খেলাধুলা

ফুটবলে জনজোয়ারের বছর ২০১৪

আমিনুল ইসলাম : ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে, দিন যায় কথা থাকে, থেকে যায় কত স্মৃতি, হবে না কভু ইতি।’ ঘড়ির কাঁটায় সওয়ার হয়ে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা পেরিয়ে দিন, সপ্তাহ, মাস ঘুরে শেষের পথে আরও একটি বছর। বছরের ৩৬৫টি দিন ঘটেছে নানান ঘটনা। পৃথিবীর ৭ শতাধিক কোটি মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তির আনন্দ আর না পাওয়ার বেদনাকে সঙ্গী করে সময়ের অমোঘ নিয়মে অতীতের খাতায় ঠাঁই মিলতে যাচ্ছে ২০১৪ সালের।

 

স্বভাবগত কারণেই মানুষ পেছনের স্মৃতি রোমান্থন করতে চায়। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই হলো মনের আয়নায় ফেলে আসা পথের স্মৃতিটুকু আগলে রাখা, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানো। এই স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে হিসেব মেলানোর নাম সালতামামি। অন্যান্য সবকিছুর মতো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের পঞ্জিকাবর্ষ থেকে অতিক্রান্ত হতে চলেছে আরও একটি ক্রীড়াবর্ষ। কালের আবর্তে একটি বছর হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি মাঠে ও মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ও তার রেশ। ২০১৪ সালে দেশের ফুটবলে যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে চলুক পাঠক চোখ বুলানো যাক সেসব আলোচিত ঘটনাগুলোয়। তার আগে নতুন বছরের ক্রীড়াবিশ্ব হয়ে ওঠুক আরও বিনোদনময়, উপভোগ্য এবং আকর্ষণীয়- থাকল সেই প্রত্যাশাও।

 

ফুটবলে জনজোয়ার : ঢাকার মানুষের জীবনধারা অনেকটাই যান্ত্রিক। নানা ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতার কারণে ফুটবল খেলা দেখতে তারা মাঠমুখী কমই হয়ে থাকেন। তাই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ২০ হাজার আসনের বেশিরভাগ ফাঁকা থাকে। খরায় ভোগে দর্শক গ্যালারি । হাতেগোনা কিছু দর্শক ছাড়া অধিকাংশ আসনই থাকে খালি পড়ে। এ চিত্র চলছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। ঠিক এমন এক সময়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দুই মাসে ঢাকার বাইরে তিনটি ম্যাচের আয়োজন করেছে। তিনটি ম্যাচেই জনজোয়ার জানান দিচ্ছে বাংলাদেশে ফুটবলের কদর কমে যায়নি, এর ভবিষ্যত এখনও উজ্জল। সিলেট স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে স্টেডিয়ামের গেট ভেঙে প্রায় ৫০ হাজার দর্শক মাঠে উপস্থিত হয়। অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যশোর ও রাজশাহীতেও একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। দুই মাঠেই ৩০ হাজারের অধিক দর্শক উপস্থিত হয়েছিল। এরপর ঢাকায়ও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে। তাতেও দর্শকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালটি ছিল বাংলাদেশের ফুটবলে জনজোয়ারের বছর।

 

বাংলাদেশের সর্বাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ : ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে গোয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলে মামুনুলরা। তাতে অবশ্য রেফারির কারণে ২-২ গোলে ড্র হয়।

এরপর নেপাল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। এশিয়ান গেমস ফুটবলে মাঠে নামার আগে ভিয়েতনামের বিপক্ষেও একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। গেল অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজ খেলে। প্রথমটি ১-১ গোলে ড্র হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ১-০ গোলে।

 

সবশেষ জাপান অনূর্ধ্ব-২১ দলের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলে মামুনুল-এমিলিরা। ম্যাচে তারা হেরে যায় ৩-০ গোলে। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালে সাত-সাতটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এখানেই শেষ নয়, এশিয়ান গেমস ফুটবলে তিনটি ম্যাচ ধরলে এই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ১০ এ।

 

মামুনুলের ভারত মিশন : প্রথমবারের মতো ভারতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। এই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা।

 

ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির মালিকানাধীন দলটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। অবশ্য কোনো ম্যাচ খেলতে না পারলেও দারুণ এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি।

 

ডি ক্রুইফ নাটক : বাংলাদেশের ফুটবলে ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া লেগেছিল নেদারল্যান্ডসের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ ও রেনে কস্টারের মাধ্যমে। তাদের দুজনকে উচ্চমূল্যে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।

 

কিন্তু ঠিকমতো তাদের বেতনাদি পরিশোধ করতে না পারায় তারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেন। শেষ পর্যন্ত অক্টোবরে তাদের বরখাস্ত করা হয়। বকেয়া বেতননাদি ঠিকমতো পরিশোধ না করলে মামলা করারও হুমকি দিয়ে যান ক্রুইফ। কিন্তু বছরের শেষপ্রান্তে এসে আবার ডাচ কোচদ্বয়কে ফিরিয়ে আনার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

 

এশিয়ান গেমসে ২৮ বছর পর জয় : চলতি বছর এশিয়ান গেমস ফুটবলে অংশ নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করে। এটা শুধু জয়ই ছিল না। তার চেয়েও বেশি কিছু। কারণ এশিয়ান গেমসে এই জয়টি যে এসেছিল ২৮ বছর পর । প্রথম ম্যাচে জয় পেয়ে স্বপ্ন দেখতে এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে ইতিহাস গড়ার। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে উজবেকিস্তানের কাছে ৩-০ ও শেষ ম্যাচে হংকংয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। কিন্তু অর্জন হিসেবে থেকে যায় ২৮ বছর পর এশিয়ান গেমস ফুটবলে বাংলাদেশের জয়টি।

 

বাফুফের একাডেমি প্রতিষ্ঠা : একটি ফুটবল একাডেমি গড়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। অবশেষে ফিফার সহায়তায় ২০১৪ সালে সিলেটে কার্যক্রম শুরু করেছে বাফুফের ফুটবল একাডেমি।

 

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে মেয়েদের সাফল্য : ঘরের মাঠে আয়োজিত হয়েছিল এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব।

 

‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী জর্ডানকে হারিয়ে দারুণ সূচনা করে বাংলাদেশের মেয়েরা। দ্বিতীয় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৬-০ গোলে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার পথ তৈরি করে। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও ইরানের কাছে হেরে গিয়ে সেটা আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু মাঠে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে সেটা মুগ্ধ করেছে সবাইকে।

 

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের সাফল্য : তৃতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের ইসলামাবাদে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বাংলাদেশ।

 

 

গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান (৬-১) ও মালদ্বীপকে (৩-১) হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে ওঠে সুইনু প্রু মারমারা। কিন্তু ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে  নেপালের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয়।

   

ময়মনসিংহের মেয়ে সানজিদা আক্তার ৪ গোল করে সবার নজরে এসেছিল। নজর এড়ায়নি এএফসিরও। সম্প্রতি এশিয়ার অনূর্ধ্ব-১৬ প্রমীলা ফুটবলারদের একটি তালিকা তৈরি করেছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন। সেই তালিকায় ৪ গোল করা সানজিদা আক্তার স্থান করে নিয়েছে সেরা দশে। সে অবস্থান করছে সাত নম্বরে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ ডিসেম্বর ২০১৪/আমিনুল