খেলাধুলা

পেলের যে ৬ রেকর্ড ভাঙতে পারবে না কেউ

না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। তার প্রস্থানের শোকে মুহ্যমান ফুটবল বিশ্ব। শোকগাঁথায় করছে নানা স্মৃতিচারণ। এমন সময়ে চলুন চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক পেলের এমন ছয়টি রেকর্ডে যেগুলো সহসাই ভাঙতে পারবে না কেউ।

৬. সাম্মানিক ব্যালন ডি’অর: পেলে তার ক্যারিয়ারে কখনো ব্যালন ডি’অর জিতেননি। তবে ২০১৪ সালে ফিফা তাকে বিশেষ সম্মাননা জানায় সাম্মানিক ব্যালন ডি’অর প্রদানের মাধ্যমে। তিনি ছাড়া আর কেউ এই বিশেষ সম্মাননা পায়নি। ভবিষ্যতে সহসাই কেউ এমন সম্মাননা পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।

৫. সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক: ক্যারিয়ার জুড়ে ১ হাজার ২৮১ গোল করা পেলে হ্যাটট্রিক করেছেন রেকর্ড ৯২টি। যা ভাঙা এক প্রকার অসম্ভবই বটে। কারণ, তার রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মোট হ্যাটট্রিক ৫৬টি। আর লিওনেল মেসির ৫৩টি। বর্তমান সময়ের এই দুই সেরা তারকার ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার পরতির দিকে। বয়স বিবেচনায় তাদের পক্ষে পেলের রেকর্ড ভাঙা তো দূরের কথা ছোঁয়াও হয়তো সম্ভব হবে না।

৪. এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট: পেলে এমনই একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি গোল করার সমানতালে অ্যাসিস্টও করেছেন। বল পায়ে তিনি ছিলেন গতিময়, শক্তিশালী, অসাধারণ, দক্ষতাপূর্ণ এবং উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন। দলে তার অনুপস্থিতি ভালোভাবে টের পাওয়া যেত। ইনজুরির কারণে যে বিশ্বকাপে তিনি খেলেননি সে বিশ্বকাপে ব্রাজিল গ্রুপপর্বের গণ্ডি পেরুতে পারেনি।

লম্বা সময়ের ইনজুরি কাটিয়ে ১৯৭০ বিশ্বকাপে ফিরে তিনি ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতেন। ওই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাতটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। যা এখনো অক্ষুন্ন। হয়তো সহসাই কেউ হয়তো এই রেকর্ড ভাঙতে পারবে না।

৩. বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক: ঘরের মাঠে উরুগুয়ের কাছে ১৯৫০ বিশ্বকাপ হারার পর ব্রাজিলের মিশন শুরু হয়েছিল ১৯৫৮ বিশ্বকাপ জেতার। সেবারের বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়েছিল ১৭ বছর বয়সী পেলেকে। তখন অনেকেই বলেছিল মারমুখী ফুটবলে কিশোর পেলের পা ভেঙে ফেলবে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা। কিন্তু সেই কিশোরই কিনা ১৯৫৮ বিশ্বকাপের সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছিলেন। ওই বিশ্বকাপের সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করার অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। যা ৬৪ বছর ধরে অক্ষুন্ন। আধুনিক ফুটবলে এতো অল্প বয়সে বিশ্বকাপের আসরে খেলে পেলের রেকর্ড ভাঙাটা বেশ কঠিনসাধ্য কাজই হবে।

২. সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ জয়: ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। তার পর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ জেতা হয়তো কঠিন হবে বর্তমান সময়ের ফুটবলে।

১. একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয়: ফুটবল বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি তিন-তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। এবার যদি এমবাপ্পে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিততেন তাহলে তার রেকর্ড ভাঙার একটি সম্ভাবনা তৈরি হতো। কিন্তু ফ্রান্স রানার্স-আপ হওয়ায় পেলের এই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ১৯৫৮ সালে প্রথম, ১৯৬২ সালে দ্বিতীয় এবং ৮ বছর পর ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের হয়ে তিনি জিতেছিলেন তৃতীয় বিশ্বকাপ এবং গড়েছিলেন অনন্য এক কীর্তি। যা ৫২ বছর ধরে অক্ষত আছে।

২০১৩ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ পেলেকে সর্বোচ্চ গোল ও সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডের স্বীকৃতি দিয়ে সনদপত্র প্রদান করেছিল।

এছাড়া, যৌথভাবে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ গোলদাতা: ২০২২ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত পেলে দীর্ঘ ৫১ বছর এককভাবে ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। কাতার বিশ্বকাপে নেইমার তাকে ছুঁয়ে ফেলেন। নেইমার ১২৪ ম্যাচ খেলে করেন ৭৭ গোল। আর পেলে ৭৭ গোল করেছিলেন মাত্র ৯২ ম্যাচ খেলে। নেইমার যদি জাতীয় দলের হয়ে আর না খেলেন তাহলে পেলের এই রেকর্ডটি অধরাই থাকবে হয়তো। আর খেললে ভেঙে যাবে পেলের একটি কঠিনসাধ্য রেকর্ড।