খেলাধুলা

সেঞ্চুরিতে জয়ের ইতিহাস

কেশভ মহরাজের শর্ট বল পেছনের পায়ে ভর করে কাট শটে পয়েন্টে পাঠালেন মাহমুদুল হাসান জয়। ধারাভাষ্যকার বলে উঠলেন, ‘দ্যাটস ইট….আ রিমার্কেবল সেঞ্চুরি।’ তেম্বা বাভুমা বল ফেরত পাঠানোর আগে দৌড়ে দুবার প্রান্ত বদল জয়ের। ৯৮ থেকে তার রান পৌঁছে গেলো সেঞ্চুরিতে। তাতেই ইতিহাস।

প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তার আগে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দেশে কিংবা দেশের বাইরে কেউ-ই তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। ২১ বছর বয়সী তরুণ সেই সেঞ্চুরির গেরো ছুটালেন।

নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন জয়। আর এই অসাধ্য সাধন করেছেন তখন, যখন দল ছিল খাদের কিনারায়। মুমিনুল, মুশফিক, শান্ত, সাদমানরা ডারবানের ২২ গজে রান পাননি। চাপে ছিল বাংলাদেশ। সেখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৩৬৩ মিনিট উইকেট আগলে রেখে ২৬৯ বল খেলে প্রথম তিন অঙ্ক ছুঁয়ে দেখেন জয়।

এর আগে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মুমিনুল সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেছিলেন পচেফস্ট্রুমে। হাবিবুল বাশার ৭৫ করেছিলেন চট্টগ্রামে। তাদের ছাপিয়ে জয় ডারবানের ২২ গজে শতকে রাঙালেন।

শুরু থেকে রান নিতে কোনো তাড়াহুড়ো করেননি জয়। নিজের প্রক্রিয়ায় স্থির ছিলেন পুরোটা সময়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বল দেখা, মাথা নামিয়ে বল খেলা, নিজের শটে আত্মবিশ্বাস, শর্ট বলে ডাক করা, স্পিনারদের বিপক্ষে পায়ের ব্যবহার, ফরোয়ার্ড ডিফেন্স… সবকিছুতেই নিজের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন।

১৭০ বলে পেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। তাতে চারের মার ছিল মাত্র পাঁচটি। সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে খেলেন আরও ৯৯ বল। এ সময়ে প্রোটিয়াদের কোনো সুযোগ দেননি।

চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, দৃঢ়চেতা মনোভাব, হার না মানা মনোবলে জয় হয়ে উঠেছেন অনন্য। ডারবানের ক্যানভাসে যে শতক আঁকলেন তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভুবনে মনে থাকবে দীর্ঘদিন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় তার অভিষেক হয়েছিল। অভিষেক রাঙাতে পারেননি যুব বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার। তবে নিজের সামর্থ্য চেনাতে সময় নেননি। নিউ জিল্যান্ড সফরে ঐতিহাসিক মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে প্রথম ইনিংসে নজরকাড়া ৭৮ রান করেছিলেন। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে বোল্ট, সাউদি, জেমিনসনদের সামলে প্রশংসা কুড়ান।

কিন্তু ইনজুরিতে পড়ায় দ্বিতীয় টেস্ট খেলা হয়নি তার। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা কন্ডিশনে তুলির আচঁড় ছড়ানো সেঞ্চুরিতে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া জন্য পুরোপুরি তৈরি তা যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন এই তরুণ।