অলিম্পিক ইতিহাসের পাতা থেকে বহু আগেই হারিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট। ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের পর থেকে আর কখনও অলিম্পিক মঞ্চে দেখা যায়নি এই জনপ্রিয় খেলা। অবশেষে দীর্ঘ ১২৮ বছর পর আবারও সেই সুযোগ এসে গেল। ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট ফিরছে নতুন রূপে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
৩৪তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ১৪ জুলাই হলেও ক্রিকেট মাঠে গড়াবে তারও দুই দিন আগে, অর্থাৎ ১২ জুলাই। ছেলেদের ও মেয়েদের দুই বিভাগেই খেলা হবে, অংশ নেবে ছয়টি করে দল। প্রতিটি দলের স্কোয়াড হবে ১৫ জনের, অর্থাৎ এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৮০ ক্রিকেটার অলিম্পিকের অংশ হবেন।
প্রাথমিক পর্ব ও নকআউট শেষে পদক নির্ধারণী ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ২০ এবং ২৯ জুলাই। প্রতিটি ম্যাচ হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ও সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। অধিকাংশ দিনেই থাকছে ডাবল হেডার, অর্থাৎ দিনে দুটি করে ম্যাচ। তবে ১৪ ও ২১ জুলাই কোনো খেলা থাকবে না।
ক্রিকেট ম্যাচগুলো আয়োজন করা হবে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে পোমোনা শহরে অবস্থিত ফেয়ারগ্রাউন্ডস স্টেডিয়ামে, যার আনুষ্ঠানিক নাম ‘ফেয়ারপ্লেক্স’। প্রায় ৫০০ একরজুড়ে বিস্তৃত এই ঐতিহাসিক কমপ্লেক্সটি ১৯২২ সাল থেকে বিভিন্ন আয়োজনের কেন্দ্রস্থল। এবার সেটিই রূপ নিচ্ছে এক বিশেষ অলিম্পিক ক্রিকেট ভেন্যুতে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বিশ্ব যখন এখানে এসে একত্রিত হবে, আমরা এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিটি সম্প্রদায়ের গল্প বলব। এলএ২৮ হবে এমন এক অলিম্পিক, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি গর্বিত ঐতিহ্য হয়ে থাকবে।”
তিনি আরও জানান, অলিম্পিক ঘিরে ইতিমধ্যে ‘প্লে-এলএ’ নামে একটি বৃহৎ ক্রীড়া কর্মসূচিতে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে, যা অলিম্পিকের প্রভাব ও অন্তর্ভুক্তির দিকটি তুলে ধরছে। এলএ২৮ ও আইওসির প্রচেষ্টায় এই আয়োজন কেবল ক্রীড়ার নয়, বরং সংস্কৃতি, একতা এবং উদ্ভাবনের প্রতীক হয়ে উঠবে বলেও আশাবাদী তিনি।
১৯০০ সালের অলিম্পিকে মাত্র দুটি দল গ্রেট ব্রিটেন ও স্বাগতিক ফ্রান্স অংশ নিয়েছিল একটি দুই দিনের ম্যাচে। সে ম্যাচে জয়ী হয়ে স্বর্ণ জেতে ব্রিটিশরা। তারপর ক্রিকেট অলিম্পিক ইতিহাস থেকে ছিটকে পড়ে দীর্ঘ সময়। এবার সেই ভুলে যাওয়া অধ্যায় আবার খুলে যাচ্ছে। তবে এবার আর দুই দলের নিরবতা নয়, বরং থাকবে গর্জন, প্রতিযোগিতা, কৌশল আর বিশ্বমঞ্চে ক্রিকেটের নতুন পরিচিতি।
২০২৮ সালের গ্রীষ্মে লস অ্যাঞ্জেলেসে গড়াবে কেবল অলিম্পিক নয়, গড়াবে ইতিহাসের পুনর্জন্মও। ক্রিকেট, এবার ফিরছে অলিম্পিকে একেবারে নতুন উদ্যমে, নতুন আঙিনায়।