খেলাধুলা

স্বপ্ন আকাশছোঁয়া অথচ পারফরম‌্যান্স গড়পড়তা

‘চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আপনাদের লক্ষ‌্য কি? নাজমুল হোসেন শান্ত: আমরা চ‌্যাম্পিয়ন হওয়ার জন‌্য খেলবো।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের এমন আত্মবিশ্বাসী উত্তর শোনার জন‌্য সামনে বসা ক্রীড়া সাংবাদিকদের কেউই প্রস্তুত ছিল না। কেননা নিজেদের সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ‌্যের ফরম‌্যাটেই অচেনা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সবশেষ সিরিজে ৩-০ ব‌্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। সেখানে চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ‌্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা আকাশছোঁয়ার মতো।

পায়ের নিচে মাটি শক্ত না হলে আকাশ যে ছোঁয়া যায় না তা হাড়ে হাড়েই টের পেল নাজমুল হোসেন শান্ত অ‌্যান্ড কোং। চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম দুই ম‌্যাচ বাজেভাবে হেরে, অসহায় আত্মসমর্পণ করে এক ম‌্যাচ আগেই বিদায় নিশ্চিত করেছে। তাতে একটা বিষয় সামনে এসেছে স্পষ্টভাবে, গড়পড়তা পারফরম‌্যান্সে বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে টিকে থাকা সম্ভব না কোনোভাবেই।

দুই ম‌্যাচেই বোলাররা যা করার করেছেন। ব‌্যাটসম্যানরা ছিলেন স্রেফ অসহায়। প্রস্তুতি ম‌্যাচ থেকে ব‌্যাটিংয়ে যে করুণ দশা শুরু হয়েছিল তা গতকাল নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে ম‌্যাচেও ধরা পড়েছে প্রবলভাবে। আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে। ডট বলের স্রোতে ভেসে গেছে ইনিংসের চেহারা। অহেতুক শট খেলতে গিয়ে বিলিয়ে এসেছেন উইকেট।

স্বপ্ন দেখতে হলে জোর থাকতে হয়। সেই লক্ষ‌্য পূরণে জেদ থাকতে হয়। মুখের কথায় যতটা বিশ্বাস ছড়ানো যায় কিন্তু ২২ গজে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন থাকতে হয়। বাংলাদেশ দলের পারফরম‌্যান্স, মাঠে শরীরি ভাষা, লক্ষ‌্যে পৌঁছানোর লড়াই কোনোকিছুতেই বাংলাদেশ রেসে ছিল না। বরং নিজেদের পারফরম‌্যান্সকে হাস‌্যরসে পরিণত করেছেন।

নিজেরা ক্রিকেট খেলেন বলে বাইরের সমালোচনা গায়ে মাখাতে পছন্দ করেন না। সমর্থকদের আয়নায় মুখ দেখতে বলতেও দ্বিধা করেন না। পেইন কিলার নিয়ে লুকিয়ে মাঠে নামার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেন নির্ধিদ্বায়। সাফল‌্য বলে কয়ে আসে না। এর জন‌্য যে নিবেদন থাকতে হয়, কষ্ট করতে হয়, ভাবনার গভীরতা থাকতে হয় তার ধারে-কাছেও নেই ক্রিকেটাররা। তাইতো এখন সমালোচনা বেড়ে গেছে বহুগুণ। হাসি আর ট্রলের ঝড় বইছে।

তবে দলের প্রত‌্যেক ক্রিকেটারের ভাবনা, স্বপ্ন চ‌্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো ছিলই বলে মনে করছেন শান্ত, ‘‘আমার কাছে এরকম মনে হয় না (চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলায় দল চাপে পড়েছে)। কারণ, দলে যতগুলি ক্রিকেটার ছিল, সবাই এই স্বপ্ন নিয়েই এসেছিল। আমার মনে হয় যে, যদি বড় স্বপ্ন না-ই দেখি, তাহলে আসলে কীভাবে খেলব! এখানে তো শুধু লড়াই করতে আসিনি, জিততে এসেছি।”

৫০ ওভারের ম্যাচে যদি ৩০ ওভার থেকে রানই না আসে, তাহলে আর বাকি থাকে কী! নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ইনিংসে ১৮১ বলে কোনো রান আসেনি। ভারতের বিপক্ষে সংখ্যাটা ছিল ১৫৯। দুবাইয়ের সেদিনের উইকেট কিছুটা কঠিন থাকলেও রাওয়ালপিন্ডিতে রানের পসরা সাজানো উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ। তারপরও ব্যাটিংয়ের এই দশা!

ডট বলের ব‌্যাখ‌্যায় শান্ত সামনে আনলেন ধারাবাহিক উইকেট হারানোর প্রসঙ্গটি, “এই অভ্যাসটা তৈরি করা জরুরি যে, নিয়মিত আমরা কীভাবে তিনশ করতে পারি। আমরা হয়তো একদিন-দুদিন তিনশ করি। এখান থেকে বের হওয়ার জন্য অনুশীলনে বলেন, নিয়মিত কীভাবে ভালো উইকেটে খেলা যায়, নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে এই ধরনের স্কোর গড়া যায়, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আজকের ম্যাচে ডট বল হওয়ার কারণ, আমরা মাঝের ওভারগুলোয় কিছুক্ষণ পরপরই উইকেট দিয়ে দিয়েছি।”