খেলাধুলা

আপনা টাইম আ গায়া!

ভারতের জনপ্রিয় দুটি বিষয় কি? সাধারণ মানুষ থেকে বোদ্ধা যাকেই ভারত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলবেন, এক বলিউড। দুই ক্রিকেট৷ দুয়ের ভেতরে কোনটা এগিয়ে সেটা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। কিন্তু সেই সংঘর্ষ নিজ পরিবারে অশান্তি বাদে কিছু ডাকবে না৷

তবে দুয়ের বর্তমান মেলবন্ধন কিন্তু বেশ চাকচিক্যময়, ঐশ্বর্যমণ্ডিত৷ সময়ের অন্যতম সেরা বিরাট কোহলি আর নায়িকা আনুশকা শর্মার সংসারের দিকে তাকালে গোটা গল্পটা জানা যায়। দুই অঙ্গনের দুই তারকার জীবনের গল্পগুলো আলাদা। তবে বাস্তবতার লড়াইয়ে তারা যেন আদর্শ রোল মডেল। সামান্য র‌্যাম্প মডেল থেকে আনুশকার নায়িকা হয়ে আইফা আ্যওয়ার্ড অর্জন চাট্টিখানি কথা না। ঠিক দিল্লির পাড়ার ক্রিকেট থেকে পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যানের গল্পটাও একই রকম। দুজনকে পাড়ি দিতে হয়েছে কণ্টকাকীর্ণ পথ, বিরুদ্ধ স্রোত আর কাঁটা বিছানো একেকটি স্তর।

পৃথিবীর প্রত্যেক সফল মানুষ ব্যর্থতা দেখেছেন। কোমর সোজা করে দাঁড়িয়ে তারাই আবার সফল হয়েছেন। পুরো প্রক্রিয়াই হচ্ছে জীবন চক্র।

এই চক্রের ভেতর দিয়ে গিয়েছিলেন বিরাট। রান পাচ্ছিলেন না। ইনিংস বড় হচ্ছিল না। আউটের ধরণগুলো ছিল বাজে। হারিয়েছেন অধিনায়কত্বও। নানামুখী আক্রমণে ডানহাতি ব্যাটসম্যান নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন অথৈ সাগরে। সেখানে বারবার হাবুডুবু খাচ্ছিলেন কিং বিরাট। কিন্তু স্রোতে তাকে ভেসে যেতে দেননি স্ত্রী আনুশকা। ভালোবাসার মানুষকে আগলে রেখে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখান।

বরং বিরাটকে নিয়ে অনেকে আশা ছেড়ে দেন। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন একটা সময় মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। এটা বলার পর সাবেকদের কারও কাছ থেকে সহানুভূতি দূরে থাক, পেয়েছেন টিপ্পনী। এমনও শুনতে হয়েছে, পারফর্ম না করলে এসব ন্যাকা কান্নার মানে নেই।

সেই বিরাট ইতিহাস লিখলেন নতুন করে। জানিয়ে দিলেন, ‘আপনা টাইম আ গায়া...। মানে, আমার সময় চলে এসেছে...।

সীমান্তের দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে এমনিতেই আগুনের স্ফূলিঙ্গ ছড়ায়। উত্তেজনায় ভরপুর থাকে চারপাশ। চায়ের প্রতি চুমুকে যেন মিলিয়ে দেয় পথের বাক। এমন দম ছুটানো লড়াইয়ে নির্দিষ্ট একজন যদি সব আলো কেড়ে নেয় তাহলে তাকে রাজার উপাধি দেয়া হয়। কোহলি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে  ৯২ হাজার  দর্শকদের সামনে অবিশ্বাস্য সেই পারফরম্যান্সই করলেন। ১৬০ রানের তাড়ায় সতীর্থরা যখন হাল ছেড়েছেন তখন তিনি জাহাজের মাস্তুল ধরেছেন। ৫৩ বলে ৮২ রানের অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভূতপূর্ব ইনিংস। বাউন্ডারির ফুলঝুরি, সিঙ্গেল-ডাবলসের সমারোহে বিরাট করে দেন বিরাট কাজ।

বিরাট-রোহিতদের দ্বন্দের গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু এমসিজিতে বিরাট কীর্তির পর রোহিত মাঝ ক্রিজে তাকে কোলে তুলে প্রমাণ করলেন, সাম্রাজ্য বাঁচানো সেনাপতিকে কুর্ণিশ করতেও রাজার দ্বিধা নেই! বরং গৌরব আর ভালোবাসার বন্টন হয়।

পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে আনুশকার অনুপ্রেরণার, ভালোবাসার সেই স্ট্যাটাস, ‘এগিয়ে যাওয়ার কোন সহজ উপায় নেই। আবার শর্টকাট পথও হয় না। এই শব্দ গুলো তোমার আমার জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। যা আমাদের সম্পর্কেও খাটে।’

আজ বিরাট পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারতের দীপাবলি উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ করেছেন। সঙ্গে আনুশকার এক আকাশ ভালোবাসাও পেয়েছেন, ‘তুমি আমার অবিশ্বাস্য এক ভালোবাসার মানুষ। তোমার জেদ, তোমার সংকল্প এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস অভূতপূর্ব। তোমার প্রতি আমার অনেক সম্মান। তোমার শক্তি আমার অহংকার। তোমার জন্য সীমাহীন ভালোবাসা।’

জবাবে বিরাট পাশে থাকার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে লিখেছেন, ‘আমার কঠিন সময়ে প্রতিটি মুহূর্তে আমার পাশে থেকে সমর্থন জোগানের জন্য ধন্যবাদ। আমি তোমাকে পেয়ে আনন্দিত।’

সমালোচকের মুখে তালা। ভক্তদের হাসির দিন শুরু। এমন দিনটিই দেখতে চাওয়া বিরাট অবশ্য অশ্রুকণা লুকিয়ে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে নিরব থেকেছেন পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে, ‘আমি সত্যিই শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। কিভাবে কি হলো আমি জানিনা। তবে আমি যখন ধুঁকছিলাম, আপনারাই পাশে ছিলেন। কৃতজ্ঞতা।’

বিরাটের দিন শুরু। কোথায় তিনি থামেন সেটাই দেখার।