খেলাধুলা

নাটকীয় ম্যাচে ইরানকে হারিয়ে নকআউটে যুক্তরাষ্ট্র

বি গ্রুপ থেকে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় ইরানকে  হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র। 

ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একমাত্র গোলটি করেন পুলিসিক। এই জয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে গ্রুপ বি থেকে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমার্ধে ইরান খুব রক্ষণাত্মক খেলে। অন্যদিকে আক্রমণ করে একটি গোলও পেয়ে যায়। সেই গোলেই জয় নিয়ে নকআউটে যায় মার্কিনরা। সবশেষ খেলা তিন বিশ্বকাপেই যুক্তরাষ্ট্র শেষ ষোলো খেলে। ইরান দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত খেলে। বারবার আক্রমণের চেষ্টা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য গোলের দেখা পায়নি। 

প্রথমার্ধে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, দিশেহারা ইরান 

প্রথমার্ধে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, দিশেহারা ইরান। মার্কিনদের হয়ে একমাত্র গোল দিয়েছেন পুলিসিক। বিরতির আগে অফসাইডে গোল বাতিল হয় যুক্তরাষ্ট্রের। প্রথমার্ধজুড়ে একের পর আক্রমণের চেষ্টা করে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট ৯টি শট নেয় তারা। ৫টি ছিল অনটার্গেট। অন্যদিকে ইরানের মনোযোগ ছিল রক্ষণ সামলানোতে। তারা একটি শটও নিতে পারেনি। ম্যাচে ৬৫ শতাংশ সময় বল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পায়ে। 

মুহুর্মুহু আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্রের গোল

৩৮ মিনিটে পুলিসিকের গোলে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। মাঝমাঠ থেকে বাঁ দিকে দারুণ এক ক্রসে বল পান ডেস্ট। হেড দিয়ে তিনি ঠেলে দেন ডি বক্সের মাঝে। সেখানে থাকা পুলিসিক পাঠিয়ে দেন ইরানের জালে। গোল দিতে গিয়ে সংঘর্ষ হয় ইরানি গোলরক্ষকের সঙ্গে। মিনিট কয়েকের জন্য মাঠ ছাড়েন পুলিসিক। ৪৪ মিনিটে আবার ফিরে আসেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের দাপট, রক্ষণ সামলাতে ইরানের হিমশিম

যুক্তরাষ্ট্রের দাপট, রক্ষণ সামলাতে ইরানের হিমশিম। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বারবার ডিফেন্সে ইরানি দেয়ালের বাধায় আটকে যাচ্ছে। মার্কিন আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইরান। ৩০ মিনিট পর্যন্ত ৫টি শট নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্যে দুটি অনটার্গেট। এদিকে ইরান একটিও আক্রমণ করতে পারেনি।  

ইরান শুরুর একাদশ:

বেইরানভান্দ (গোলরক্ষক) রেজাইয়ান, হোসেইনি, পৌরালিগঞ্জি মোহাম্মদী, ঘোলিজাদেহ, নুরুল্লাহি, ইজাতোলাহি, সাফি, আজমাউন, তারেমি।

যুক্তরাষ্ট্র শুরুর একাদশ:

ম্যাট টার্নার, সার্জিনো ডেস্ট, টাইলার অ্যাডামস (ক্যাপ্টেন), অ্যান্টোনি রবিনসন, ইউনুস মুসা, ওয়েস্টন ম্যাককেনি, ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিক, টিম রেম,  ক্যামেরন কার্টার-ভিকার্স, টিম ওয়েহ, জোশ সার্জেন্ট।

দুই দলের সামনেই সমীকরণ স্পষ্ট 

এই ঘটনার জন্য অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেরহল্টার। সব ধরনের উত্তেজনাকে সরিয়ে রেখে নকআউটে চোখ দুই দলের। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সামনে সহজ সমীকরণ, যে দল জিতবে তারা যাবে শেষ ষোলোতে। আর হেরে যাওয়া দল নেবে বিদায়।

পয়েন্ট টেবিলের লড়াই 

‘বি’ গ্রুপে চার পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ইংল্যান্ড। তারা মুখোমুখি হবে টেবিলের সবশেষ দল ওয়েলসের বিপক্ষে। ইরান ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়, আর যুক্তরাষ্ট্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে তিনে। মানে ইরান ড্র করলেও চলবে যদি ওয়েলস ড্র করে কিংবা হারে। কিন্তু শেষ ষোলোতে খেলতে হলে জেতার বিকল্প পথ নেই আমেরিকানদের সামনে।  

ভূরাজনৈতিক যুদ্ধ থেকে ফুটবল যুদ্ধ 

বর্তমান রাজনৈতিক বিশ্বের চরম বৈরী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশ দুটির মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজমান। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে যখন বিশ্বকাপ ফুটবলে দুই দেশের স্কোয়াড মুখোমুখি হচ্ছে, তখন সেখানেও এই বৈরিতার ছাপ দৃশ্যমান। তবে দুই দলের কোচ ও খেলোয়াড়দের মনোযোগ কেবল ‘ফুটবল যুদ্ধে’।

খেলার আগেই শীতল লড়াই 

দ্বিপাক্ষিক শীতল সম্পর্ককে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই তাদের লক্ষ্য। খেলাধুলা যে দুই শত্রুকেও একই ছায়াতলে আনে, সেটা প্রমাণ করতে উদগ্রীব দুই দল। যদিও এরই মধ্যে ইরানের পতাকা থেকে ‘আল্লাহ’ নাম বাদ দিয়ে টুইট করায় যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল সংস্থার ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধের পালা 

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে মার্কিনপন্থি শাহ সরকারের পতন হলে শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা। এর ১৯ বছর পর দুই দেশের দেখা হয়েছিল বিশ্বকাপে। রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছিল ওই ম্যাচেও। ‘মাদার অব অল গেমস’ খ্যাতি পাওয়া ওই ম্যাচে ২-১ গোলে যুক্তরাষ্ট্রকে হারায় ইরান।

ইরানের চোখ শুধু মাঠেই 

তবে এবার খেলার বাইরের সব গোলযোগ দূরে রাখার প্রত্যয় ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজের কণ্ঠে, ‘আমাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র দল দারুণ, ওয়েলসের বিপক্ষে তারা চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েছিল। ইরানের ভক্ত-সমর্থকদের জয় উপহার দিতে চাই। তাই খেলার বাইরের সব প্রসঙ্গ মাথা থেকে সরিয়ে রাখছি আমরা।’