খেলাধুলা

ইফতেখারের সেঞ্চুরির স্বপ্ন পূরণে সাকিবের ‘ছাড়’  

৪৬ রানে নেই ৪ উইকেট। রংপুরের হারিস রউফ, হাসান মাহমুদদের তোপে পুড়ছিল ফরচুন বরিশাল। সেখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন সাকিব আল হাসান ও ইফতেখার আহমেদ।

থিতু হতে সময় নিলেন। জানতেন শেষে তাণ্ডব চালিয়ে রান পুষিয়ে দিতে পারবেন। প্রতিপক্ষকে সমীহ করে দুজনই শান্ত থাকলেন। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলেন খোলস থেকে। একটা-দুইটা বাউন্ডারি মেরে খুললেন হাত। কাটালেন জড়তা। এরপর আর তাদের আটকাতে পারেনি রংপুর রাইডার্সের বোলাররা।

১২ ওভারে বরিশালের রান ছিল ৯৪। সেখান থেকে শেষ ৮ ওভারে ১৪৪ রান তুলে নেয় তারা। দলীয় রান ২৩৮। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ইফতেখার সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র ৪৫ বলে। ৬ চার ও ৯ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। ২৯ বলে ফিফটিতে পৌঁছান এ ব্যাটসম্যান। পরের পঞ্চাশ পেতে খেলেন মাত্র ১৬ বল। সাকিবও এগিয়েছেন সমান তালে। ৪৩ বলে করেন ৮৯ রান। ৩৩ বলে ফিফটির পর পরের ৩৯ রান করেন কেবল ১০ বলে। সাকিব হাঁকান ৯ চার, ৬ ছক্কা।

তবে সাকিবেরও এই ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ১৮ ওভারে সাকিবের রান ছিল ৭২, ইফতেখারের ৭০। সেখানে দুজনের মধ্যে চলে সেঞ্চুরির আলাপ। ইফতেখার সাকিবকে সেঞ্চুরি পাওয়ার স্বপ্নের কথা জানান। সাকিবও তাকে দেন প্রেরণা, সাহস। বলেন, সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে।

প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেটে সেঞ্চুরি আছে ইফতেখারের। চট্টগ্রামে পেয়ে গেলেন টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। যা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে সাকিবের ‘ছাড়ে।’ শেষ ১২ বলের ৭টিই ইফতেখারকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেন সাকিব। নিজে করেন ৫টি। পাকিস্তানের হার্ডহিটার এই ৭ বলে ৩০ রান তুলে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছান। সাকিব ৫ বলে ১৭ রানে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

সেঞ্চুরি পাওয়ায় সাকিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করেননি ইফতেখার। দুজনের কি আলাপচারিতা হয়েছিল তা জানান ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে,‘পেশাদার ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে সব ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করার। সাকিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল সেঞ্চুরি নিয়ে। বলেছিলাম,‘‘আমার স্বপ্ন সেঞ্চুরি করার।’’ সাকিব আমাকে সাপোর্ট করে বলে,‘‘যেভাবে আপনার ইচ্ছা খেলে যান।’’

‘যখন ৭০ রানে ছিলাম তখন দুজনের কথা হয়েছিল। তখনই তাকে বলেছিলাম,‘আমি শতরানের পেছনে ছুটি। যত বেশি স্ট্রাইক পাবো তত ভালো।’ সাকিব বলেছিল,‘‘আমি আপনাকে সাপোর্ট করছি। আপনি ছুটতে থাকেন।’’’- যোগ করেন ইফতেখার।

৬ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি পাওয়ার রেকর্ড খুব একটা নেই। বিপিএলে এবারই প্রথম। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটাই সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে বলে জানালেন ইফতেখার,‘এরকম নেই (তাণ্ডব চালানো ইনিংস)। তবে ভালো ইনিংস বেশ কয়েকটিই খেলেছি। কিন্তু এটা আমার জীবনের সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে। কারণটা হলো আমি খুব উপভোগ করে ইনিংসটি খেলেছি। আবার দলও ভুগছিল। ৩-৪ উইকেট আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করতে এরকম ইনিংস খেলা, জয় উদযাপন করা বড় বিষয়। আনন্দের বিষয়। দল জেতার থেকে বড় কিছু নেই।’

দুজনের পঞ্চম উইকেটে আসে ১৯২ রান। যা প্রতিযোগিতামূলক টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম উইকেটে বিশ্ব রেকর্ড। এর আগে অ্যাডাম হোস ও ড্যান মউসলি মিলে ১৭১ রান করেছিলেন। তাদের ছাপিয়ে সাকিব-ইফতেখার এখন শীর্ষে। রেকর্ডের কথা জানতে না ইফতেখার। সংবাদ সম্মেলনে জানানোর পর তার আনন্দ দ্বিগুন হয়ে যায়,‘এটা তো জানতাম না, এটা তো আনন্দের খবর।’

যে কোনো বড় অর্জনই আসে সঠিক পরিকল্পনায়। ইফতেখারের ইনিংসটিও সেভাবে সাজানো। স্পিনারদের টার্গেট করেই এগিয়েছিলেন তিনি। ৯ ছক্কার ৬টিই মেরেছেন স্পিনারদের। এছাড়া স্বদেশী হারিস রউফকেই মেরেছেন ৩টি। স্পিনারদের নিয়ে ইফতেখার বলেন,‘স্পিনারদের টার্গেট করেছিলাম। অফস্পিনাররা যখন বোলিংয়ে এসেছিল তখনই আমার মাথায় চিন্তা এসেছিল যে ওদের বিপক্ষে যতটা সম্ভব রান তুলতে হবে। কারণ টি-টোয়েন্টিতে আপনি এমন ওভার পাবেন যেখানে আপনি যা চাইবেন তাই হতে পারে। ওখান থেকেই আমি আসলে ছন্দ পাই।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, শামীম পাটোয়ারীর ২৫ রানের ওভারটিই ইফতেখারকে নতুন করে জীবন দেয়। এরপর শুধু বল গেছে সীমানার বাইরে। ইফতেখার উড়েছেন সেঞ্চুরির আকাশে।