উইকেটে জমাট হয়ে ছিলেন বিরাট কোহলি। আগের দিনের শেষ বিকেলের তার ব্যাটের স্নিগ্ধ রূপের দেখা মিলছিল শেষ দিনের সকালে। ওভালে রৌদ্রজ্জ্বল দিনের শুরুতে থেকে নিজের চেনা চেহারায় ভারতের সাবেক অধিনায়ক।
মনে হচ্ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বা টেস্ট ফাইনালের মঞ্চে তার ব্যাট তরবারী হয়ে আক্রমণ চালাবে অসি বোলারদের ওপর। কিন্তু স্কট বোলান্ড ওভালের ২২ গজে যা করে দেখালেন তা স্রেফ কল্পনাকেও হার মানায়। নিখুঁত পরিকল্পনা, স্থির মনোভাব, অসম্ভব ধৈর্য আর নিজের বোলিংয়ে এতোটা বিশ্বাস রাখা সত্যিই অকল্পনীয়।
পন্টিংয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সেটআপ।’ সেটা কি? বিরাট কোহলিকে আউট করার সেটআপ। যা পরিকল্পনার অংশ।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারের খেলা চলছে। বল তখন পুরোনো হবার পথে। অসি বোলাররা বল রিভার্স করার জন্য একপাশে উজ্জ্বলতা টিকিয়ে রেখেছিল। আরেকপাশে একেবারেই বিবর্ণ। কামিন্স, স্টার্ক, বোলান্ড কিংবা গ্রিন প্রত্যেকেই বল দুদিকে সুইং করাতে পারেন, ব্যাটসম্যানদের খেলতে বাধ্য করাতে পারেন। পারেন উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স, অন্যান্য সুবিধা আদায় করতে।
আধুনিকে ক্রিকেটে যেটা হয়, বোলাররা বাতাসের সুবিধা কাজে লাগায়। বাতাসের বিপরীতে বল করা কঠিন। সেজন্য বাতাসের প্রবাহ যেদিকে বহমান সেদিকে হালকা বল সুইং করান। বাকিটা বাতাসেই কাজ করে। ব্যাটসম্যানদের জন্য এরকম বিরুদ্ধ কন্ডিশনে খেলা কঠিন। তবে ওভালে আজ এমন কিছু ছিল না। ছিল না বলেই বোলারদের বাড়তি কাজ করা লেগেছে।
কোহলিকে আউট করা মানে ভারতের ব্যাটিং আক্রমণে ধস নামানো। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বোলান্ড সেই কাজটাই করেছেন। ওভারের প্রথম দুই বল লেন্থ বল করে চতুর্থ ও পঞ্চম স্টাম্প বরাবর করেছেন। তৃতীয় বল ফুলার লেন্থ দিয়েছিলেন অফস্টাম্পের অনেক বাইরে। কোহলি এক্সপেনসিভ ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তৃতীয় স্লিপে। বোলান্ডের বোলিং পরিকল্পনা কেমন ছিল ধারাভাষ্য কক্ষে বিশ্লেষন করেছেন রিকি পন্টিং।
পন্টিং বলেন, ‘বিরাট কোহলিকে আউট করার জন্য যে সেটআপ বোলান্ড করেছে তা নিয়ে কথা বলি। তিনটি ডেলিভারি দেখুন। প্রথমটা একটু বাড়তি বাউন্স পেয়েছিল। দ্বিতীয়টা বল ভেতরে ঢুকেছিল এবং তৃতীয়টা ফুলার ও ওয়াইডার। যা লাইনে ছিল কিন্তু বল বাইরের দিকে টানছিল।’
‘চলুন এবার আমরা সিম এবং বল গ্রিপের পরিবর্তন দেখি। প্রথমটা ক্রস সিমের ডেলিভারি ছিল যা লেন্থে পড়ে বাড়তি বাউন্স আদায় করে। বিরাট বলটা দেখে ছেড়ে দেয়। দ্বিতীয়টা সিমের ওপর ডেলিভারি। লেন্থ বল ছিল। কিন্তু বাতাসে বাঁক খেয়ে ভেতরে টেনেছে। কিন্তু তৃতীয়টা দেখুন। বলের অ্যাঙ্গেল-ই স্লিপ বরাবর। বল পড়েই ব্যাটসম্যানের থেকে দূরে সরে যাবে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আগের বলটা ভেতরে ঢুকছিল। পরের বলটা একইরকম হতে পারে সেই ধারণা ছিল। কিন্তু বল বাইরের ছিল, অনেকটা আউট সুইঙ্গারের মতো। তাই বিরাট ড্রাইভ খেলতে যায়। হাই ক্লাস বোলিং। টপ ডেলিভারি এবং স্লিপে স্মিথ দারুণ ক্যাচ নিয়েছিল।’
‘বিরাটকে আউট করার জন্য দারুণ সেটআপ ছিল। প্রতিটি বলে সিম পরিবর্তন। বৈচিত্র্য বোলিংয়ে বোলান্ড যে পারদর্শী তা বুঝিয়ে দিয়েছে। সামান্য সিমের অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন হয়েছে। তাতেই তিনটি বল ভিন্নভাবে নিজের কারিশমা দেখিয়েছে। প্রতিটি বল আলাদা আলাদাভাবে ছুঁড়েছে। যা ব্যাটসম্যানকে বুঝতেই দেননি। হাই ক্লাস বোলিং।’
৪৪ রানে দিন শুরু করা কোহলি আজ থেমে যান ৪৯ রানে। ভারত শেষ দিন ৭০ রান তুলতেই হারায় ৭ উইকেট। তাতে অস্ট্রেলিয়ার হাতে উঠে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দণ্ড। ক্রিকেটের একমাত্র দল যারা আইসিসি আয়োজিত সবকটি টুর্নামেন্ট জিতেছে। বিরাট কোহলিকে থামিয়ে এই জয়ের অন্যতম রূপকার বোলান্ড।