খেলাধুলা

হার না মানা মানসিকতা ও একতায় সফল সিটি ক্লাব

ভর দুপুরের তপ্ত রোদ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে চলছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) প্রস্তুতি। চেনা এই মাঠের ডানপাশে চোখ পড়তেই লাগতে খটকা। কারণ ক্রিকেটার-কোচ হতে শুরু করে সবাইকেই লাগছে অচেনা। গায়ে জড়ানো অনুশীলন জার্সি চেনার একমাত্র উপায়। বেগুনি জার্সির পেছনে সাদা রঙে বড় অক্ষরে লেখা ‘সিটি ক্লাব’।

আজকের আলোচনা এই সিটি ক্লাবকে নিয়েই। ২০১৯-২০ মৌসুমের প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মিরপুরের ক্লাবটি জায়গা করে নিয়েছে ডিপিএলে। যদিও প্রিমিয়ার লিগে এই ক্লাবটির খেলার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম নয়। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দলটি ডিপিএলে ছিল। সবশেষ ২০০৭ সালে দলটি নেমে যায় প্রথম বিভাগে। মাঝে ১৩ বছর ধরে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলে এবার খেলবে আরেক ধাপ উপরে।

এই রোমাঞ্চ সিটি ক্লাবের ক্রিকেটার-কর্তাদের মাঝে উচ্ছ্বাসের পরশ ছড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিসিবি একাডেমি মাঠে দলটির অনুশীলনে দেখা যায় ফুরফুরে মেজাজ। কঠোর পরিশ্রমে নিজেদের প্রস্তুতে যেন ব্যস্ত একদল তরুণ। মনেপ্রাণে কিছু একটা করে দেখানোর দৃঢ় সংকল্প।

দুই পাশের নেটে বোলার-ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন। মাঝের পিচে একজন পেসার বল করে যাচ্ছেন লম্বা সময় ধরে। তাদের অনুশীলন বসে বসে দেখছিলেন সিটি ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারাত হাসান বেনু। সানগ্লাস থাকায় মোশারাতের চোখে কী খেলা করছে তা দেখার উপায় নেই। কিন্তু ছেলেদের অনুশীলনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনি, বোঝা গেলো স্বপ্নরা ভাসছে তার চোখে-মুখে।

মোশারাতের সঙ্গে কথা হতেই জানালেন ভালো কিছু করার প্রত্যয়, ‘প্রিমিয়ারে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল যারা আছে, তারা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে, আমরাও তাই। প্রত্যেকটা দলেরই লক্ষ্য থাকে ভালো কিছু করার। আমরাও সেরকম লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি। বাকিটা নির্ভর করবে আমাদের শৃঙ্খলা ও চেষ্টার ওপর।’    

জাতীয় ও ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্মারদের নিয়ে গড়া অন্য দলগুলোর তুলোনায় সিটি ক্লাব বলতে গেলে আনকোড়া। তাদের নিয়ে কতদূর যাওয়া সম্ভব? মোশারাত সেই আলোচনায় যেতেই চান না। তার অগাধ বিশ্বাস যাদের নিয়ে সিটি ক্লাব দল গঠন করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের যোগ্যতা আছে ভালো খেলার, পারফর্ম করার।

অন্য দলগুলোর তুলনায় একটা দিক থেকে এগিয়ে আছে দলটি। মিরপুরে আছে তাদের নিজস্ব মাঠ। দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার থাকেন ক্লাবেই। ক্রিকেটাররা প্রস্তুতি সারেন নিজেদের আঙিনাতেই। এখন একটি টুর্নামেন্ট চলায় বাকি দলগুলোর মতো তারাও এসেছেন বিসিবি একাডেমি মাঠে। কিন্তু তাদের যাত্রাটা কেমন ছিল?

মোশারাত শোনালেন কিছুটা আক্ষেপের গল্পও। ছিল নানা বাধাবিপত্তি। প্রথমেই আছে অর্থ সংকট। তিনি বললেন, ‘আমাদের এটি এলাকার টিম। নানা ধরনের সমস্যা আছে। স্পন্সরদের অভাব আছে। ক্লাবের সদস্যদের চাঁদা দিয়ে চলে এই ক্লাব। এলাকার দল হওয়ায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তাকে। তবুও আমাদের ক্রিকেটারদের একতা, ক্লাবের চেষ্টায় সব সমস্যা কাটিয়ে এতদূর উঠে এসেছি।’

ভবিষ্যতের লক্ষ্য কী জানালেন এই সংগঠক, ‘আমাদের এখানে সব উদীয়মান ক্রিকেটার। যেভাবে আমরা প্রথম বিভাগ খেলে এসেছি এখানেও লক্ষ্য থাকবে সেভাবেই খেলা। তাদের যেন জাতীয় পর্যায়ের জন্য তৈরি করতে পারি, এখন আমাদের এই ইচ্ছা। চেষ্টা থাকলে সবকিছু হবে।’

১২ বছর ধরে সিটি ক্লাবে কোচ হিসেবে আছেন নাজমুল হোসেন মোখলেস। এক যুগ ধরে ক্লাবটির ক্রিকেটারদের গড়ে তুলছেন তিনি। একাই যেন একশ। প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ারে আসার পেছনে নাজমুলের অনেক অবদান। কীভাবে সম্ভব হয়েছে? কোচের উত্তর, ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ, পার্ট বাই পার্ট বুঝেশুনে খেলার চেষ্টা করে ছেলেরা সফল হয়েছে। ক্রিকেটার হতে শুরু করে অফিসিয়ালরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল শেষ পর্যন্ত। তাই আমরা এতদূর পর্যন্ত এসেছি।’

এবারের দল গঠন নিয়ে নজরুল বলেন, ‘আমাদের দলটা হলো তরুণ। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করেছি ভালো দল গড়ার জন্য। স্পিন বোলিং বলেন, পেস বোলিং বলেন কিংবা ব্যাটসম্যান, সবদিকে নজর ছিল। আমরা সন্তুষ্ট আমাদের দল নিয়ে।’

তাদের তুলনায় অন্য দলগুলো শক্তিশালী। নজরুল আত্মবিশ্বাসী ছেলেদের নিয়ে, ‘এটি গোল বলের খেলা, যে কোনো কিছুই হতে পারে। এখানে আসলে বড়-ছোট দল বলতে কিছু নেই। আসলে এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই, আমাদের চিন্তা হলো ভালো ক্রিকেট খেলা নিয়ে। আমার বিশ্বাস আছে ছেলেদের ওপর।’

এবারের আসরে দলটির নেতৃত্ব দেবেন জাওয়াদ মোহাম্মদ রোয়েন। ২০১৮ সাল থেকে এই ক্লাবের সঙ্গে আছেন। তিনি ব্যাটিং অলরাউন্ডার, করেন অফস্পিনও। তার নেতৃত্বেই ক্লাবটি প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়। ঐক্যবদ্ধ থেকে তিনি চমকে দিতে চান এবারের আসরে। কোচের মতো তারও অগাধ বিশ্বাস নিজের দল নিয়ে।

জাওয়াদ বলেন, ‘আমরা এখন অনেক বেশি কিছু চিন্তা করছি না। ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করব। প্রথম ম্যাচ আমাদের প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে। নাম এবং দলের দিক থেকেও তারা অনেক বড়। আমরা প্রথম ম্যাচ যদি ভালোভাবে শুরু করতে পারি ভালো কিছু হবে। আশা করি চমক দেখাতে পারব।’

সিটি ক্লাব: জাওয়াদ মোহাম্মদ রোয়েন (অধিনায়ক), আমিনুর রহমান, তৌফিকুর খান, শফিউল হায়াত হৃদয়, নাজমুল হোসেন, আবুল হালিম, শাহরিয়ার কমল, জাকিরুল আহমেদ, মাইনুল ইসলাম, আবু নাসের শহিদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাজিবুল ইসলাম, আশিকুল ইসলাম নাঈম, শাহরিয়ার আলম মাহিম, মঈনুল ইসলাম সোহেল।