খেলাধুলা

মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার কি শেষ?

সাদা পোশাকে হতশ্রী পারফরম্যান্সের কারণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বলেছিলেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পর জানিয়েছিলেন, ‘ভালো কিছু করলেই তাকে দলে ফেরানো হবে।’ বাদ পড়ার ১৬ মাস পর দলে ফেরেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, হারারেতে শতক হাঁকিয়ে আচমকা বিদায় বলে দেন টেস্ট ক্রিকেটকে!

মাহমুদউল্লাহর এমন অবসর কাণ্ড বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানতো না। টেস্ট ক্রিকেট থেকে বাদ পড়া, আবার ফেরা-অভিমান থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা ছিল নিশ্চিত। একুশের সেপ্টেম্বরে মাহমুদউল্লাহর অবসর নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটকে অভিমান করে বিদায় বলে দিলেও বছর না ঘুরতেই ছাড়তে হলো টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বও। শুধু তাই নয়, জায়গা হয়নি টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডেও।

টেস্টে মাহমুদউল্লাহর অবসর নিয়ে টের না পেলেও টি-টোয়েন্টিতে থেকে ছাঁটাইয়ের আগে হয়েছে অনেক আলোচনা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাহমুদউল্লাহ নেতৃত্ব হারাচ্ছেন এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়। অতপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফেরার পরদিনই তার সঙ্গে বৈঠকে বসে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। সঙ্গে ছিলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন ও তিন নির্বাচক।

বৈঠকে মাহমুদউল্লাহকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে নেতৃত্বে না রাখার বিষয়টি। তারই পদক্ষেপ হিসেবে জিম্বাবুয়ে সিরিজে দায়িত্ব দেওয়া হয় তরুণ নুরুল হাসান সোহানকে। বিসিবির ভাষায় নতুন ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি টিম গঠনের ধাপ হিসেবেই এই পরিবর্তন।

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে বৈঠকের পর জালাল ইউনুস বলেন, ‘এই দলটাকে সামলানোর জন্য নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়কত্ব দিচ্ছি। সেটা আমরা আজকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে জানিয়ে দিয়েছি। মুশফিকও জানে, সাকিবও জানে। তাদের জায়গায় আমরা নতুন খেলোয়াড় চেষ্টা করছি। এটা শুধু জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য দেখতে চাচ্ছি তাদের ফলাফল, পারফরম্যান্স কি হয়। সেটা দেখার জন্য আপনারা বলতে পারেন নতুন ব্র্যান্ডের একটা দল যাচ্ছে।’

সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হলে ২০১৯ সালে নেতৃত্ব পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে জয় দিয়ে নেতৃত্বের পথচলা শুরু হলেও পরের পথচলা সুখকর ছিল না। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে। তার মধ্যে জয় পেয়েছে ১৬টিতে, হেরেছে ২৬টিতে আর ১টি ম্যাচে ফল হয়নি।

নেতাকে নেতৃত্ব দিতে হয় সামনে থেকে। এ জন্য পারফরম্যান্স থাকা চাই দারুণ। মাহমদুউল্লাহ এদিকটাতেও বেশ পিছিয়ে ছিলেন। সবশেষ ফিফটি করেছিলেন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। এরপর ১৩ ম্যাচের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৩১। বিশের ঘর পেরোতে পেরেছেন মাত্র ২ বার! সবশেষ উইন্ডিজ সিরিজে তিন ম্যাচে আসে ৪১ রান!

সামনেই আছে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড় আসর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে টিম ম্যানেজম্যান্ট জানিয়েছিল, বিশ্বকাপের মিশন শুরু হওয়ার কথা। এই সিরিজ শেষ না হতেই খোদ অধিনায়ক পরিবর্তন হওয়া ইঙ্গিত দেয়, বোর্ড ভিন্ন কিছুই ভাবছে।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্ন বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমাদের পারফরম্যান্স ধারাবাহিকভাবে ভালো হচ্ছে না। সামনে যেহেতু এশিয়া কাপ আছে, বিশ্বকাপও আছে, নতুনভাবে শুরু করতে চাই। মূলত এশিয়া কাপ থেকেই বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা শুরু হবে। এর আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজে কিছু খেলোয়াড়কে দেখার একটা সুযোগ। এজন্য সিনিয়র খেলোয়াড়দের বাইরে রেখে নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জিম্বাবুয়ে সফরে ভালো কিছু পেলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে কাজে লাগবে।’

অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকায় মাহমুদউল্লাহ দলে ফিরতে পারলেও নেতৃত্বে ফিরবেন কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এশিয়া কাপ থেকে নেতৃত্বের ভার সাকিব আল হাসানের কাঁধে উঠবে এমন আলোচনাও বেশ শোনা যাচ্ছে। এর আগে মুমিনুল হকের পরিবর্তে টেস্ট অধিনায়ক হয়েছেন সাকিব। তবে মাহমুদউল্লাহ একেবারেই দল থেকে বাদ পড়ে গেছেন এমনটা ভাবছেন না বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে ফাহিম বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে সিরিজে সিনিয়রদের বিশ্রাম দিয়ে তরুণদের পাঠানো হচ্ছে। এই টিমের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যত। টি-টোয়েন্টিতে আমরা দুর্বল। এটা আমাদের আরও আগে করা উচিৎ ছিল। মাহমুদউল্লাহর পারফরম্যান্স ভালো হয়নি দেখে বাড়তি কথা হচ্ছে। এখন জিম্বাবুয়ে সিরিজের পরে বোর্ড কি সিদ্ধান্ত নেয় তাতে বোঝা যাবে তারা কি ভাবছে। তবে আমি মনে করছি না সিনিয়রদের একেবারে বাদ দিয়েই টি-টোয়েন্টি টিম গঠন করবে।’