বিশ্বাস থেকে জন্ম হয় নতুন সম্ভাবনা। সেই জোরেই চলে নিজেকে গড়ার প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ায় উত্থান-পতন থাকে, থাকে উঠা-নামা। কিন্তু লক্ষ্যে স্থির থাকলে এক সময় ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছা যায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে পরবর্তী ‘সাকিব আল হাসান’ কে হবেন তা নিয়ে চলে অনেক আলোচনা। অনেকেই মনে করেন মেহেদী হাসান মিরাজের সেই অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। যুব ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের সুপারস্টারকে অনুসরণ করে আসছেন মিরাজ। এখন তার সঙ্গে খেলছেন। হয়েছেন ভরসার পাত্র।
মিরাজ নিজেও বিশ্বাস করেন, পরবর্তী সাকিব হতে পারবেন তিনি। সেই বিশ্বাস থেকেই নিজেকে গড়ছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মিরাজ। হোয়াইটওয়াশের আনন্দের রেশ এখনও তার কাটেনি। সিরিজ নিয়ে নানা কথা বললেন গণমাধ্যমে। তার কথা শুনেছে রাইজিংবিডি-
ইংল্যান্ডকে হারানোর পেছনে কোচ-অধিনায়ক কিভাবে প্রেরণা জুগিয়েছেন?
মেহেদী হাসান মিরাজ: আমরা ফল নিয়ে চিন্তা করিনি। আমরা চিন্তা করেছি প্রক্রিয়াটা কীভাবে উন্নত করা যায় এবং প্রক্রিয়ায় থাকা যায়। ফল এটা আউটকাম, এটা দিন শেষে হবে। তবে আমরা যদি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করি, তাহলে ফল কখনও আসবে না। তাই আমরা মাঠে ওভাবেই চেষ্টা করেছি। ব্যাটসম্যানরা রান করার জন্য, বোলাররা ভালো বল করার জন্য এবং ফিল্ডাররা সহযোগিতা করার জন্য। ওভারল টিম কম্বিনেশন ভালো ছিল এবং আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি বলেই জিতেছি।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রক্রিয়ার পার্থক্য?
মেহেদী হাসান মিরাজ: আমরা কিন্তু ওয়ানডেতে অনেক দিন ধরেই অনেক ভালো ক্রিকেটে খেলে আসছি। সবাই বলে, আমরা টি-টোয়েন্টিতে অত ভালো দল নই বা টেস্টে আমরা ভালো করতে পারি না। আমি মনে করি, এটা শুরু হয়েছে আমাদের। টি-টোয়েন্টিতে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে সিরিজ জয় করেছি ও হোয়াইটওয়াশ করেছি। তবে ছোট ছোট যে জিনিসগুলো, দলের ভেতর অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার এসেছে। যারা অনেক সাহসী, মেধাবী। তারা যদি এই প্রতিভাটা মাঠে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ভালো করবে। আমার মনে হয়, প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা সবাই ভালো ইউটিলাইজ করেছে। সবাই যেভাবে কঠোর পরিশ্রম করছে ও অনুশীলন করছে, এটা আমাদের দলকে অনেক ওপরে নিয়ে যাবে এবং খুব ভালো মোটিভেট করে।
দুই সিরিজের প্রক্রিয়ায় কোন জায়গায় পরিবর্তন এসেছে?
মেহেদী হাসান মিরাজ: ওয়ানডেতে আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে গিয়েছি। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচটা খুব কাছে গিয়ে হেরেছিলাম। আরেকটা ম্যাচ জিতলে পারলে সিরিজ জিততাম। তাছাড়া ওয়ানডেতে কিছু জায়গায় ঘাটতি ছিল, সেগুলো যেন টি-টোয়েন্টিতে পুনরাবৃত্তি না হয় তা চেষ্টা করেছি। আমরা ইংল্যান্ডকে নিয়ে ভালোমতো পরিকল্পনা করেছিলাম। কোন জায়গায় কীভাবে বোলিং করব, কোন ব্যাটসম্যানকে কীভাবে করব। ব্যাটসম্যানরাও পরিকল্পনা করেছিল যে কোন বোলারকে কীভাবে খেলবে। সবাই পরিকল্পনা করেছি। অনেক সময় পরিকল্পনা সফল হয়, অনেক সময় হয় না। ওয়ানডেতে হয়তো পরিকল্পনায় আমরা ছোট ছোট কিছু ভুল করেছি। আমরা মানুষ তো, আমরা ভুল করবই। পরে টি-টোয়েন্টিতে যখন এসেছি, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছি এবং বাস্তবায়ন খুব ভালো হয়েছে। সেজন্য আমরা টি-টোয়েন্টিতে সফল হয়েছি।
আপনার করা রান আউট গেম চেঞ্জ করেছে কি না?
মেহেদী হাসান মিরাজ: প্রত্যেকটা মোমেন্টামই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অবশ্যই এটা পার্ট অফ গেইম। রান আউট সবসময় গেম চেঞ্জ করে দেয়। এটা আমরা সবসময় দেখি। একটা মোমেন্টাম চলে আসে। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা জিনিসই আমাদের মোমেন্টাম ছিল। বিশেষ করে ওপেনাররা যখন শুরুর দিকে রান করেছে, ওই উইকেটে হয়তো শুরুর দিকে রান করা সহজ ছিল না। পরে মোস্তাফিজের ব্রেক থ্রু-টা, ওই সময় যে সেট ব্যাটসম্যানকে আউট করে দিয়েছে এবং আমার রান আউটটা। তারপর আবার হাসান মাহমুদ বল করেছে, তাসকিন বল করেছে। ওভারল আমি মনে করি কালকের ম্যাচটা টিম অনুযায়ী খেলা হয়েছে এবং সবাই কন্ট্রিবিউট করেছে। এজন্য আমরা ম্যাচ জিতেছি।
সাকিব হতে পারবেন কি না বিশ্বাস করেন?
মেহেদী হাসান মিরাজ: বিশ্বাস না করলে তো যেতে পারব না। অবশ্যই বিশ্বাস করি।
সাকিবের জায়গায় একই ভূমিকা মিরাজকে দেখব কি না?
মেহেদী হাসান মিরাজ: একটা জিনিস দেখেন, দলে অলরাউন্ডার যত থাকবে, দলের অবস্থা তত ভালো থাকবে। দলের কম্বিনেশন করতে অনেক ভালো হয়। আর আমরা তো জানি, সাকিব ভাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এখন, সবসময়ই ছিল। তাকে দেখেই কিন্তু আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং যখন আমরা চোখের সামনে বিশ্ব মানের ক্রিকেটার দেখি, তখন অবশ্যই আমাদেরও চাহিদাটা থাকে যে, আমরাও একদিন হবো। দিন শেষে, দলের ভেতরে যত বেশি ম্যাচ উইনিং ক্রিকেটার থাকবে... আমরা যদি বিশ্বাস করি, একটা ক্রিকেটার আছে, ওই ম্যাচ জেতাতে পারে, এটা হলে দল হয়তো একদিন জিততে পারে। কিন্তু ডে বাই ডে জিততে পারবে না। তবে আমাদের দলের ভেতরে এখন যে কোনও দিন যে কেউ জেতাতে পারে। অবশ্যই নিজের কাছে ভালো লাগছে, যেহেতু ব্যাটিং ভালো হচ্ছে। চেষ্টা করব ডে বাই ডে উন্নতি করার।
আপনি টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত নন…
মেহেদী হাসান মিরাজ: টি-টোয়েন্টিতে আমি অনেক বছর পর খেলছি, আলহামদুলিল্লাহ। টি-টোয়েন্টিতে কিন্তু আপনি প্রতিদিন পারফর্ম করতে পারবেন না। আপনার কন্ট্রিবিউশনটা এমন হবে যে, ছোট ছোট কন্ট্রিবিউশনগুলো অনেক বড় হয়ে যায় দলের জন্য। আমি ওভাবেই চেষ্টা করেছি যেন এমন ছোট ছোট কন্ট্রিবিউট করি, যেটায় দলের সাহায্য হয়, দল জেতে। দেখেন আমি কালকে কিন্তু হয়তো কিছুই করতে পারিনি। ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি, বোলিংয়েও শুরুর দিকে ভালো করতে পারিনি। তবে চেষ্টা করেছি আমি কীভাবে দলে অবদান রাখতে পারি। দল ফল পেলেই কিন্তু আমরা সবাই খুশি থাকি, সবার অনেক ভালো লাগে নিজেদের ভেতর। আমি অনেক ভালো খেললাম কিন্তু দল জিতল না, এতে কোনও লাভ নেই। আমি ওটাই চেষ্টা করি সবসময়।
তরুণ দল নিয়ে নতুন শুরু হলো। এই ছন্দ ধরে রাখার কাজটাও তো চ্যালেঞ্জিং?
মেহেদী হাসান মিরাজ: আমাদের প্রতিটা স্টেপই একটা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন। অবশ্যই উন্নতির শেষ নাই। ডে বাই ডে উন্নতি করতে হবে। আমি যদি নিজেকে একটা জায়গায় রাখি, তাহলে কিন্তু আমি ওপরে যেতে পারব না। চ্যালেঞ্জ এটাই, নিজেকে প্রতিনিয়ত চেঞ্জ করতে হবে এবং উন্নতি করতে হবে।