খেলাধুলা

স্ট্যান্ডিং অনুযায়ী জাতীয় লিগে ম্যাচ ফি, সর্বোচ্চ ১ লাখ পাওয়ার সুযোগ

পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি চ‌্যাম্পিয়ন প্রাইজমানি ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ প্রত‌্যেক বিভাগীয় দল একজন করে টেকনিক‌্যাল কনসালট্যান্ট। অবশ‌্যই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার হতে হবে ডিউক বলে খেলা প্রথমবারের মতো ডিমেরিট পয়েন্ট। এক বছর বিসিবির যে কোনও প্রতিযোগিতায় ডিমেরিট পয়েন্ট কার্যকর হবে

সামনেই শুরু হচ্ছে ভরা ক্রিকেট মৌসুম। বিরতিহীন চলবে একের পর এক টুর্নামেন্ট। তাই মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আবার ক্রিকেটারদের আনাগোনা। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দেশের বাইরে থাকায় একাডেমি মাঠ, ইনডোর, ইনডোরের আউটডোরে জোরেশোরেই চলছে মিঠুন, মুমিনুল, নাঈম, নাসিরদের প্রস্তুতি।

দেশের ক্রিকেটে বড় দৈর্ঘ্যের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় আসর জাতীয় ক্রিকেট লিগ দিয়ে শুরু হচ্ছে দেশের ক্রিকেট মৌসুম। ১০ অক্টোবর মাঠে গড়াবে এই প্রতিযোগিতা। এবার মাঠে নামার আগেই ক্রিকেটাররা পেয়েছেন সুখবর। সাদা পোশাকের লড়াইয়ে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ম্যাচ ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু বৃদ্ধিই নয়, এবার এক লাখ টাকা ম্যাচ ফির পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। 

বিসিবির নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এবারের জাতীয় লিগে প্রথম স্তরে যারা চ্যাম্পিয়ন হবে তাদের ম্যাচ ফি হবে ১ লাখ টাকা। পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় দল পাবে ৮০ হাজার টাকা। তৃতীয় ও চতুর্থ দল পাবে যথাক্রমে ৭০ ও ৬০ হাজার টাকা। স্ট্যান্ডিং অনুযায়ী এই ম্যাচ ফি নির্ধারণের মূল উদ্দেশ‌্য, ‘দলগুলো যেন একটা দল হিসেবে খেলে। ব‌্যক্তিগত পারফরম‌্যান্সের চেয়ে দলগত পারফরম‌্যান্সের দিকে যেন সবাই মনোযোগী হয়।’– বলছিলেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম।

দ্বিতীয় স্তরেও একই প্রক্রিয়ায় ম্যাচ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে চ‌্যাম্পিয়ন দলের ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি পাবেন ৬০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দল ৫৫ হাজার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ দল ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ পুরস্কার পাবেন।

তিন থেকে চার বছর আগে স্ট্যান্ডিং অনুযায়ী ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি নির্ধারণের পরিকল্পনা দিয়েছিলেন আরিফুল ইসলাম। নানা কারণে সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। তবে বিসিবি নতুন করে দায়িত্ব বন্টনের পর টুর্নামেন্ট কমিটির নতুন চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি এই প্রস্তাব লুফে নেন, ‘খেলোয়াড়দের লাভবান হওয়ার বেশি সুযোগ। আপনি এবং আপনার দল ভালো করলে চ‌্যাম্পিয়ন প্রাইজমানির সঙ্গে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়ার সুযোগ থাকবে। আগে যেই দলটা চারে থাকতো আর যেই দলটা চ‌্যাম্পিয়ন হতো একই ম‌্যাচ ফি পেতো। কোনও পার্থক‌্য থাকতো না। এখন আপনি বেশি পরিশ্রম করবেন, সফল হবেন, আপনার পারিশ্রমিকও বেশি।’ 

আগে প্রথম স্তরের চ্যাম্পিয়ন ও চতুর্থ দল ৬০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি পেতো। দ্বিতীয় স্তরে আগে ছিল ৫০ হাজার। ম্যাচে খেলা ১১ জন পুরো ম‌্যাচ ফি পান। ১২, ১৩, ১৪ নম্বর খেলোয়াড় একটা ম‌্যাচ ফি ভাগাভাগি করেন। ১২ নম্বর খেলোয়াড় ৪০ শতাংশ পান। ১৩ ও ১৪ নম্বর বাকি থার্টি-থার্টি।

টুর্নামেন্ট শেষে খেলোয়াড়রা ছয় ম্যাচের ম্যাচ ফি একসঙ্গে পান বলে এই পরিকল্পনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াবে বলে বিশ্বাস আরিফুলের, ‘বিসিবি ম‌্যাচ ফি দেয় টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর স্ট‌্যান্ডিং অনুযায়ী দেওয়া হবে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি। আমরা বিশ্বাস করি এতে যেই ক্রিকেটার, যে দল সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করবে তারা মাঠের থেকেই সর্বোচ্চটা আদায় করে নিতে পারবে।’ 

শুধু ম্যাচ ফি নয়, এবার থেকে চ‌্যাম্পিয়ন প্রাইজমানি ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্তরে ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ করা হয়েছে। 

বিসিবির এই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানালেন রংপুর বিভাগের অধিনায়ক নাঈম ইসলাম, ‘বিসিবির এই সিদ্ধান্তে ক্রিকেটারদের অবশ্যই খুশি হওয়ার কথা। আপনি চ্যাম্পিয়ন হলে প্রতি ম্যাচের জন্য ১ লাখ টাকা করে ম্যাচ ফি পাবেন। প্রতিটি খেলোয়াড়, প্রতিটি দলের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’ 

মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে বিশ্বাস করেন ২৮টি প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি করা নাঈম, ‘এটা তো অবশ্যই খেলার মাঠে ভালো প্রভাব রাখবে। আগে তো নম্বর ওয়ান বা নম্বর ফোরের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকতো না। এখন সেটা স্পষ্ট বোঝা যাবে। তাতে হবে কী- খেলোয়াড়, দলগুলো জেদ করেই সেরা হতে মাঠে নামবে।’ 

বিসিবি প্রথমবারের মতো প্রত‌্যেক দলে একজন করে টেকনিক‌্যাল কনসালট্যান্ট যুক্ত করছে। ওই বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছে এমন একজনই পাচ্ছেন দায়িত্ব। যার কাজ, টিম সিলেকশন থেকে শুরু করে নির্বাচকদের সঙ্গে টেকনিক‌্যাল বিষয় নিয়ে বিভাগীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে যোগাযোগ করা। 

নাঈম এই সিদ্ধান্তকেও ভালো বলছেন, ‘এটা খুবই ভালো হয়েছে। আমাদের দলে যেমন সজল ভাই আছেন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট। মাঠে ভালো খেললে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টরা আমাদের নিয়ে বোর্ডে কথা বলতে পারবেন। নির্বাচকদের খেলোয়াড় নিয়ে পুশ করতে পারবেন। আমার মনে হয় বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের যে যোগাযোগ সেই পথটা সহজ করে দেবেন তারা।’

জাতীয় লিগের খেলাগুলো ডিউক বলে খেলানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। ডিউক বলে খেলার কারণ বললেন আরিফুল, ‘পেস বলটা ভালো হয়। পুরোনো বলেও সুইং করে। এসজি বলে ৪০-৫০ ওভার পর বল নরম হয়ে যায়। এতে স্পিনাররা সুবিধা পেলেও পেস বোলাররা পায় না। কিন্তু ডিউক বলে বল পুরোনো বলেও হার্ডনেস ভালো থাকে। পেস ও স্পিন বোলাররা সমান সুবিধা পায়।’ 

এছাড়া ডিমেরিট পয়েন্টও যুক্ত করা হচ্ছে। যা এক বছর বিসিবির যে কোনও প্রতিযোগিতায় কার্যকর থাকবে।