খেলাধুলা

মুমিনুলে শ্রীলঙ্কার জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে বিলম্ব

শ্রীলঙ্কার জন্য যে সমীকরণটা ছিল অতি সহজ, বাংলাদেশের জন্য তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। সিলেট টেস্টে বিজয়ের পতাকা উড়াতে কেবল ৫ উইকেট পেলেই যথেষ্ট ছিল অতিথিদের। বাংলাদেশের জন্য ৪৬৪ রান। সব মিলিয়ে ৫১১ যা আগে কখনো টেস্ট ক্রিকেটে হয়নি।

ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় নিশ্চিত হার জেনেই সোমবার বাংলাদেশের মাঠে নামা। জয়ের আনুষ্ঠানিকতা কেবল সারার অপেক্ষা শ্রীলঙ্কার। এমন লড়াইয়ে তাদেরকে কেবল অপেক্ষায় রাখলেন মুমিনুল হক। ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ১১ টেস্টে ৪ সেঞ্চুরি মুমিনুলের। সংখ্যাটি আজ পাঁচে নিয়ে যাওয়ার সুযোগও তৈরি করেছিলেন। লেজের ব্যাটসম্যানরা তাকে সমর্থনও করলেন। কিন্তু ৩২৮ রানের বিশাল পরাজয়ের দিন আক্ষেপ থেকে গেল মুমিনুলের জন্য। ১৩ রানের জন্য ১৩তম সেঞ্চুরি মিস তার।

প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ১৮২ রানে থেমে গেল দ্বিতীয় দফায়। তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ১টা ৫৮ মিনিট। সব মিলিয়ে দিনে খেলা হলো ১৮৬ মিনিট। তাতেই শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেট নিয়ে নিশ্চিত করে সিলেট টেস্ট। আর বাংলাদেশের আরেকটি টেস্ট হারের ‘লজ্জা।’ এই ‘লজ্জা’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বহুবারই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে ৪৬৫ রানে হার যা এখনো নিজেদের সর্বোচ্চ রানে পরাজয়। ২০০২ সালে কলম্বোতে ২৮৮ রানে হার, ২০১৭ সালে গলে ২৫৯ রানে পরাজয়। বারবার শ্রীলঙ্কার ‘ভূত’ যেন বাংলাদেশের-ই ঘাড়ে পড়ে!

ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় নিশ্চিত হার জেনে দিন শুরু বাংলাদেশের। ফকফকা আকাশ টেস্ট ক্রিকেটকে আমন্ত্রণ জানায় দুহাত ভরে। এরকম অবস্থায় খেলা যতটুকু লম্বা করা যায়, হারের ব্যবধান যতটা কমানো যায় সেই চিন্তাই থাকে। সঙ্গে কিছুটা ব্যক্তিগত অর্জন। এমন ম্যাড়ম্যাড়ে পরিস্থিতিতে প্রথম উইকেটের জন্য শ্রীলঙ্কাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।

প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪৭ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪৭ রান করা তাইজুল দিনের তৃতীয় ওভারে ফেরেন সাজঘরে। পেসার রাজিথার ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েও টিকে থাকতে পারেননি।

সেখান থেকে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে মুমিনুলের নতুন লড়াই শুরু হয়। কিছুটা সময়ের জন্য দুজনের ব্যাট উইকেট আগলে রাখে। বল পুরোনো হতে থাকায় শ্রীলঙ্কার বোলারদের তেজও কমতে থাকে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শটে রানও তুলে নেন দুই ব্যাটসম্যান। জমাট ৮৩ মিনিট ও ৬৬ রানের যুগলবন্দিতে প্রথম ঘণ্টায় আর কোনো উইকেট না হারিয়ে কাটিয়ে দেন তারা।

মনে হচ্ছিল প্রথম সেশনটাও কাটিয়ে দেবেন তারা। কিন্তু রাজিথা বোলিংয়ে ফিরে শ্রীলঙ্কাকে সপ্তম উইকেটের স্বাদ দেন। ভাঙেন মিরাজ মুমিনুল জুটি। জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজিথার লেন্থ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৫০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে সাজানো ৩৩ রানের ইনিংসটি থেমে যায় সেখানে।

সকালের সেশনে বলার মতো আর কিছু হয়নি। ২৫ ওভারে ৮২ রান যোগ করে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচটা দ্বিতীয় সেশনে নিয়ে যাওয়া-ও যেন এই টেস্ট বিবেচনায় অন্যরকম এক অর্জন। পরাজয় নিশ্চিতের পরও টেস্ট ক্রিকেটের আসল খেলাটাই খেলল!

মধ্যাহ্ন বিরতির পর প্রথম পাঁচ ওভারে শরিফুল ও মুমিনুলের জুটি জমে যায়। এ সময়ে মুমিনুল তুলে নেন তার ১৭তম ফিফটি। শরিফুল তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে জীবন দিয়েও বেঁচে যাওয়া শরিফুল অষ্টম ওভারে ফিরতি ক্যাচ দেন রাজিথাকে। সেখানে থেমে যায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ৪২ বলে ১২ রানের লড়াই। রাজিথা পরের উইকেট নিতে সময় নেননি। খালেদকে গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ দেন। এই স্বাদ অবশ্য তার জন্য নতুন নয়। ক্যারিয়ারের ১২তম ডাককে সঙ্গী করেছেন প্রথম ইনিংসে ২২ রান করা এই ব্যাটসম্যান। তাকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ফাইফারের স্বাদ পান ডানহাতি পেসার।

একা হয়ে পড়া মুমিনুল কতদূর আগান সেটাই ছিল দেখার। অভিষিক্ত নাহিদ রানার পেশাদার ক্রিকেটে ব্যাট করার অভিজ্ঞতাও নেই। তবুও রাজিথার ওভার কোনোমতে রুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু লাহিরু কুমারার শরীর তাক করা বাউন্সারের কোনো জবাব ছিল না তার কাছে। দ্বিতীয় স্লিপে যখন ক্যাচ দেন তখন মুমিনুল অপরপ্রান্তে ৮৭ রানে অপরাজিত। ২৪৮ মিনিটের লড়াই, ১৪৮ বলের যুদ্ধ থেমে যায় ওখানেই। ১২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো পরিপাটি ইনিংসটি সেঞ্চুরিতে রূপ নিলে বলার মতো কিছু হতো।

সিলেট টেস্ট এখন অতীত। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে চট্টগ্রাম-যাত্রায় বাংলাদেশ দলের সঙ্গী হলো বিশাল পরাজয়। সঙ্গে লিটন, শান্তদের ব্যাখ্যাতীত শটের দুঃস্মৃতি। চট্টগ্রামে নিরাপদ ক্রিকেট নয়, বাংলাদেশ জিততে চায়। সিরিজ ১-১ ড্র করতে চায়।