খেলাধুলা

তাসকিনের জন্য বিশ্বমানের ‘সেটআপ’, যেভাবে ঘটে রূপান্তর

সেঞ্চুরিয়নে তাসকিন আহমেদের রূপকথার গল্প এখন সবার মুখে মুখে। এই রূপকথার গল্প রচিত করার জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি এই স্পিডস্টারকে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হওয়া, ২০১৯ বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়া তাসকিনের ফেরার গল্পটাও অনবদ্য।

আগুনঝরা বোলিংয়ের পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন দেশি কোচ মাহবুব আলী জ্যাকি। তাসকিনের জন্য তিনি গড়ে তুলেছেন বিশ্বমানের এক সেটআপ। যেখানে বডিবিল্ডার, মনোবিদ, ট্রেনার হতে শুরু করে যাদের যাদের প্রয়োজন সবাইকেই রেখেছেন। এই সেটআপের ফল আজকের তাসকিন। গতির ঝড় তুলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, আর এখন সেঞ্চিরিয়ন মহাকাব্যের মহানায়ক।

শুরুটা হয় ২০১৯ বিশ্বকাপে বাদ পড়ার পর। ওমরাহ করতে হুট করে মাঝরাতে ফোন করেন জ্যাকিকে। যার সঙ্গে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে আছেন তিনি, বিশ্বাস করেন অন্ধের মতো। জ্যাকি তখন ২০১৯ বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে। তাসকিন ফোন করে বলেন, আমি ‘সিরিয়াস ক্রিকেট খেলতে চাই।’ এই ফোন কলের পর থেকে শুরু হয় বদলে যাওয়া তাসকিনের গল্প।

রাইজিংবিডিকে জ্যাকি বলেন, ‘২০১৯ বিশ্বকাপ। সে তখন দলে নেই। ওমরাহ করতে গিয়ে মাঝরাতে আমাকে ফোন দেয়। বলে, স্যার আমি সিরিয়াস ক্রিকেট খেলতে চাই। আমি তাকে বললাম ‘আমি যে পক্রিয়ায় অনুশীলন করাব সেটা তুমি নিতে পারবে না।’ কারণ তাকে আমার স্বল্প সময়ে খেলায় ফেরাতে হবে। তখন তাকে বললাম দেশে একটা সেটআপ তৈরি করতে হবে। তখন সে সায় দিলো।’

তাসকিনের সায় পেয়ে জ্যাকি আলাদা টিম গঠন শুরু করেন। এরপর যথারীতি শুরু হয় কাজ। জ্যাকি বললেন, ‘তার বডি ট্রান্সফর্ম করতে হবে। এ জন্য বডিবিল্ডার দরকার। কারণ তার মূল শক্তি হচ্ছে পেস। এটা ছাড়া সে কিছু না। এ জন্য তার বডির ট্রান্সফর্ম দরকার ছিল। তার মাসলে উন্নতি করতে হচ্ছে। একজন মনোবিদ দরকার। সবসময় যে তাকে সাপোর্ট দেবে। তার জন্য আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনার আছে, ফিজিও আছে, বোলিং ট্রেনার আছে। সবকিছু মিলিয়ে তাসকিনের জন্য আমার একটা সেটআপ তৈরি করি।’

মূল কাজ শুরু হয় করোনার মধ্যে। যখন পৃথিবী চার দেয়ালে বন্দি, তখন তাসকিনকে নিয়ে কাজ শুরু। আগুনের মধ্যে হাঁটাসহ নানা ধরনের কাজ করে তাসকিন তখন আলোচনায়। সে কথা বলছেন জ্যাকিও, ‘এরপর করোনার মধ্যে আমরা কাজ শুরু করি। করোনা আমাদের সবার জীবনে অনেক ক্ষতি করেছে, কিন্তু তাসকিনকে নতুন জীবন দিয়েছে। ক্রিকেট খেলা বন্ধ ছিল। আমরা অনুশীলন শুরু করি। যদিও অনেক কঠিন ছিল। এই সময়টা তার জীবনে অনেক কাজে দিয়েছে।’

ওই যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাসকিনের সেটি এখনো চলমান। শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও বিবর্তন ঘটেছে তার। বোলিংয়ের পরিবর্তন তো দেখা যাচ্ছে মাঠেই। কথা বার্তায়ও অনেক সাবধানী। সেঞ্চুরিয়নে ফাইফার নেওয়ার পর কেমন অনুভূতি তাসকিনের কোচ জ্যাকির? প্রথমবারের মতো হয়েছেন ম্যান অব দ্য সিরিজ; জ্যাকির তো আনন্দের শেষ থাকার কথা না। কিন্তু তিনি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।

জ্যাকি বলেছেন, ‘কোনো বিশেষ অনুভূতি নেই। আগে যেমন ছিল তেমন। ম্যান অব দ্য সিরিজ আসলে বড় বিষয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল সে তার বেঞ্চমার্কে পৌঁছাবে ধীরে ধীরে। সেটা আজ না হোক কাল। যে প্রক্রিয়ায় আমরা এগোচ্ছি আমাদের বেঞ্চমার্কে যাওয়ার কথা আগে কিংবা পরে। আমাদের কাজটাও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।’

কিন্তু এই জ্যাকির সঙ্গে তাসকিনের পরিচয় ও কাজ শুরু কবে থেকে? কীভাবে তার ওপর অন্ধ বিশ্বাস আসে? জ্যাকি জানালেন, এখন তাসকিনের সঙ্গে তার গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক।

তিনি বলেন, ‘আমার ওপর তার অনেক বিশ্বাস। অন্ধ বিশ্বাস বলা যায়। কোনো সমস্যা হলেই আমার কাছে ছুটে আসে। ২০০৮ থেকে তার সঙ্গে আমি কাজ করি। এখন বলতে গেলে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। ২০১৬ সালে সে যখন নিষিদ্ধ হয় তখন ক্রিকেট বোর্ড তাকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা বলেছিল, তাসকিন বলেছে আমার সঙ্গেই কাজ করবে।’

নিষিদ্ধ হওয়ার পর, বাদ পড়ার পর হারিয়ে যাননি তাসকিন। দেখিয়েছেন এভাবেও ফেরা যায়। সেখানে তাসকিনের সঙ্গে জ্যাকির অবদানও কিন্তু কম নয়!