খেলাধুলা

মিরপুরের উইকেট নিয়ে ধুম্রজাল

‘মিরপুরের উইকেট আমি আপনি সবাই জানি বলা কঠিন’-পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিন মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে ঠিক এভাবেই বলেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক। অর্থাৎ মিরপুরের উইকেট কেমন আচরণ করবে তা স্পষ্ট বলতে পারছেন না স্বাগতিক দলের অধিনায়ক নিজেই।

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে আলোচনায় উইকেট। একেতো পাকিস্তান এমন এক প্রতিপক্ষ, যাদের বিপক্ষে মিরপুরের স্বভাবজাত স্পিন উইকেট বানিয়ে ভালো কিছু আশা করা সম্ভব নয়। সেখানে বিপদে পড়তে পারেন মুমিনুলরা নিজেই। তাই সংবাদ সম্মেলনে এসে স্পিন উইকেটের বিপক্ষেই কথা বলেছেন অধিনায়ক।

তিনি বলেন, ‘এটা সবাই জানে, উপ-মহাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভালো খেলে। তাই এখানকার দলগুলোর বিপক্ষে স্পিন উইকেটে না খেলাটাই ভালো। কেবল আমি নই, বিশ্বের সব দলই তাই করবে। তাই আমার মনে হয় ফ্ল্যাট উইকেটে খেলাটাই ভালো হবে।’

প্রথম টেস্টে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং উইকেটে খেলেছিল দুই দল। যেখানে ব্যাটসম্যানরা রান যেমন পেয়েছেন, স্পিনার-পেসাররা উইকেটও পেয়েছেন। তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বিব্রতকর ব্যাটিংয়ে হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে।

চট্টগ্রামে চার ইনিংসে ৩২টি উইকেট পড়েছে। তাতে ১৪ উইকেট পেয়েছেন স্পিনাররা। তার মধ্যে এক ইনিংসেই তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ৭ উইকেট। বাকি ১৮ উইকেট নিয়েছেন পেসাররা। পেস বোলিংয়ে পাকিস্তানই মূলত উইকেট নিয়েছে। ১৮ উইকেটের মধ্যে শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলীরা নিয়েছেন ১৬টি। বাকি দুটি নিয়েছেন বাংলাদেশি পেসার এবাদত হোসেন। পেসার-স্পিনার দুই পক্ষই সুবিধা পেয়েছে।

ব্যাটসম্যানরাও যে খাবি খেয়েছেন তা নয়। এই ম্যাচে সেঞ্চুরি হয়েছে দুটি আর হাফসেঞ্চুরি হয়েছে ৫টি। তার মধ্যে আবিদ আলী ও মুশফিকুর রহিম আউট হয়েছেন নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে। মিরপুরেও এমন উইকেটের প্রত্যাশা করতে পারেন মুমিনুল।

মুমিনুল জানিয়েছেন মিরপুরে যেমন উইকেট হয় তেমন হতে পারে। কিন্তু স্বভাবত মিরপুরের উইকেট বলতে বোঝা যায় সেটি ‘স্লো উইকেট।’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে যে উইকেটে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ, মিরপুরের উইকেট বলতে তেমনটিই বোঝায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে কি বাংলাদেশ এমন স্লো উইকেটে খেলবে?

অবশ্য এমন প্রশ্নে মুমিনুল না-বোধক উত্তরই দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মিরপুরের উইকেট আমি আপনি সবাই জানি বলা কঠিন, আমরা কাছে মনে হয় না অস্ট্রেলিয়ার (অস্ট্রেলিয়া সিরিজের উইকেট) মতো হবে।’

শের-ই বাংলায় বাংলাদেশ মোট ২১টি ম্যাচ খেলেছে, তার মধ্যে ৬টিতে জয় পেয়েছে, ৩টিতে ড্র করেছে আর ১২টিতে হেরেছে। এই মাঠে বোলারদের মধ্যে রাজত্ব করেছে স্পিনাররাই। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকার তিনজনই বাংলাদেশি স্পিনার। সর্বোচ্চ ৬৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ৫ উইকেট নিয়েছেন ৭ বার আর ১০ উইকেট নিয়েছেন ১ বার। আর ৫২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে তাইজুল ইসলাম, ৪১ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে মেহেদি হাসান মিরাজ।

অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি, পরিসংখ্যান বলছে মিরপুরে পেসাররা একেবারে অসহায়। ২১টি টেস্ট মিলিয়ে এখানে কোনো পেসার ২০ উইকেটের দেখাই পাননি। সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট পেয়েছেন ভারতীয় পেসার জহির খান। আর ১৬ উইকেট নিয়ে পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন শাহাদাত হোসেন। এই দুটি তথ্যেই বোঝা যাচ্ছে মিরপুরের উইকেট স্পিনারদের জন্য স্বর্গরাজ্য।

সবশেষ টেস্টেও এখানে রাজত্ব করেছেন স্পিনাররা। বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখানে হেরেছিল বাংলাদেশ। রাকিম কর্নওয়াল একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। ক্যারিবিয়ানদের জন্য স্পিনের ফাঁদ পেতে সেখানে নিজেরাই ডুবেছিল মুমিনুলের দল। হারতে হয়েছিল  ১৭ রানে।

পরিংখ্যান বলছে মিরপুরে রাজত্ব করেছেন স্পিনাররা, কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছেন স্পিন উইকেট হবে না, হবে ফ্ল্যাট উইকেট। যেখানে বোলারদের চেয়ে ব্যাটসম্যানরা বাড়তি সুবিধা পাবেন। আসলে কোন ধরনের উইকেট হবে?

তবে সাদা বলের চেয়ে এখানে লাল বলে ভালো উইকেট হবে জানিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘সাদা বলে কিন্তু মিরপুরের উইকেট এক রকম, দুই পাশ থেকে নতুন বল থাকে তখন হয়তো ভিন্ন কিছু ফেস করতে হয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু লাল বল এক দিক দিয়ে হয়, তো আমার কাছে মনে হয় যে লাল বলে সাদা বলের চেয়ে বেটার উইকেট হবে।’

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই যুগে যে কোনো কন্ডিশনে যে কোনো উইকেটে ভালো খেলার কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কি পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে?

মুমিনুলের মতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও পেশাদারিত্ব রয়েছে। ‘আমার তেমন মনে হয় না (পেশাদারিত্বের অভাব)। অবশ্যই পৌঁছেছে। পেশাদারিত্বের বিষয়টা তো কেবল উইকেট নয়, অন্য সবকিছু মিলেই কিন্তু পেশাদারিত্ব। নিয়মানুবর্তিতার বিষয় আছে, ভালোমতো অনুশীলন করা, নিয়মমাফিক কাজ করা, প্রতিপক্ষের শক্তি এবং দুর্বলতার জায়গা বুঝে অনুশীলন করা, এগুলো সবই কিন্তু পেশাদারিত্বের ভেতরেই থাকে। তাই আমার মনে হয়, আপনি যেমন বলছেন, ওরকম কিছুই নয়। সবাই পেশাদারিত্ব দেখাচ্ছে, কেউ হয়তো সফল হচ্ছে, কেউ হচ্ছে না।’