খেলাধুলা

আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’

সাদমান ইসলাম মন খারাপ করতেই পারেন! একেবারে মনের মতো ২২ গজ পেয়েও একটা সেঞ্চুরি করতে পারলেন না। সেই পথেই তিনি ছিলেন। কিন্তু ৮০ রানে থমকে যায় তার ইনিংস। সাত মাস পর দলে ফেরা মাহমুদুল হাসান জয় সঙ্গীর মতো ভুল করলেন না। আয়নার মতো স্বচ্ছ উইকেটে একেবারে ঢিলেঢালা বোলিংয়ের বিপক্ষে তুলে নিলেন ক‌্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। সাত মাস পর দলে ফিরে সেঞ্চুরিতে প্রত‌্যাবর্তন রাঙিয়ে ১৬৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৭০ রানের ইনিংস খেলার পথে মুমিনুল হক করেছেন ৮০ রান। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল নিজেকে আরেকধাপ এগিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায়।

ব‌্যাটসম‌্যানদের রান উৎসবে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড দৌড়াল। আয়ারল‌্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানে আটকে বাংলাদেশ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করলো ১ উইকেটে ৩৩৮ রানে। স্কোরবোর্ডে লিড ৫২ রানের। এই রান উৎসব তৃতীয় দিন কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার। নিজেরা ভুল না করলে থামানো কষ্টকর। একে তো আয়ারল‌্যান্ডের বোলিংয়ে সেই তেজ নেই। বাড়তি এক্স-ফ‌্যাক্টর নেই। সঙ্গে উইকেটের আচরণ। একেবারেই ফ্ল‌্যাট উইকেট। স্পিনে হুটহাট বল ছোবল দিলেও বাকিটা সময় নিরাপদ আচরণ করছে। একটু একটু ভাঙতে শুরু করেছে। যা তৃতীয় দিন থেকে প্রভাব রাখতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

তবে খুব বেশি যে প্রভাব রাখতে পারবে তা নিশ্চিন্তে বলা যায়। কারণ আয়ারল‌্যান্ডের স্পিনারদের তেমন বাড়তি কিছু চোখে পড়েনি। দুই স্পিনার হ‌্যারি টেক্টর ও অ‌্যান্ডি ম‌্যাকব্রাইন সারাদিন হাত ঘুরিয়েও তেমন কিছু করতে পারেননি। এছাড়া তৃতীয় স্পিনার হিসেবে ম‌্যাথু হ‌্যাম্পরেইস এসেছিলেন। বোলিংয়ে তেমন কোনো জোর নেই। পেসাররা বাড়তি সুবিধা করতে না পারায় বাংলাদেশের রান বড় হয়েছে। বিশেষ করে নতুন বলে সাদমান ও জয় ছিলেন দারুণ। উইকেটের চারিপাশে দুজন বেশ সাচ্ছন্দ‌্যে ব‌্যাটিং করেছেন। বাউন্ডারি পেয়েছেন নিয়মিত। ঝুঁকি তেমন নেননি। তাতেই কাজ হয়েছে।

তবে সেঞ্চুরির আক্ষেপ সাদমানের নিশ্চিয়ই আছে। ১০৪ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮০ রান করে উইকেটের পেছনে টেক্টরের হাতে ক‌্যাচ দেন। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় আইরিশরা। তাদের পুরো দিনের সাফল‌্য ওই সাদমানই। ১৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়ে। যা বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। এরপর মুমিনুল ক্রিজে এসে নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে সহজেই রান তুলে নেন।

জয় যত সময় কাটাচ্ছিলেন ততই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন। তৃতীয় সেশনে মাইলফলকে পৌঁছে যান তিনি। ২০২২ সালে ডারবানে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ৩ বছর পর পেলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ফেরার ম‌্যাচ সেঞ্চুরিতে রাঙিয়ে হাল ছাড়েননি ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান। ক‌্যাম্পারের পায়ের উপরের বল মিড উইকেট দিয়ে যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন বোঝা গেছে বড় কিছুর খোঁজে আছেন। হতে পারে দুইশ! তিনশই বা কেন নয়? এমন সুযোগ বারবার তো পাবেন না।

মুমিনুল ২০ রান পূর্ণ করে সেঞ্চুরি পান কিনা সেটাও দেখার। তাদের দুজনের ব‌্যাট তৃতীয় দিনে কতটা আলো ছড়ায় সেটাই দেখার।

এর আগে ২৭০ রান নিয়ে ব‌্যাটিংয়ে নেমেছিল আয়ারল‌্যান্ড। স্কোরবোর্ডে ১৬ রান যোগ করতে অবশিষ্ট ২ উইকেট হারায় অতিথিরা। এজন‌্য বাংলাদেশকে করতে হয়েছে ১৪ বল। হাসান মাহমুদ ও তাইজুল একটি করে উইকেট নিয়ে সাত সকালেই তাদের গুটিয়ে দেন।

৩.৯৮ রান রেটে অনায়েসে ব‌্যাটিং করে রান উৎসব করেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ও  দ্বিতীয় সেশনের মাঝের সময়টায় একটা সময়ে রান রেট ৪.৫ ও হয়ে গিয়েছিল। এমন ঢিলেঢালা বোলিংয় আর মুখস্থ উইকেটে রান উৎসব হবে এটাই তো স্বাভাবিক।