খেলাধুলা

রনি-ফ্লেচার-থিসারার ব্যাটে উড়ে গেল ঢাকা

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চলমান আসর শুরু হওয়ার আগে খুলনা টাইগার্স নিয়ে কম মাতামাতি হয়েছিল। কিন্তু আসরের প্রথম দিনেই মাঠের লড়াইয়ে চমকে দিলো মুশফিকুর রহিমের দল। তারকায় ঠাঁসা মিনিস্টার ঢাকার ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে রূপসা পাড়ের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া নায়োকচিত ইনিংস খেলেছেন রনি তালুকদার। শুরুতে ঝড় তুলে কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। লক্ষ্য তাড়ায় এক মুহূর্তের জন্য ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি খুলনা। ফ্লেচার ও রনি তালুকদারের ঝড়ো শুরুর পর শেষ কাজ সারেন থিসারা পেরেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া এ ক্রিকেটার বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনও তার দেওয়ার আছে অনেক কিছু। আর আন্দ্রে রাসেলকে তার মাথার উপর দিয়ে ৬ মেরে ১ ওভার হাতে রেখেই ৫ উইকেটে জয় নিশ্চিত করেছেন মেহেদী হাসান।

টি-টোয়েন্টিতে ১৮৪ রান টপকানো সহজ কথা নয়। তাও যদি হয় শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, তাহলেতো আরও কঠিন। এই কঠিনকেই সহজ করে দিয়েছেন খুলনার ব্যাটসম্যানরা। ঢাকার বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন তারা।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি হয়েছিল লো স্কোরিং। আর দ্বিতীয়টিতে হয়েছে রান উৎসব। দুই দলের পারফরম্যান্স যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তবে শেষ হাসিটা হেসেছে খুলনা। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে ফেরেন তানজীদ হাসান তামিম। মুহূর্তেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। ফ্লেচার ২৩ বলে ৪৫ রান করে চাপটা কমিয়ে দেন। রুবেল হোসেনের এক ওভারে ৪ চার ও ১ ছয়ে নেন ২২ রান। আরেক পাশে রনির ব্যাটে ছুটছিল রানের ফোয়ারা। মাঠের চারদিকে দারুণ খেলতে থাকেন তিনি। হাফসেঞ্চুরি করেন ৩১ বলে। শেষ পর্যন্ত থামেন ৪২ বলে  ৭ চার ও ১ ছয়ে সর্বোচ্চ ৬১ রান করে। তার হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরষ্কার।

মাঝে মুশফিকুর রহিম (৬) ও ইয়াসির আলী (১৩) ফিরলেও কোনো বিপদ ঘটেনি। পেরেরার ২০০ স্ট্রাইক রেটের ঝড়ে ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় খুলনা। ৬ চারে ১৮ বলে ৩৬ রান করেন এই শ্রীলঙ্কান।

ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রাসেল ও ইবাদত।

এর আগে ঢাকার হয়ে দারুণ শুরুটা করেছেন মোহাম্মদ শাহজাদ, মাঝে খেলেছেন তামিম ইকবাল আর শেষটা রাঙিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই ত্রয়ীর ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান করে ঢাকা। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু এনে দেন শাহজাদ। তার দারুণ ইনিংসটি থামে রনি তালুকদারের দারুণ থ্রোতে। ২৭ বলে ৪২ রান করেন তিনি। শাহজাদ যেখানে শেষ করেছেন সেখানে শুরু হয়েছে তামিমের। ফরহাদ রেজাকে ১১তম ওভারে টানা ৩ চারে যেন সেই বার্তাই দিয়েছেন।

সেই রেজার বলেই লং অনে ঠেলে দিয়ে ৪১ বলে দেখা পান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪১তম ফিফটির। তবে আর বেশিদূর যেতে পারেননি, আউট হয়ে যান ৫০ রানেই। ৭ চারে ৪২ বলে এই রান করেন তামিম।

নেপালে এভারেস্ট প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে গত ৬ অক্টোবর ব্যাটিংয়ের সময় বাঁহাতে বুড়ো আঙুলে আঘাত পান তামিম। এরপর থেকে কার্যত মাঠের বাইরে ছিলেন। খেলেননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। মাঠে ফিরেছিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে। আর টি-টোয়েন্টিতে ফেরেন বিপিএল দিয়ে। শুরুর ম্যাচেই ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলে যেন বার্তা দিয়েছেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি।

টিম কম্বিনেশনের কারণে ওপেনার নাঈমকে নামতে হয়েছে তিন নম্বরে। কিন্তু আলো ছড়াতে পারেননি। ১১ বলে ৯ রান করে ফেরেন সাজঘরে। ক্রিজে এসে নতুন ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল ৬ মেরে ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের বলেই ফিরলেন অদ্ভুত রান আউট ৩ বলে ৭ করেন এই ক্যারিবীয়ান সুপারস্টার।  

১১ বলে ১২ রান করে নাভীন উল হকের অসাধারণ ক্যাচে ফেরেন জহুরুল। ভেঙে যায় ১৭ বলে ২৫ রানের জুটি। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ঝড় থামেনি। ১৯তম ওভারে নাভিন উল হককে দুই ছয়ের পর শেষ ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বিকেও টানা দুই বলে চার-ছয় হাঁকান। আউটও হয়েছেন ছয় মারতে গিয়ে মিডউইকেটে তানজীদের দারুণ ক্যাচে। ২০ বলে ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৩৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।

খুলবার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন কামরুল। তবে তিনি ছিলেন খরুচে। ৪ ওভারে দেন ৪৫ রান। এ ছাড়া ১টি উইকেট নেন থিসারা পেরেরা।