খেলাধুলা

জন্মদিনে সাকিব আনলেন ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’

‘রোজার শুরু, জুম্মার দিন, আজ আর আমার জন্মদিন'-এভাবে ছোট্ট ছড়া দিয়ে বক্তব্যের শুরু করলেন সাকিব আল হাসান। জন্মদিনের দিন মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রাণত রোগীদের পাশে থাকতে ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনে’র যাত্রা শুরু করলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

শুক্রবার, ২৪ মার্চ সাকিব পা দিয়েছেব ছত্রিশে। এই দিনে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে নিয়ে যাত্রা হয় ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের।

এ ছাড়া ফাউন্ডেশনের সদস্য বর্গ, বিসিবি পরিচালক ওবেদ নিজাম, নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও সাবেক বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন।

সাকিবের নামে ফাউন্ডেশন হলেও মূল উদ্যোক্তা হচ্ছেন সাবেক ক্রিকেটার আব্দুল্লাহ আল কাফি। যিনি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন। এই ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন কাফি।

কাফি-সাকিব ছাড়াও এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা সদস্যরা হলেন বিকেএসপির দুই কোচ নাজমুল আবেদিন ও সারোয়ার ইমরান এবং বিকেএসপির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক, নাইম ইসলাম, সোহরাওয়ার্দি শুভ, নাসিরুল ইসলাম। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা সাবেক ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেলও ছিলেন এই উদ্যোগের পাশে।

ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী যাত্রার সঞ্চালক ছিলেন সাকিবদের গুরু ফাহিম। ২০১৬ সালে মূল উদ্যোক্তা কাফির বিকেএসপির সহপাঠী ও বন্ধু জাফর সাদেক রাসেল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর মূলত এমন উদ্যোগের সূচনা হয়। শেষ পর্যায়ে গিয়ে রাসেলের ক্যান্সার ধরা পড়ায় চিকিৎসারও সুযোগ পাননি। অন্য কারো যাতে এমন না হয় সেই ভাবনা থেকে সচেতনা বৃদ্ধি ও পাশে থাকার তাগিদ নিয়ে গঠিত হলো আজকের এই ফাউন্ডেশন।

কাফির মস্তিস্কপ্রসূত এই পরিকল্পনা আরেক ক্রিকেটার নাঈম ইসলামের মাধ্যমে আসে সাকিবের কাছে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার মানুষের পাশে থাকার এমন উদ্যোগের কথা শুনে এগিয়ে আসেন। লিখিত বক্তব্যে কাফির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করেননি সাকিব।  

‘আমি ধন্যবাদ দিতে চাই কাফি ভাইকে। এখানে নামটা আমার থাকলেও, উদ্যোগটা আসলে তার ছিল। কাফি ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ। এরকম একটা ভালো কাজে আমাকে জড়ানোর জন্য।’

নিজের জন্মদিনে এমন উদ্যোগ শুরু করতে পারা সাকিব বলেন, ‘রোজার শুরু, জুম্মার দিন, আজ আর আমার জন্মদিন। এক দিনে সব মিলে গেছে তাই দিনটি আমার জন্য আলাদা। আলাদা আরও একটি কারণে, আমাদের এই নতুন উদ্যোগের কারণে। আমি অনেক সময় অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িয়েছি, চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে থাকার। এবার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিছু করতে চাই। এই ক্যান্সার ফাউন্ডেশন করার পেছনে সত্যিকার অর্থে সেটিই কারণ।’

‘ক্যান্সারকে সবাই মরণব্যাধি বলে। তবে এর ভয়ে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, মানুষকে সাহস দিতে হবে, আশা দেখাতে হবে। আমরা সবাই মিলে সেই কাজটি করতে চাই। যত ক্ষুদ্র পর্যায়ে থেকেই হোক না কেন’-যোগ করেন সাকিব। 

ক্যান্সার নিয়ে সাকিবের নিজেরও রয়েছে বিরুপ অভিজ্ঞতা। গত দুই বছরে তার সহধর্মিনী উম্মে আহমেদ শিশিরের বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। শিশির অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও যেন ছিলেন। ভিডিও বার্তায় নিজের ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা-মার কথা বলেছেন, বলেছেন ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের গুরত্ব নিয়েও।

ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান নির্বাচক বাশারের বড় ভাই কাজী ইকরামুল বাশার মারা যান ২০১। ক্যান্সার ফাউন্ডেশন করায় এর সঙ্গে জড়িত থাকা সবাইকে সাধুবাদ জানান তিনি। সাকিবের ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি আবার  বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতিরও সভাপতি নাজমুল হাসান।

বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সচেতনতা, শুরুর দিকে ধরতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্যান্সার হলেই জীবন শেষ, এখন আর এমনটা নেই। শুরুতে ধরতে পারলে, ডায়াগনসিস করতে পারলে অনেকে বেঁচেও যাচ্ছে। যেটা বললাম সচেতনতা... যেটার সঙ্গে সাকিবের নাম আছে, সচেতনতা তৈরির জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারে না। বাংলাদেশের সাকিবের নাম অবশ্যই একটা প্লাস পয়েন্ট, এই সচেতনতার উদ্যোগটা সফল করার জন্য।’

‘আমি শুধু এটুকু বলব, সাকিবের এই উদ্যোগ একটা মহতী উদ্যোগ। অবশ্যই আমাদের সাহায্য থাকবে যেকোনো সময়, যেখানে যা লাগে। একটা সুবিধা আছে আমি আবার ওষুধ শিল্প সমিতিরও সভাপতি। অবশ্যই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি যারা ওষুধ বানাচ্ছি বাংলাদেশে, তারা তোমাদেরকে; এই প্রতিষ্ঠানকে যখন যা দরকার সাহায্য করবে। এই ব্যাপারে আমি কথা দিচ্ছি। আমার তরফ থেকে শুধু সাকিব নয়, এটার সঙ্গে যারা যারা জড়িত আছে, সবাইকে বলে রাখছি। পূর্ণ সমর্থন সবসময় পাবে’-পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে এভাবেই বলেছেন নাজমুল হাসান।

প্রাথমিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ক্যান্সার নিরুপায় নিয়ে কাজ করবেন তারা। ধীরে ধীরে একটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা রয়েছে তাদের।

ফাউন্ডেশনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সাকিব বলেন, ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন সেইসব মানুষের জন্য কাজ করতে চায়, যাদের সামর্থ্য নেই ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসাকে এগিয়ে নেওয়ার, যাদের সামর্থ্য নেই ক্যান্সার ডায়াগনসিস করার। আমরা যদি একজন, একশ জন বা এক হাজার জন মানুষকেও সাহায্য করতে পারি, সেটিই আমাদের জন্য বড় অর্জন হবে আমি মনে করি।’

‘আমাদের স্বপ্নটা বড়, একটা ক্যান্সার হাসপাতাল করার। যেখানে পরিপূর্ণ আধুনিক চিকিৎসার সকল সুবিধা থাকবে। তবে একদমই কম খরচে। মানুষ যে হাসপাতালে এসে হাসি মুখে বাড়ি ফিরবে। গর্ব করে বলবে, বাংলাদেশেও এমন একটি হাসপাতাল আছে। যা কি ছড়িয়ে পড়বে দেশ ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন পর্যায়ে। স্বপ্নটা বিশাল। হয়তো এখনই সম্ভব নয়। তবে একদিন নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ্। তার আগে চাই একটা ডায়াগনসিস সেন্টার করতে। তারও আগে চাই মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে। আমার কাছে মনে হয় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’