খেলাধুলা

নেলসনের ব্যাটিং স্বর্গে সেই পুরোনো গল্পের পুনরাবৃত্তি

রিশাদ হোসেনকে হাঁটু গেঁড়ে স্লগ সুইপে লং অন অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন টম ব্লান্ডেল। ছক্কা! নিশ্চিত হলো নিউ জিল্যন্ডের জয়। এক ম্যাচ হাতে রেখে সঙ্গে নিশ্চিত হলো ওয়ানডে সিরিজও। 

নেলসনের সবুজে মোড়ানো ব্যাটিং স্বর্গ স্যাক্সটন ওভালে সৌম্য সরকারের অসাধারণ অনন্য সেঞ্চুরি ম্লান হয়ে যায় রান তাড়ায় নেমে নিউ জিল্যান্ডের নিখুঁত, হিসেবি ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশের ব্যাটে-বলে সেই একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। ব্যাট হাতে কিছু রানের আক্ষেপ, আর বল হাতে নির্বিষ বোলিং। 

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে সৌম্যর দেড়শ রানের ইনিংসে ভর করে ২৯১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। রান তাড়া করতে নেমে ২২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নিউ জিল্যান্ড। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের পকেটে পুরলো কিউইরা।

নিউ জিল্যান্ডকে দারুণ শুরু এনে দেন রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং। ৩৩ বলে ৪৫ রান করে রাচিন আউট হলে ইয়াংয়ের সঙ্গী হন হেনরি নিকোলস। দুজনে ১২৮ রানের জুটি গড়ে কার্যত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন। 

টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি থেকে ইয়াং বঞ্চিত হন ১১ রানের জন্য। ৮৯ রানে তিনি ফিরলে ভাঙে এই জুটি। সেঞ্চুরি পাননি নিকোলসও। ৯৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য জয়ের ভিত পেয়ে যায় স্বাগতিক দল। ম্যাচ শেষ করে আসেন টম লাথাম-ব্লান্ডেল জুটি। লাথাম ৩৪ ও ব্লান্ডেল ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। 

রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ড শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল নিখুঁত। একবারও মনে হয়নি তারা বিপাকে আছে। বল হাতে কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারেননি শরিফুল ইসলাম-হাসান মাহমুদরা। উইকেটে কোনো সুবিধা ছিল না। লাইন-লেন্থেও হাসানরা ছিলেন এলোমেলো। 

হাসান সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিলেও তিনি ওভার প্রতি রান দিয়েছেন আটের বেশি। একই অবস্থা তানজীম হাসান সাকিবের। পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ওভার প্রতি ৫.৪৪ রান দিয়েছেন শরিফুল। অভিষিক্ত রিশাদ ৯.২ ওভারে দেন ৬২ রান। সৌম্যকে আজ বোলিংয়ে দেখা যায়নি। অনিয়মিত বোলার হিসেবে শান্ত ৫ ওভার বোলিং করে ৩০ রান দেন। 

এর আগে সৌম্যর রেকর্ডময় সেঞ্চুরিতে ভর করে তিনশর কাছাকাছি যেতে পারে বাংলাদেশ। শুরু আর শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে মূলত বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। এক প্রান্তে সৌম্য একাই টেনেছেন বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের রানের প্রায় ৫৮ শতাংশের বেশি আসে তার ব্যাট থেকেই। 

দুই শূন্যর পর ১৫১ বলে সৌম্য খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রানের ইনিংস। চারের মার ২২টি। আর ছয় ২টি। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস এখন সৌম্যর। এতদিন ১৬৩ রানে এটি দখলে ছিল রেকর্ডের বরপুত্র শচীন টেন্ডুলকারের। বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১২৮ রান। চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে কিউইদের দেশে সেঞ্চুরির দিন সৌম্য ছড়িয়ে যান সতীর্থদেরও।    ইনিংসের শুরুতে বাংলাদেশ হারায় এনামুল হক বিজয়ের  (২) উইকেট। ক্রিজে এসে একে একে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত (৬) লিটন দাস (৬) ও তাওহীদ হৃদয় (১২)। ৮০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ৯১ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। এই জুটিই বাংলাদেশকে তিনশর কাছে নিয়ে যায়। মুশফিক ৪৫ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি।  

সেঞ্চুরির পর আরেক প্রান্তে ঝড়ো ব্যাটিং করেন সৌম্য। সেঞ্চুরির পর  ৩৫ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৬৯ রান। শেষ দিকে ছোট ছোট অবদান রাখেন মেহেদি হাসান মিরাজ (১৯) ও তানজীম হাসান সাকিব (১৮)। শেষ ওভারে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট। কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন জ্যাকব ডাফি ও উইলিয়াম। ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে সৌম্যর হাতে। 

১ ম্যাচ আগেই সিরিজের ফল হয়ে গেছে। ২৩ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচটি এখন শুধু নিয়মরক্ষার। তবে বাংলাদেশের নজর থাকবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর দিকে।