ভ্রমণ

সুষমাকে নামিয়ে উঠতে চায় কংগ্রেস

রাসেল পারভেজ : মওকা পেয়েছে কংগ্রেস। এই মওকার নাম সুষমা স্বরাজ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে নামাতে পারলে বিধ্বস্ত কংগ্রেস আবার গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে। তাই সুষমার পদত্যাগ ছাড়া কোনো বিকল্প ভাবছে না কংগ্রেস। লোলিতগেট। ভারতে জন্ম হওয়া নতুন শব্দ। যার অর্থ, ‘লোলিতকেলেঙ্কারী’। সুষমা স্বরাজ জড়িয়ে গেছেন এর সঙ্গে। আইপিএলে দুর্নীতি ও ফিক্সিং করে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত লোলিত মোদি। সারা বিশ্বের মানুষ টিভি পর্দায় এই মানুষটিকে দেখেছেন। তার পাশে কখনো সুষমা স্বরাজ, কখনো বসুন্ধরা রাজে আবার কখনো বড় বড় রাজনীতিককে দেখা গেছে।প্রায় দুই বছর ফেরারি আসামি লোলিত মোদি। লন্ডনে থাকা অবস্থায় তাকে পর্তুগালে যেতে সাহায্য করেন সুষমা। এসব এখন জানা কথা। লোলিতও ফোকাসে নেই। লোলিত আদালতের আসামি। কিন্তু সুষমা এখন রাজনীতির আসামি। কংগ্রেস বলছে, পদত্যাগই তার প্রধান শাস্তি। পদত্যাগ তাকে করতেই হবে। এ ছাড়া পার্লামেন্টে কোনো আলোচনা হবে না, সে হোক উচ্চকক্ষে বা নিম্নকক্ষে। ভারতের পার্লামেন্টের গ্রীষ্মকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে ২১ জুলাই। তিন দিন পার হয়েছে। তিন দিনের চিত্র একই। অধিবেশন শুরু হয় ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেসসহ বিরোধী অবস্থানে থাকা দলগুলোর কথার ঝড়ে কিছু সময়ের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে যায় পার্লামেন্ট। তিন দিনই কয়েক ঘণ্টা চলার পর অধিবেশন মূলতবী করতে হয়েছে। বিরোধীদের এক কথা, এক দাবি- ‘সুষমার পদত্যাগ চাই।’ ফলে আর কোনো আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। পার্লামেন্টে হাজির হয়ে কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী মোদির দিকে আক্রমণ শানিয়েছেন। লোলিত মোদিকে বাঁচানোর পথ পরিহার করতে পরামর্র্শ দিয়ে বলেছেন, ‘সুষমাকে পদত্যাগ করিয়ে প্রমাণ করুণ, আপনি ও বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’ সুষমার মতো ক্লিন ইমেজের একজন রাজনীতিক এখন বিজেপির মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছেন। বিজেপি এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সুষমাকে তার পদ থেকে সরানো হবে না। বিজেপির এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসকে রাজনীতি জমিয়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। কংগ্রেসের মরা গাঙে যেন বান ডেকেছে। লোকসভা ভোটের পর যারা অস্তিত্ব হারানোর শংসয়ে ছিল, তারাই এখন বিজেপির অস্তিত্বে আঘাত করছে। শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মুখে সুষমার পদত্যাগের দাবি। তার সঙ্গে সুর চড়িয়েছে দিল্লির আম আদমি, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকেসহ আঞ্চলিক দলগুলো। এই সুযোগে আর যে কাজটি করার সুযোগ পাচ্ছে কংগ্রেস, তা হলো- বিজেপির স্তম্ভ বলা হয় যাদের, তারাই যখন দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে সাহায্য করেন, তখন এর অর্থ দাঁড়ায় বিজেপি একটি দুর্নীতিবাজ দল। এই দলের হোতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে ছাপ লেগে আছে, তা আড়াল করতে আদাজল খেয়ে লেগেছে দলের শীর্ষ নেতা সোনিয়া গান্ধী ও অন্যরা। কংগ্রেসের এখন বলতে সুবিধা হয়েছে, কংগ্রেস নয়, বিজেপিই বড় চোর। দলীয় সমর্থন থাকার পরও বিরোধীদের চাপে যদি সুষমাকে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতেই হয়, তবে নিঃসন্দেহে ঘুরে দাঁড়াবে কংগ্রেস। বিজেপির অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রায় মারাত্মক ভাটা পড়বে। ভারতের জনগণ দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্তির আশায় বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে ও পরে বিজেপির বিগদ্ধ রাজনীতিক লালা কৃষ্ণ আদভানি এ কথা বলেছেন। বাস্তবতাও ছিল খানিকটা তেমন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের দুই মেয়াদে অনেক জনরোষ কুড়িয়েছে কংগ্রেস ও এর শরিকরা। জনক্ষোভের কেন্দ্রে ছিল দুর্নীতি। যার প্রভাবে ভূমিধ্বস বিজয় লাভে সক্ষম হয় বিজেপি। বিজেপির সেই ‘দুর্নীতি মওকা’ এবার কংগ্রেসের কোটে। ফলে তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে চায় কংগ্রেস। সুযোগ পেয়ে দল গোচ্ছানোর কাজে নামতে পারছে কংগ্রেসিরা। শুধু সুষমা নন, লোলিতগেটের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তার পরিবারের সদস্যদেরও নাম। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেও ফেঁসে গেছেন এই কেলেঙ্কারীতে। সুষমার চেয়ে বসুন্ধরাই লোলিত মোদির বেশি কাছের মানুষ। ফলে প্রাদেশিক রাজনীতিতেও ঝড় তোলার সময় এসেছে কংগ্রেসের। মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও কংগ্রেসের টার্গেটে আছেন। তবে সুষমা যেহেতু রাজনীতির বড় তারকা, তাই তাকে নিয়েই যত মাথাব্যথা। সুষমার জবনিকার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নতুন সূচনা করতে চায় কংগ্রেস।কিন্তু বিজেপি ছেড়ে কথা বলবে না। সোনিয়া গান্ধীর জামাতা রবাট ভদ্র দুর্নীতির মামলায় ঝুলছেন। কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কোলগেট অর্থাৎ কয়লাকেলেঙ্কারীতে ফেঁসে আছেন। বিষয়গুলো সামনে আনছে বিজেপি। তবে নির্বাচনের পর কংগ্রেসের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার তেমন কোনো ইস্যু ছিল না। লোলিতগেট সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়- সুষমা কী করেন। পদত্যাগ না করলেও কংগ্রেসের রাজনীতিতে এই ইস্যু জ্বালানি জুগিয়ে যাবে অনেক দিন। লেখক : সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৫/রাসেল পারভেজ