‘‘সন্ধ্যা কাটে না অথচ বছর কেটে যায়’’ - মির্জা গালিবের উক্তি নিশ্চয়ই মনে আছে। নিয়ম করে সময় কেটে যাচ্ছে। কেটে যাচ্ছে প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, প্রহর, দিন, সপ্তাহ, মাস…সবশেষে বছর। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টো দুই হাজার পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ করার অপেক্ষা।
এখন হিসেব কষার পালা। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খাতায় কাঁটাছেঁড়া করার পালা। সেই হিসেব করতে গিয়ে বেরুবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপার সাফল্য এবং ভারতের আধিপত্যবাদ। ঘটনাবহুল বছরে মিশে আছে প্রাপ্তি, অর্জন, হৃদয় ভাঙার গল্প, ও হিংসা ছড়ানোর নানা উপকরণ। সেসবে একটা নজর দেওয়া যাক:
ক্রিকেটকে হয়তো দুটি ভাগেই ভাগ করে ফেলার সময় চলে এসেছে, এক, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের পরিণতি… দুই, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজের ভয়াবহতা… ভারত ও পাকিস্তানের দিয়েই শুরু করা যাক। প্রতিবেশি এই দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে ক্রিকেট অভিধানে এখন হাইব্রিড শব্দটাই ঢুকে গেছে। ভারত পাকিস্তানে গিয়ে ক্রিকেট খেলবে না। পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে ক্রিকেট খেলবে না। তাতে যা হবার তাই হচ্ছে, এশিয়া কাপ কিংবা আইসিসি প্রতিযোগিতা আয়োজকের ম্যাচ আয়োজন করতে হচ্ছে নিরপেক্ষ ভেনু্যতে। বাড়তি পয়সা খরচ হচ্ছে ঠিক। কিন্তু তাদের সঙ্গে যারা খেলছে তাদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বেশি। তাতে ক্রিকেটের সৌন্দর্যও হচ্ছে নষ্ট।
এছাড়া মাঠে দুই দল নূন্যতম সৌজন্যবোধও দেখাচ্ছে না। যার কারণে এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপের ট্রফিও পায়নি ভারত। এশিয়া কাপের প্রধান পাকিস্তানি হওয়াতে তাদের থেকে ট্রফি নেবে না ভারত। নাছোড়বান্দা এসিসি প্রধান নাকভিও। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ট্রফি দিতে পারবেন না তা মনে করিয়ে ভারতকে ট্রফি দেয়নি। তাতে শিরোপা ছাড়া অদৃশ্য ট্রফি নিয়ে ভারতের উদযাপনের অবিশ্বাস্য ছবি ক্রিকেটের মানচিত্রে ফুটে উঠে। ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখা গেল সারা বছর জুড়ে।
বছরের শেষ দিকে ফুটে উঠল অ্যাশেজের ভয়াবহতা। যেখানে প্রথম তিন ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়া সহজেই নিশ্চিত করেছে অ্যাশেজ। বক্সিং ডেতে চতুর্থ ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড। শেষ ম্যাচ এখনও বাকি। চার ম্যাচের দুটিই শেষ হয়েছে দুই দিনে। যেই অ্যাশেজ দিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার লাভের মুখ দেখার কথা।
সেই অ্যাশেজের কারণে এখন বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন আয়োজকরা। শুধুমাত্র বক্সিং ডে টেস্টেই ৫ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া মাঠের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড পাত্তাই পায়নি। তাদের বাজবলের ‘মৃতু্য’ হয়েছে বলে বলছে গণমাধ্যম। টেস্ট ক্রিকেটের আদি ও শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এমন ভয়াল পরিণতি টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে পাঁচদিনের টেস্ট আসলেও প্রয়োজন আছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এসবের মাঝে অর্জনের দিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয় অভূতপূর্ব সাফল্য। জুনে লর্ডসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রোটিয়ারা। প্রোটিয়াদের টেস্ট সাফল্য অবশ্য থেমে থাকেনি কেবলই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের ভেতরই। ২০২৫ সালে ভারত সফরে এসে ২৫ বছর পর তারা ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করে ২-০তে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছে তাদেরই মাটিতে।
এছাড়া ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে উইয়ান মুল্ডার সবাইকে চমকে দেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে লারার ৪০০ রানের রেকর্ডকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লারার প্রতি সম্মান রাখতে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান তিনি।
সাফল্যের দিক থেকে ভারত ধরে রেখেছে নিজেদের আধিপত্য। প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত, জিতেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও এশিয়া কাপও। ইংল্যান্ডে গিয়ে ড্র করেছে টেস্ট সিরিজ। ব্যক্তিগতভাবে এই বছরটা দারুণ কেটেছে শুবমান গিলের। এই বছরই ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হয়েছেন। বছরের সর্বোচ্চ রানও তার, ৯ টেস্টে ৯৮৩। সেঞ্চুরি ৫টি। টেস্টে বল হাতে বছরের সবচেয়ে বেশি শিকার মিচেল স্টার্কের, ১১ টেস্টে ৫৫টি। টেস্ট ক্যারিয়ারের উইকেট সংখ্যা ৪২৮। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের ভেতর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ঘটনাবহুল এই আইপিএলের শিরোপা জেতে বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ১৮ বছর পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু জিতল প্রথম আইপিএল ট্রফি, বিরাট কোহলির প্রথম আইপিএল শিরোপা।