খেলাধুলা

মোশাররফ রুবেলের চিকিৎসার জন্য ১৫ লাখ টাকা দিলো সাকিবের মোনার্ক মার্ট

জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। গেল ১৪ মার্চ থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে আইসিইউতে রয়েছেন তিনি।

২০১৯ সাল থেকে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত মোশাররফ রুবেলের পাশে দাঁড়িয়েছে সাকিব আল হাসানের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট। আজ রোববার (২৭ মার্চ) বিকেলে রুবেলের চিকিৎসার জন্য মতিঝিল সিটি সেন্টার কার্যালয়ে তার স্ত্রীর কাছে ১৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি।

চেক গ্রহণের পর রুবেলের স্ত্রী চৈতি ফারহানা রুপা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘গতবারের সার্জারির পর আমাদের যা সেভিংস ছিল সেটার ওপর ভালো একটা ধাক্কা গেছে। আমাদের এমন দুঃসময়ে সাকিব ভাই ও মোনার্ক মার্ট আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের কাছে আমরা আসলে খুবই কৃতজ্ঞ।’

‘রুবেল অবশ্য এখন খুব একটা কথা বলতে পারে না। তবে তার সতীর্থ সাকিব তার পাশে দাঁড়িয়েছে এতে সে খুব খুশি হয়েছে। সাকিব ভাই এর আগেও আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমাদের এমন দুঃসময়ে তারা পাশে আছেন এটাই আমাদের জন্য অনেক কিছু। আমরা আসলে অনিশ্চিত একটা সময় পার করছি। এমন সময়ে বড় মানুষগুলো, বন্ধুরা, মাঠের সতীর্থরা যখন পাশে থাকেন তখন সাহস অনেক বেড়ে যায়’ যোগ করেন তিনি।

রুবেল ঠিকভাবে কথা বলতে না পারলেও হাসপাতালের কেবিনে বসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচ দেখেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন তার স্ত্রী, ‘কেবিনে নেওয়ার পর সে বাংলাদেশের সবগুলো ম্যাচ দেখেছে। বাংলাদেশ জেতার পর তার যে খুশি সেটা দেখার মতো ছিল। বিছানায় শুয়ে শুয়েও সে বাংলাদেশকে সাপোর্ট করছে।’

২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। দেড় বছর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন। গত ১১ অক্টোবর ইউনাইটেড হাসপাতালেই সর্বশেষ কেমোথেরাপি নিয়েছেন তিনি।

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচার হয় তার। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়মিত সিঙ্গাপুর যাওয়া আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বর সর্বশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হলে ভেঙে পড়েন। জানুয়ারি থেকে পুনরায় কেমো নেওয়া শুরু করেন।

২০০৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক মোশাররফ হোসেন রুবেলের। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে খেলে ১ উইকেট পান। দল থেকে অতি দ্রুত বাদ পড়েন। এরপর তাকে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে নিয়েছিল দল। কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়ে আবার বাদ পড়েন।

২০১৬ সালে আফগানিস্তান সিরিজে তাকে দলে নেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আট বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নেমে ৩ উইকেট পান। দলকে জেতাতে বড় ভূমিকাও রাখেন তিনি। কিন্তু পরের ম্যাচে উইকেট না পাওয়ায় রুবেল আবার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। ফলে তার ক্যারিয়ার সেখানেই থেমে যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। দুবার ওয়ালটনকে বিসিএলের শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি।