বয়স যেন তার কাছে কেবল একটি সংখ্যা। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে আবারও সেটার প্রমাণ দিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আল-নাসরের জার্সিতে জোড়া গোল করে আল আখদুদের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে দাপুটে জয় তুলে নেন তিনি। এই দুই গোলের মধ্য দিয়ে চলতি বছরে তার গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৪০-এ। আর ক্যারিয়ারের মোট গোল বেড়ে হলো ৯৫৬। সহস্র গোলের মহাকাব্যিক স্বপ্নের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
৪০ বছর বয়সেও রোনালদোর ধারাবাহিকতা অবিশ্বাস্য। বয়স, ক্লান্তি বা সময়; কিছুই যেন তার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়ে যাওয়া এই ক্যারিয়ার বারবার প্রমাণ করছে, শারীরিক সক্ষমতা আর মানসিক দৃঢ়তা থাকলে বয়স কেবল কাগজের হিসাব।
রোনালদোর এই অনবদ্য পারফরম্যান্স প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। ব্রিটিশ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পিয়ার্স মরগান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোনালদোকে আখ্যা দিয়েছেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে নিরলস গোলস্কোরার হিসেবে।
তার ভাষায়, “ সে কখনোই গোল করা থামায় না। পৃথিবীর যেখানেই খেলুক, যে দলের হয়েই খেলুক। কে সর্বকালের সেরা (গোট) তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু ফুটবলের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ধারাবাহিক গোলস্কোরার কে, এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সে হলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।”
নিজেও থেমে থাকেননি রোনালদো। এক্সে (সাবেক টুইটার) তার ১০৫ মিলিয়ন অনুসারীর উদ্দেশে লিখেছেন ছোট কিন্তু অনুপ্রেরণামূলক বার্তা- “সফলতার একটাই পথ- কঠোর পরিশ্রম।”
এই কঠোর পরিশ্রমই তাকে এতটা দীর্ঘ সময় শীর্ষ পর্যায়ে ধরে রেখেছে। ফিটনেস ও খাদ্যাভ্যাসে আপসহীন শৃঙ্খলাই রোনালদোর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের মূল চাবিকাঠি। ক্লাব ও জাতীয় দল- দুই জায়গাতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার শক্তি তিনি পান এই জীবনযাপন থেকেই।
৪০ বছর বয়সেও রোনালদোর ফিটনেস রুটিন শুনলে বিস্মিত হতে হয়। পিলাটিস, সাঁতার আর সপ্তাহে পাঁচ দিন জিম; সব মিলিয়ে তার অনুশীলন সূচি বেশ কঠিন। প্রতিটি সেশনে থাকে ২৫-৩০ মিনিট কার্ডিও, উচ্চগতির স্প্রিন্ট এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ওয়েট ট্রেনিং। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা শরীরচর্চায় ব্যয় করেন তিনি। যা এই বয়সের খুব কম ক্রীড়াবিদই ধরে রাখতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাসেও একই রকম শৃঙ্খলা। প্রচলিত তিন বেলার বদলে দিনে ছয় বেলা খান রোনালদো। নাশতা, ব্রাঞ্চ, লাঞ্চ, স্ন্যাকস, সাপার ও ডিনার। এই সূক্ষ্ম পরিকল্পনাই তাকে মাঠে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দিতে সাহায্য করে।
পরিসংখ্যানও তার ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য দেয়। ক্যারিয়ারে ১৪টি ভিন্ন ক্যালেন্ডার বছরে ৪০-এর বেশি গোল করেছেন রোনালদো। ব্যক্তিগত সেরা ছিল ২০১৩ সাল। সেবার ক্লাব ও দেশের হয়ে করেছিলেন ৬৩ গোল। চলতি মৌসুমেও সৌদি প্রো লিগে নয় ম্যাচে তার গোল ১২টি। তার নেতৃত্বেই ১০ ম্যাচ অপরাজিত থেকে লিগ টেবিলের শীর্ষে আল-নাসর। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এগিয়ে আছে চার পয়েন্ট।
ভবিষ্যতের দিকেও চোখ রোনালদোর। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন এখনো তার চোখে। রেকর্ডে ভরা ক্যারিয়ারের জন্য সেটি হতে পারে রাজকীয় সমাপ্তি। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বলছে, হাজার গোলের মাইলফলক শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর সেটা তিনি ছুঁতে পারেন আরও দুই-এক মৌসুম প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলেই।
হাজার গোলের মাত্র ৪৪টি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এই পর্তুগিজ কিংবদন্তি প্রমাণ করে চলেছেন- অদম্য মানসিকতা, কঠোর পরিশ্রম আর গোল করার অতুলনীয় ক্ষমতা তাকে বিশ্ব ফুটবলের এক সংজ্ঞায়িত চরিত্রে পরিণত করেছে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শুধু রেকর্ড ভাঙছেন না, তিনি নিজেই হয়ে উঠছেন একটি মানদণ্ড। সম্ভবত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গোলস্কোরার হিসেবে নিজের উত্তরাধিকার আরও দৃঢ়ভাবে লিখে চলেছেন।