খেলাধুলা

নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটে বর্ণবাদের শিকার রস টেলর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কয়েক মাস পর লেখা নতুন আত্মজীবনী ‘রস টেলর ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ গ্রন্থে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের এক করুণ চিত্রের কথা তুলে ধরেছেন রস টেলর, যা বিস্মিত করেছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে। মায়ের দিক থেকে আদিবাসী হওয়ায় তিনি অন্য খেলোয়াড়দের বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য খেলোয়াড়রাও তাদের জাতিসত্তা নিয়ে সতীর্থদের কাছে উপহাসের শিকার হতেন।

টেলর লিখেছেন, নিউ জিল্যান্ড সাদা বর্ণের মানুষের খেলা এবং ড্রেসিংরুমে বর্ণবাদের শিকারও হয়েছেন, যা অনেকের কাছে ‘নিছক মজা’ মনে হতো। টেলরের বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশ করেছে নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ড, ‘নিউ জিল্যান্ডে ক্রিকেট অনেকাংশে সাদা বর্ণের মানুষের খেলা। আমার ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় আমি ছিলাম ব্যতিক্রম, ভ্যানিলা (সাদা বা ফর্সা রঙ) লাইন আপে একজন বাদামী বর্ণের।’

এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল তার কাছে, ‘এটা খুব চ্যালেঞ্জিং, যার মধ্যে অধিকাংশ আপনার সতীর্থ বা ক্রিকেটীয় গোষ্ঠীর কাছে দৃশ্যমান নয়। ক্রিকেটে পলিনেশিয়ান সম্প্রদায়ের খুব কম লোক প্রতিনিধিত্ব করেছে। এটা সম্ভবত আশ্চর্যের ছিল না যে লোকেরা অনেক সময় ধারণা করতো আমি মাওরি কিংবা ভারতীয়।’

সতীর্থদের কাছ থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে টেলর লিখেছেন, ‘অনেক উপায়ে ড্রেসিংরুমে উপহাস করা হতো। একজন সতীর্থ আমাকে বলতো, ‘তুমি অর্ধেক ভালো, রস, কিন্তু কোন অর্ধেক ভালো? তুমি জানো না আমি কী বলতে চাচ্ছি’ অন্য খেলোয়াড়রাও এমন মন্তব্যের শিকার হতো যেগুলো তাদের জাতিসত্তা নিয়ে।’

এসব মন্তব্য অনেকের কাছে খুব একটা গুরুতর ছিল না জানিয়েছেন টেলর, ‘একজন পাকেহা (সাদা বর্ণের নিউ জিল্যান্ডার) এই ধরনের মন্তব্য শুনে মনে করতো, ‘আহ, এটা আর কী, এগুলো তো শুধুই মজা।’ কিন্তু সে তো সাদা বর্ণের মানুষ হিসেবে শুনতো, আর এটা তাকে উদ্দেশ্য করেও তো বলা নয়। তাই কোনো পাল্টা জবাব আসতো না, কেউ তাদের সংশোধনও করতো না।’

এসব নিয়ে অভিযোগ করে ঝামেলা বাড়াতে চাননি টেলর, ‘আপনি হয়তো বলবেন পাল্টা জবাব দেওয়া উচিত। কিন্তু দুশ্চিন্তার ব্যাপার তাতে আপনি বড় সমস্যা তৈরি করবেন। অথবা অভিযোগ আসবে মজা করে বলা কথা কীভাবে বর্ণবাদ। এর চেয়ে মোটা চামড়া তৈরি করে সহ্য করা সহজ। কিন্তু এটা কি ঠিক?’

টেলরের বর্ণবাদের শিকার হওয়ার ঘটনা শুনে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের এক মুখপাত্র গণমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘রস এই ধরনের আচরণের শিকার হওয়ায় আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অবশ্যই রসের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।’