ভ্রমণ

বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা!

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন রকি : "Ausrtralia cricket team postponed thier bangladesh tour for security concern." এই নিউজটি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবার পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশে এক কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়। মূলত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের এমন হতচকিত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখের হাসি ম্লান করে দিয়েছে বৈকি।

 

প্রত্যেকটা সিরিজে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অংশ নেয় এক নতুন উদ্যোমে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সিরিজ মানেই সমর্থকদের ম্যাচ প্রেডিকশন, বিশ্লেষন, বিস্তর আলোচনা, তর্ক-বির্তক, সেরা একাদশ নির্বাচন, অনুসন্ধান, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা। সর্বোপরি একটা ঈদের আমেজ বিরাজ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে।

 

এদিকে সাউথ আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দলও তাদের সফর স্থগিত করেছে। পাঁচটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-২০ খেলতে ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে আসার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রমীলাদের। অস্ট্রেলিয়ার ঐ সফর বাতিলের সূত্র  ধরে আফ্রিকা মহিলা ক্রিকেট দল তাদের সফর পিছিয়েছে।

 

দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার কারণে হঠাৎ জরুরি ছুটিতে যান ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালস। যিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ছেড়েছেন দলের ডেভেলপমেন্ট কোচ স্টুয়ার্ট কার্পিনেন। যিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। নিরাপত্তাজনিত কারণে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলও আগামী মাসে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশে আসতে রাজি নয় বলে জানা গেছে।

 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন ধরতে গেলে শোকাবস্থা বিরাজ করছে। কেন এই অবস্থা? দেশের এই অবস্থার জন্যে কি শুধু ঐ বিদেশি নাগরিক হত্যাই দায়ী? নাকি দেশের ভেতরে ও বাইরের কারও কোন ইন্ধন রয়েছে? নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই উন্নতি সহ্য করতে না পেরে তৃতীয় কোন পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে?

 

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্রমোন্নতি সহ্য করতে না পেরে তৃতীয় কোন পক্ষের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠাটা অমূলক কিছু নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের পথ চলা প্রায় দুই দশক। সেই কালের বাংলাদেশ আর এই কালের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাৎ। অনেক রেকর্ড গড়া হয়েছে, অনেক রেকর্ড ভাঙ্গা হয়েছে, অনেক স্বপ্ন দেখা হয়েছে, অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, কেউ  তারকা হয়েছেন কেউবা লিজেন্ড। বাংলাদেশ ক্রিকেট গত পাঁচ বছরে যে উন্নতি হয়েছে তা সত্যিই  ঈর্ষণীয়।

 

তারুণ্য আর মেধায় ভরা বাংলাদেশের ক্রিকেট খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই সুখকর দিক গুলো কেউ হয়ত সহ্য করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ধ্বংসের জন্য এক নীল নকশা প্রনয়ণ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের হাসি ম্লান করতে উম্মুখ হয়ে আছে একদল  চক্র। বরাবরই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ঘরের মাঠে বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশ যাতে ঘরের মাঠে খেলতে না পারে তাই হয়ত এই ব্যবস্থা করেছে তৃতীয় কোনো শক্তি।

 

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের নির্ধারিত ভারত সফর  বাতিল করেছিল। তারপর অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছিল ভারত। সময় থাকতে তারা কাজ করে সমস্যার সমাধান করে ফেলে।

 

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলকে বহনকারী বাসে সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্রায় সাত বছর পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসিত ছিল। এরপর কত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ দুই-একটি দলকে তাদের মাঠে খেলতে নিতে পেরেছে।

 

বাংলাদেশেও যদি এই অবস্থা বহাল থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেকেও নির্বাসিত হতে পারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখা থেকে বঞ্চিত হতে পারে অন্তপ্রাণ ক্রিকেট সমর্থক ও ক্রিকেটপ্রেমীরা।মাঠ কর্মী, স্পন্সর কোম্পানি গুলোসহ পুরো বাংলাদেশ অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

 

তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচিত দেরি না করে  দ্রুত সবকিছু সামাল দিয়ে সমস্যার সমাধান করা। পাশাপাশি সরকারেরও উচিত বিষয়টি গভীরভাবে দেখা।

 

 

লেখক : ছাত্র, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অক্টোবর ২০১৫/মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন রকি/আমিনুল