ভ্রমণ

বই পাইরেসি বন্ধ করতে হবে

উজ্জল বিশ্বাস : প্রতিবছর বইমেলা আমাদের স্মরণ  করিয়ে দেয়  মহান ভাষা আন্দোলনের কথা। কারণ, ভাষার মাসেই শুরু হয় একুশে গ্রন্থমেলা। প্রতিবছর মেলায় প্রকাশিত হয় নতুন পুরাতন লেখকদের কয়েক হাজার বই। বই প্রেমী, লেখক, প্রকাশকদের জন্য একটি ভিন্নধর্মী মাস হলো এই ফেব্রুয়ারি। অধিকাংশ লেখকই চান এ মাসে বই বের করতে। আবার প্রকাশকরা সারা বছরের আয়-রোজগার ফেব্রুয়ারি মাসে পুষিয়ে নিতে চান।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, মেলা উপলক্ষে তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশ করায় অনেক ভুল থেকে যায়। ঠিকমত সম্পাদনা করার সুযোগ থাকে না। ফলে যে বই প্রকাশিত হয় তা অনেক ক্ষেত্রে মানসম্মত হয় না। প্রতিবছর একুশে গ্রন্থমেলায় যে সব বই প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে ৯০ শতাংশই মানসম্মত নয়। এছাড়া কিছু নামকরা বই থেকে পাইরেসি করে বই প্রকাশ করা হয়। অনেক সময় অন্যের বই থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হয়। ফলে  প্রতিবছরই মেলায় পাইরেটেড বই বিক্রি হয়। প্রকাশনা শিল্প বাঁচাতে হলে পাইরেটেড বই বন্ধ করতে হবে।

 

অনেক বইয়ের গুণগত মান দুর্বল, ভাষাগত বিভ্রান্তিতে ভরা। অনেক বইয়ের  আকর্ষণীয় কভার, কিন্তু ভেতরে যা আছে তা তথ্যসমৃদ্ধ নয়, মানসম্মত নয় অথবা তাড়হুড়ো করে প্রকাশের ফলে ভুল থেকে গেছে।  আমাদের দেশে অধিকাংশ বই প্রকাশিত হয় একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে। বই পাইরেসির অভিযোগ নতুন নয়। প্রতিবছরই মেলায় পাইরেটেড বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বছরও পাইরেটেড বই বিক্রি করার অভিযোগে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘রঙিনফুল’ ও ‘নীলপরী’ নামের দুটি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি  পাইরেটেড বই বিক্রির কারণে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ‘ঐক্য প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয়।

 

২০১৫ সালে একুশে বইমেলায় ২০টি প্রকাশনা সংস্থাকে বিদেশি পাইরেটেড বই প্রকাশের কারণে সতর্ক করেছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট টাস্কফোর্স। ২০১৫ সালে ৫০টি স্টলে বিদেশি বইয়ের পাইরেটেড সংস্করণ পাওয়া যায়।

 

প্রতিবছর একুশে মেলায় গড়ে তিন হাজারের মতো বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু এসব বইয়ের মধ্যে নব্বই শতাংশই মানসম্মত নয় বলে মনে করে বাংলা একাডেমি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর একটি বড় কারণ অধিকাংশ বইয়ের ক্ষেত্রে সম্পাদনা হয়না। অনেক বই ভুলে ভরা। কোন ধরনের সম্পাদনা ছাড়া বই প্রকাশ হওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অনেক বইয়ের বানান, বাক্য গঠন এবং বিষয় বিন্যাস একেবারেই মানসম্মত নয়।

 

পাইরেট চক্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আজ হয়ে উঠেছে ভয়াবহ শক্তিশালী। হয়ে উঠেছে সমগ্র প্রকাশনা শিল্পের জন্য হুমকি। পাইরেটেড বইয়ের কারণে পুরো প্রকাশনা শিল্প ডুবতে বসেছে। পাইরেটেড বইয়ের কারণে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নকল বই বিক্রির ফলে লেখক তার প্রাপ্য সম্মানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাইরেসির নেতিবাচক প্রভাবে দেশের জিডিপিও উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে বই পাইরেসির সঙ্গে অনেক খ্যাতনামা প্রকাশনী সংস্থাও জড়িত।

 

নকল বই বাণিজ্য সাধারণত চার প্রকারের হয়ে থাকে। এগুলো হলো-১. ছাপাখানা বেআইনি মুদ্রণ; ২. বই ফটোকপি করে পুনর্মুদ্রণ; ৩. ই-বই বা পিডিএফ কপি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি; ৪. বইয়ের বিষয়বস্তু সংগ্রহ করে পুনর্লিখন ও পুনর্মুদ্রণ।

 

প্রকাশনা শিল্পের ইতিহাস বেশ পুরনো হলেও এখনও পুরোপুরি শিল্পের রূপ পায়নি। বিদেশে প্রকাশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হিসেবে বিবেচিত। প্রকাশনা শিল্প অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সেখানে সংস্কৃতি, তথ্য, শিক্ষা, গণতন্ত্র প্রভৃতিতেও অবদান রাখে। অথচ আমাদের দেশে পাইরেসির কারণে প্রকাশনা খাতটি পুরোপুরি শিল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারছে না। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভূক্ত প্রকাশনা শিল্প । সর্বমহলে সচেতনতা সৃষ্টি করে সরকারকে এই বিষয়ে অবহিত করানোর সময় এসেছে, যাতে প্রশাসনিকভাবে নকল বইয়ের এই বাণিজ্যের মূলোৎপাটন করা যায়।

 

আমরা এই মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, প্রকাশনা খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং এই খাত যাতে প্রকৃত শিল্পের রূপ পায় তার পদক্ষেপ নিতে। বইমেলা আরো বেশি করে করা যেতে পারে বিভাগীয় ও জেলা শহরে। তরুণদেরকে যদি বইমুখী করা যায় তা গোটা জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শাহনেওয়াজ