফ্লাইট গুরুত্বপূর্ণ। সে তার পরিকল্পনা কাজে লাগাচ্ছে।’– যোগ করেন তিনি।

আর নিজের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে তাইজুলের ভাষ্য, ‘আমি আমার পুরনো অ্যাকশনেই সফল। আমি আসলে চেষ্টা করছিলাম যেটা (নতুন কিছু) করা যায় কিনা। কিন্তু অ্যাকশন যে পরিবর্তন করা যাবে না, করলে যে অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে এমনটা হয় নাই। আমি অনেক বড় সাহায্য পেয়েছি সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে। আমি যখন পুরনো অ্যাকশনে ফিরতে চেয়েছি সোহেল ভাইয়ের কারণে সেটা তাড়াতাড়ি হয়েছে। উনি আমার অ্যাকশন সম্পর্কে ভালো জানেন। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেট নিয়ে তাইজুল ইসলাম নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জানান দিয়েছেন। এই ম্যাচের আগে সবশেষ টেস্ট খেলেছেন ছয় মাস আগে। শ্রীলঙ্কায় দুই টেস্টে নিয়েছেন ৮ উইকেট। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে তার শিকার ছিল ১২ উইকেট। দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে যে নিবেদন দেখান তা সত্যিই প্রশংসনীয়। নিজেকে সদা প্রস্তুত রাখছেন বলেই এমন ফল আসছে বলে বিশ্বাস করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

‘আমাদের প্রক্রিয়া সবসময় ঠিক থাকতে হয়। আমাদের যত ভালো প্রক্রিয়ায় থাকি তত আমাদের ম্যাচটা সহজ হয়। যখন জাতীয় লিগ খেলি, যেখানেই খেলি না কেন, আমরা ওই প্রক্রিয়া ঠিক রাখার চেষ্টা করি। আমরা অনেক দিন পর পর টেস্ট খেলি, এটা সত্যি কথা। গ্যাপ থাকার কারণে হয়তো একটু মানিয়ে নেওয়া কষ্ট হয়। তবুও আমাদের ছন্দে থাকতে হয়।’– বলছিলেন তাইজুল।

সাকিবের অনুপস্থিতিতে বাঁহাতি স্পিনের কাজটা তার সামলাতে হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে নবমবারের মতো পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়ে তাইজুল তা প্রমাণ করেছেন আরও একবার। সাকিব থাকলে সুবিধা, না থাকলে দায়িত্বটা তারই, ‘আজকে না, অনেকগুলো ম্যাচেই সাকিব ভাই ছাড়া আমি খেলছি। সাকিব ভাই থাকলে ভূমিকা আমার একরকম হয়, সাকিব ভাই না থাকলে আরেকরকম। এটা হওয়াটা স্বাভাবিক। যেহেতু সাকিব ভাই নেই সেহেতু সাকিব ভাইয়ের ভূমিকা আমাদের পালন করতে হয়েছে। রান চেকেরও একটা চাপ থাকে, উইকেট নেওয়ারও একটা চাপ থাকে আর কি। এই ভূমিকা আমার পালন করতে হয়। উইকেটও নিতে হবে রানও চেক দিতে হবে।’