খেলাধুলা

আগের টেস্ট জয়গুলো বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে, বললেন ডমিঙ্গো

২০১৬ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলায় সাদা পোশাকে ইংলিশ বধ। পরের বছর একই মাঠে আবার অস্ট্রেলিয়া বধ। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য খুঁজতে গেলে এ দুটি নামই আসে সন্দেহাতীতভাবে। কিন্তু মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো এ সব হঠাৎ পাওয়া জয়গুলো বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে ক্ষতি করেছে বেশি। এমনটা মনে করছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে এমন কথা জানান দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ। টেস্ট ক্রিকেটে কেন সাফল্য ধরা দিচ্ছে না, বারবার কেন ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যর্থতার বৃত্তে। সবকিছুর পেছেনে আসলে কি আছে? কারণ খুঁজে না পেলেতো পরিত্রাণের প্রশ্নই আসে না। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থা হলো, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা।’

ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে সাফল্য পেতে হলে প্রক্রিয়াটাও হতে হয় নিখুঁত। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এই জমজমাট যুগে তা কঠিন বটে। এখানে সাফল্য পেতে হলে ১৫টি সেশনই খেলতে হবে নির্ভুল। মানসিকভাবে থাকতে হবে দৃঢ, দিতে হবে ধৈর্যে্যর পরীক্ষা। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য আসে মাঝে-সাঝে। কিছু আছে ঘরের মাঠে হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে (স্পিন সহায়ক স্লো উইকেট) বানিয়ে বলে কয়ে হারানো। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে ধারবাহিক সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা ক্ষতিকর।

ডমিঙ্গোর ভাষ্য, ‘এটা (হোম কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়া) হয়তো আমাদের একটা টেস্ট ম্যাচের জন্য সাহায্য করবে। কিন্তু দীর্ঘ পরিসরের জন্য টেস্ট দল গড়তে সাহায্য করবে না। আগের টেস্ট জয়গুলোর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ওই টেস্ট জয় আমাদের পরে হয়তো ক্ষতিই করেছে। কারণ, এরপর ভালো উইকেটে যখন খেলেছি, তখন ভালো করিনি।’

টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৩২টি ম্যাচ খেলেছে। তাতে সাফল্য বলতে ১৬টি ম্যাচে জয় আর ১৮টি ম্যাচে ড্র। তার মধ্যে ঘরের মাটিতে ১০টি জয়, আর ড্র ১৪টিতে। অর্থ্যাৎ বেশিরভাগ জয় কিংবা ড্র এসেছে ঘরের মাঠে হোম কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে জয়, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় এবং ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়। এরপর থেকে ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্লো উইকেট বানিয়ে বুমেরাং হওয়ার আগ পর্যন্ত স্লো উইকেটে খেলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে সেই তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে স্পোর্টিং উইকেটে খেলায় মনোযোগ দিয়েছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। এবারের সিরিজে চট্টগ্রামে ছিল ফ্ল্যাট উইকেট। ব্যাটসম্যানদের স্বর্গস্বরূপ এই পিচে ড্র করলেও মিরপুরে স্পোর্টিং উইকেটে ব্যর্থ হয়েছে।

ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমরা যদি স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে খেলি, এরপর ঘরের বাইরে ভালো উইকেটে খেলি, তাহলে আমাদের কোনো সুযোগই থাকবে না। আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি গড়তে হলে, ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনতে হলে ভালো উইকেটে খেলতে হবে। এই টেস্টের উইকেট ভালো ছিল। টেস্টের পঞ্চম দিন ফল এসেছে, ভালো উইকেট! চট্টগ্রাম ফ্ল্যাট ছিল। কিন্তু সেখানেও ফল হতে পারতো।’

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৬৩ ম্যাচ খেলে। তার মধ্যে ৫৩টি ম্যাচেই হার। জয় ছয় ম্যাচে আর ড্র ৪ ম্যাচে। তার মধ্যে সেরা সাফল্য বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পাওয়া ঐতিহাসিক জয়।

ডমিঙ্গোর মতে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে বড় দল হওয়ার পথে, ‘আমি মনে করি আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল হতে শুরু করেছি। আমরা প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের আরও এক ধাপ উন্নতি করতে হবে। আমি পার্থক্যটা কমে আসতে দেখছি।’