খেলাধুলা

ফিরছেন হাথুরুসিংহে, মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেশের ক্রিকেটে

‘দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ হতে পেরে সম্মানিতবোধ করছি। প্রথম মেয়াদে দেশটির মানুষের উষ্ণ ভালোবাসা ও সংস্কৃতি উপভোগ করেছি। অপেক্ষায় আছি আরেকবার ছেলেদের সঙ্গে কাজ করা এবং তাদের সাফল্য উপভোগ করার জন্য।’ –দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন।

অথচ পুরোনো গুরুকে ফিরে পাওয়ার খবর যখন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার ও দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পান তখন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বলেন, ‘নো কমেন্টস।’ সাকিবের অভিব্যক্তিতে অনেক কিছু পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। কারণটা তো অজানা নয় কারোরই।

২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিন বছর দায়িত্ব পালন করার পর যখন হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ ছাড়েন তখন সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে একগাদা অভিযোগ করেছিলেন। ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও নিবেদনের ঘাটতি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন হাথুরুসিংহে। বিশেষ করে দেশ ও দলের প্রতি সাকিব আল হাসানের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শ্রীলঙ্কান এ কোচ।

তাকেই আবার বোর্ড ফিরিয়ে আনছে সাকিব, তামিম, মুশফিকদের ‘হেড মাস্টার’ বানিয়ে। হাথুরুসিংহের পর বাংলাদেশের কোচিং স্টাফে যুক্ত হয়েছিলেন ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস ও দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডমিঙ্গো। দুজনই কোচ ছিলেন বেশ পেশাদার। ক্রিকেটারদের স্বাধীনতা দিয়ে তাদের খেলাটা বুঝতে দেওয়ার অবারিত সুযোগ দিয়েছিলেন। তবে তাদের আচরণ ছিল ‘নরম-সরম’।

ক্রিকেটারদের ‘শাসন’ করতে পারবেন এমন কাউকে কোচ হিসেবে পছন্দ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের। সেজন্য বিশ্বকাপ শেষে হাথুরুসিংহকে সিডনিতে ডেকে বৈঠকও করেছিলেন। এছাড়া ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস দুটি শব্দ বলেছিলেন স্পষ্টভাবে, ‘ইমপ্যাক্টফুল ও ইনফ্লুয়েন্সিয়াল।’ মানে ড্রেসিংরুমে প্রভাব রাখতে পারে এমন কোচকে চায় বিসিবি। অনেকটা কড়া হেডমাস্টারের মতো। আর এই কড়া হেডমাস্টার বলতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

তবে তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেশের ক্রিকেটে। কেউ বলছেন, পুরোনো অভিজ্ঞতার কারণে হাথুরুসিংহের কাজ করা সুবিধা হবে। কেউ বলছেন, এবার সাফল্য পেতে ঘাম ছুটবে কোচের।

২০১৪ সালের মে মাসে হাথুরুসিংহে যখন দায়িত্ব নেন তখন নির্বাচক কমিটির প্রধান ছিলেন ফারুক আহমেদ। শুরুর দিকে সম্পর্ক ঠিকঠাক থাকলে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। কাজের জায়গায় আপোষ না করে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন ফারুক আহমেদ। এবার হাথুরুসিংহে ফেরায় সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলেই মনে করেন তিনি, ‘হাথুরুসিংহে কিন্তু ভালোভাবে আমাদের দেশ থেকে যাননি। পদত্যাগ করলেও ক্রিকেটারদের নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। যেগুলো পরে প্রকাশ পেয়েছিল। সেগুলো কিন্তু কেউ-ই ভালো করে নেয়নি। এরকম কাউকে ফিরিয়ে আনা অবশ্যই ঝুঁকি। কারণ, দুই পক্ষের ভেতরেই অতীতের বিষয়গুলো কাজ করবে।’

সঙ্গে খেলোয়াড় নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে সেই কথাও জানিয়ে রাখলেন, ‘হাথুরুসিংহকে কিন্তু আগে দেখেছি একক কর্তৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। কারো সিদ্ধান্তকেই কিন্তু তেমন আমলে আনতেন না। এখন সিনিয়ররা আরও সিনিয়র হয়েছেন। নতুন প্রজন্মও বড় হয়েছেন। এখন আগের মতো চলতে থাকলে হয়তো কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে। এজন্য সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নয়ন করতেই হবে।’

দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশ্বাস, চন্ডিকা আবার ফিরে আসলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিরবে স্বস্তি। ক্রিকেটারদের কড়া শাসনে মিলবে ফল। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন দেশের ক্রিকেটের নামকরা স্থানীয় কোচ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, ‘ছেলেদের শাসন করতে হবে কেন সেটা তো আগে জানা জরুরি। এই পর্যায়ে এসে প্রত্যেকে প্রত্যেকের খেলাটা বোঝে। তাদের শুধুমাত্র শুধরে দিতে হবে। এটাই তো। এখানে শাসনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। আর কোচের যদিও মোটিভেশন ওরকম থাকে তাহলে দূরত্ব তৈরি হবে। যাতে ফাঁটল ধরবে জাতীয় দলে।’

৫৪ বছর বয়সী কোচের পুনরায় আগমণকে ভালো চোখেই দেখছেন কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলেছেন, ‘একটা বিষয় কাল বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন তা হলো, তাকে ফুলটাইম পাওয়া যাবে। বর্তমান সময়ে ফুলটাইম কোচ পাওয়া কিন্তু কঠিন। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে চাইলেই প্রায় সমপরিমাণ অর্থ আদায়ের সুযোগ আছে। সেদিক থেকে হাথুরুসিংহে গুড চয়েজ। আরেকটি বিষয় যেটা বলা হচ্ছে পূর্বের অভিজ্ঞতা। সত‌্যি বলতে, এখানে প্রত্যেকে পেশাদার। কেউ অপেশাদার নন। সবাই  জাতীয় দলের ভালোটাই চাইবে। হাথুরুসিংহে আগে কাজ করে যে অভিজ্ঞতা পেয়েছে সেটা তার কাজে লাগবে। ঠিক তেমননি বাকিদেরও। তার হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট একটা পর্যায়ে গিয়েছিল। এখন সেখান থেকে নেক্সট লেভেলে যেতে হবে। সেটা দুই পক্ষেরই চ‌্যালেঞ্জ।’