খেলাধুলা

স্ত্রীর কণ্ঠে নিজের চরিত্র নিয়ে লেখা গল্প শুনে মুগ্ধ রুবেল

হাসপাতালের বেডে আধশোয়া মোশাররফ হোসেন রুবেল। পাশের সোফায় কোলে বালিশ নিয়ে বসে স্ত্রী ফারহানা রুপা চৈতি। এক হাতে মুখে ঠেস দিয়ে রাখা, আরেক হাতে রাখা একটি বই। চৈতি পড়ছেন, ঠোঁটে এক চিলতে হাসি আর চোখে-মুখে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে শুনছেন রুবেল।

জীবন যুদ্ধে লড়াই করা রুবেলের সঙ্গে এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে পোস্ট করেন সার্বক্ষণিক সঙ্গী চৈতি। মুহুর্তেই নেটিজেনদের মন কেড়ে নেয় এই ছবিটি।

আরও পড়ুন: ‘জীবন ম্যাচ’ জিততে লড়ছেন রুবেল

এই ছবিকে প্রসঙ্গ করেই রাইজিংবিডির কথা হয় চৈতির সঙ্গে। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে মুঠোফোনে চৈতি জানিয়েছেন, আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছেন রুবেল। তার আগ্রহেই বইটি পড়ে শুনিয়েছেন তাকে। মজার বিষয় হলো বইটির অন্যতম দুই চরিত্রের একজন রুবেল। লেখক উৎসর্গও করেছেন রুবেলকে। লিখেছেন রুবেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোসাদ্দেক মিনহাজ।

আনন্দমাখা কণ্ঠে চৈতি বলেন, ‘রুবেলতো আর পড়তে পারে না। বইটি হাতে পাওয়ার পর সে শোনার আগ্রহ দেখায়। আমি পাশে বসে তাকে শোনাই। সে মাঝে মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এটার লেখক তার বন্ধু। চরিত্রের একজন রুবেল। ধীরে ধীরে পড়ে শোনাচ্ছি। এখনো শেষ হয়নি।’

কিন্তু এখন কী অবস্থা রুবেলের? আগের চেয়ে ভালো নাকি খারাপ? চৈতি দিয়েছেন স্বস্তির সংবাদ, ‘রুবেল ভালো আছেন এখন। কথাও বলছেন টুকটাক। চিকিৎসক রিলিজ দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎ করে জ্বর আসায় আমরা তাকে বাসায় নিইনি। রক্তেও একটু সমস্যা ছিল। এখন জ্বর নেই। কয়েকদিন পর আশা করি বাসায় নেব।’

রুবেলের জীবন যুদ্ধে সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার স্ত্রী চৈতি। স্বামীর সেবা করার পাশাপাশি কেবিনে অফিস-পরিবার সবকিছু সামলাচ্ছেন দারুণভাবে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস করে ছুটে আসেন হাসপাতালে। সময় দেন রুবেলকে। যেন কোনো ক্লান্তি নেই চৈতির। এই বিষয়ে প্রশ্ন করলেই সবসময় এড়িয়ে যান তিনি। এক কথায় উত্তর দেন, ‘আমি ছাড়া থাকবে কে?’

কদিন আগেই হুইলচেয়ারে বসা রুবেলের একটি ছবি দেখে হতভম্ভ সবাই। অপলক দৃষ্টিতে রুবেলের নিষ্পাপ চাহনি, মায়াবি হাসি, সারল্য অবয়ব যেন চোখ ভিজিয়ে দেয়। ফেসবুকের দেয়ালে ছবিটা ঘুরছে। যাদেরই নজরে আসছে তারাই আফসোসের সাগরে ডুবে যাচ্ছেন। সেই ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে রুবেল যেন ফিরছেন আপন ভুবনে।

২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচার হয় তার। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়মিত সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বরে সবশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।

২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হন। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরোনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন।

ঘড়ির কাঁটা চলছে। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প মানুষ আর মনভেদে নানারকম। রুবেলের সংগ্রাম অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তবুও তিনি হাল ছাড়েন না। হাল ছাড়েন না চৈতিও।