ভ্রমণ

বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়

রাসেল পারভেজ : ১ জুলাই ২০১৫। আমাদের বাংলাদেশ অর্জন করেছে এক অনন্য স্বীকৃতি। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই হিসাব করে বিশ্বব্যাংক জানিয়ে দিল এখন থেকে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে এই স্বীকৃতি পেলাম আমরা। সাবাস বাংলাদেশ। দেশ নিয়ে যারা হতাশ, হীনম্মন্যতায় ভুগছেন, তাদের জন্য একটু স্বস্তি দিতে পারে বিশ্বব্যাংকের এই স্বীকৃতি। এখন থেকে নিম্ন আয়ের জরাজীর্ণ অর্থনীতির দেশ নয় বাংলাদেশ। আমাদেরও কিছু বলার আছে, আছে কিছু অর্জন। এখন থেকে আমরা আর তলাবিহীন ঝুড়ি নই। ঝুড়িতে কিছু না কিছু উদ্বৃত্ত থাকছে, যা একটু একটু করে আমাদের অর্থনীতির সিঁড়িকে ওপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কী অর্জন করেছি আমরাপ্রতিবছর ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক মোট জাতীয় আয়ের দিক থেকে দেশগুলোকে চারটি আয় গ্রুপে ভাগ করে তালিকা প্রকাশ করে। নিম্ন আয়, নিম্ন মধ্য আয়, উচ্চ মধ্য আয় ও উচ্চ আয়ের দেশ। মধ্য আয়ের দেশের দুটি ভাগ- নিম্ন মধ্য ও উচ্চ মধ্য। মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে মোট জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার হতে হবে। এর নিচে ও উপরে যথাক্রমে নিম্ন ও উচ্চ আয়ের দেশ। যাদের আয় ১ হাজার ৪৬ থেকে ৪ হাজার ১২৫ ডলার পর্যন্ত, তারা নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ। আমাদের অবস্থান এখন এই তালিকায়। নিঃসন্দেহে নতুন মাইলফলক এটি। সমস্যা ও সম্ভাবনানানা সংকট ও সমস্যা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কৃষিক্ষেত্রে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষিভিত্তিক শিল্প বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করেছে। শিল্পের অগ্রগতি তেমন না হলেও, যা আছে তা দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে নতুন গন্তব্যের দিকে। যে কারণে আজ আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্ব স্বীকৃতি পেলাম। এ অর্জন ১৬ কোটি মানুষের পরিশ্রমের ফসল। সরকারকেও ধন্যবাদ। এই অর্জন বলে দেয় সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা কাজ করছে।  সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করা। তার প্রায় ছয় বছর আগেই তা হলে গেল। এখন সংগ্রাম করতে হবে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় প্রবেশের। প্রশ্ন হলো- একটি ধাপ পার হতে লেগে গেছে ৪৪ বছর। আর কত বছর হলে আমরা আরেকটি ধাপ অতিক্রম করতে পারব? ছয় বছরে সরকার কি সেই লক্ষ্যে কাজ করে সফল হতে পারবে? উত্তর সহজ- না পারার কী আছে? অর্থনীতির জোয়ার যখন আসে, তখন তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার কথা বলতে পারি আমরা। তারা যদি পেরে থাকে, তবে আমরা কেন নয়। অর্থনীতির নাজুকতা, মানবসম্পদ ও আয়ের সূচকে অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া সম্ভব। বিশ্ব সংস্থাগুলো বলছে, এই তিন সূচকে বাংলাদেশের ক্রম উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। আরো গতি সঞ্চার করতে পারলে, তা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের সামনে অপার সম্ভাবনা। দুঃস্বপ্ন শুধু একটাই। রাজনৈতিক অস্থিরতা। আমরা যেন শঙ্কামুক্ত হতে পারি না, কখন আবার অস্থির হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত থেকে থেকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আমাদের অর্থনীতির গতিতে মন্থরতা তৈরি করেছে। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এ দেশের মানুষ। শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করছে সবাই। যতটুকু সফলতা, তা নিয়ে বসে থাকলে আর এগোনো যাবে না। অনেক সমস্যা রয়েছে আমাদের। মানবসম্পদকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে না পারলে দেশের চাকা ঘুরবে না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে মানবসম্পদ রয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে দেশের উন্নয়ন ঠেকানো যাবে না, জোর করেও কেউ আটকে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে তা কিছুটা কম হলেও ১ হাজার ৪৫ ডলারের নিচে নয়। এখন আমাদের টার্গেট ৪ হাজার ডলার মাথাপিছু আয়। একটি জাতির উন্নয়নের জন্য কর্মক্ষম প্রজন্ম চাই। এখন আমাদের তা আছে। কয়েক বছর পরে চিত্র পাল্টে যাবে। বেড়ে যাবে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা। তার আগেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ঘাম ঝরাতে হবে সরকারকে। দেশের জন্য এগিয়ে আসতে হবে ১৬ কোটি মানুষকে। উন্নয়ন যাত্রায় সঙ্গে রাখতে হবে বিদেশি বন্ধুদের। তাহলে উন্নত দেশের দিকে আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। লেখক : সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জুলাই ২০১৫/রাসেল পারভেজ/এএন