খেলাধুলা

নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস বাংলাদেশের

স্কোর: বাংলাদেশ ৪০/২, নিউ জিল্যান্ড ১৬৯/১০। 

প্রথম ইনিংস: নিউ জিল্যান্ড ৩২৮/১০, বাংলাদেশ ৪৫৮/১০। লিড: ১৩০ রান

উপমহাদেশের কোনো দলের নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ১০ উইকেটে জয় নেই। ৪০ রানের টার্গেট  নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের সেই সুযোগটি ছিল। সাদমান ইসলাম টিম সাউদির বলে আউট হওয়ায় শুরুতেই সেই সুযোগ হাতছাড়া। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তও জয়ের থেকে ৬ রান আগে সাজঘরের পথ ধরেন। তাতে কি? জয়ের পথ ভোলেনি বাকিরা।

মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম জয়ের সমীকরণ মিলিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ডকে হারালো ৮ উইকেটে। প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডকে সাদা পোশাকে হারালো বাংলাদেশ। ১৬ বারের দেখায় এর আগে বাংলাদেশ টেস্ট ড্র করলেও এবারই প্রথম জয় পেলো। পাশাপাশি নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে যে কোনো ফরম্যাটে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। এর আগে ৩২ ম্যাচে কোনোটিতেই জয় পায়নি বাংলাদেশ। 

টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান রাজা নিউ জিল্যান্ড। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। তাদের মাটিতে তাদেরকে হারিয়ে বিজয়ের পতাকা উড়ানো চাট্টেখানি কথা নয়। মুমিনুল হকের বাংলাদেশ সেই অসাধ্য কাজটাই করেছেন। তাইতো এই জয় বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে অর্জন বলেই বিবেচিত হচ্ছে। 

আগের দিনই জয়ের কাজ সেরে রেখেছিল বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে বুধবার শেষ দিনে মাঠে নামে কিউইরা। ২২ রান যোগ করতেই শেষ তাদের শেষ ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানে পিছিয়ে থাকায় কার্যত তাদের স্কোর ৩৯! ৪০ রানের সহজ লক্ষ্য বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে অনায়াসে। 

জয়ের নায়ক ইবাদত হোসেন। গতকালের ৪ উইকেটের সঙ্গে আজ পেয়েছেন ২ উইকেট। ৬ উইকেট নিয়ে বিধ্বংসী বোলিংয়ে এলোমেলো করেছেন কিউইদের। সঙ্গে উড়িয়েছেন বিজয়ের পতাকা। 

নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশের টার্গেট ৪০ রান

ইবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদের শুরুর ধাক্কা সামলেই উঠতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। তাদের বিরতি দিয়ে মুমিনুল হক বোলিংয়ে এনেছিলেন শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজকে। শরিফুল দারুণ শুরু করলেও এক ওভারের বেশি পেলেন না। কারণ মিরাজ বোলিংয়ে এসে পেয়ে যান নিউ জিল্যান্ডের শেষ উইকেট। ট্রেন্ট বোল্ট তার বল উড়াতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। সীমানায় তাইজুল দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে উল্লাসে ভাসান। 

আগের দিনের ১৭ রানের লিডসহ নিউ জিল্যান্ড জমা করে আরো ২২ রান। ১৬৯ রানে শেষ তাদের দ্বিতীয় ইনিংস। সব মিলিয়ে ৩৯ রানের লিড পায় কিউইরা। বাংলাদেশের টার্গেট ৪০ রান। ইতিহাসের সঙ্গে দূরত্ব মাত্র ৪০ রান!

ইবাদতের পর তাসকিনের জোড়া আঘাত

বাংলাদেশের দুই পেসারের বোলিং তাণ্ডবে এলোমেলো নিউ জিল্যান্ড। ইবাদত দিনের শুরুতে টেইলর ও জেমিনসনকে ফেরানোর পর তাসকিনও জোড়া আঘাত করলেন। ধারাবাহিক বোলিংয়ে তাসকিনও পেলেন সাফল্য। রাচিন রবিন্দ্ররকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করানোর পর টিম সাউদিকে বোল্ড করেন। দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে তাসকিন ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন স্বাগতিকদের।

ইবাদতের ষষ্ঠ উইকেট, শরিফুলের দুর্দান্ত ক্যাচ

রস টেইলরকে ফেরানোর পর ইবাদত নিজের দ্বিতীয় ওভারে পেলেন আরেকটি উইকেট। এবার তার শিকার জেমিনসন। অবশ্য উইকেটের জন্য শরিফুলকে বাহবা দিতে হবে। মিড উইকেটে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন শরিফুল। ৬ উইকেট নিয়ে নতুন এক কীর্তিও গড়েছেন ইবাদত।

শাহাদাত হোসেন, রবিউল ইসলাম ও মানজারুল ইসলাম রানার পর চতুর্থ পেসার হিসেবে টেস্টে ৬ উইকেট পেলেন ইবাদত। আরেকটি উইকেট পেলে ইবাদত সাদা পোশাকে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড নিজের করে নেবেন। 

টেইলরকে ফিরিয়ে ইবাদতের ৫ উইকেট

দিনের দ্বিতীয় ওভারে নিউ জিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় উইকেট ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাধা দূর করলেন ইবাদত হোসেন। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা রস টেইলরকে বোল্ড করলেন ডানহাতি পেসার। দারুণ এক ইনসুইং ডেলিভারীতে টেইলরকে বিভ্রান্ত করে বোল্ড করেন ইবাদত। বল শার্প সুইং করে আঘাত করে তার লেগ স্টাম্পে! এই উইকেট নিয়ে ইবাদত ক্যারিয়ারে প্রথমবার পেলেন ৫ উইকেট। সঙ্গে বাংলাদেশের পেসারদের দীর্ঘ অপেক্ষা দূর করলেন। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের কোনো পেসার টেস্টে ৫ উইকেট পাননি। ইবাদত সেই গেরো ছুটালেন। 

জয়ের স্বপ্ন পূরণে শেষ দিনের লড়াইয়ে বাংলাদেশ

মাউন্ট মঙ্গানুইতে কে হাসবে শেষের হাসি? বাংলাদেশ নাকি নিউ জিল্যান্ড! দুই দলের টেস্ট যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাতে ম্যাচ ড্র হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফল আসবেই। 

কে জিতবে সেটাই হানড্রেড মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন।

জয়ের তাড়নায় শেষ দিনের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আজ সকল সম্ভাবনাগুলোকে পূর্ণতা দিতে মরিয়া অতিথিরা। কিউই দূর্গ ভেঙে বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন পূর্ণ করতে চায়।

৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে বুধবার মাঠে নেমেছেন রস টেইলর ও রাচিন রবিন্দ্র। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানে পিছিয়ে থাকায় কার্যত তাদের স্কোর ৫ উইকেটে ১৭! দ্রুত কিউইদের অলআউট করে সেই রান তাড়া করার যথেষ্ট সময় আছে বাংলাদেশের হাতে।