ভ্রমণ

আইনের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই আইন

‘সবার জন্য আইন সমান’ এতদিন ধরে প্রচলিত কথাটি হঠাৎ থমকে গেছে তনু’র বিচার প্রসঙ্গে। এই মেধাবী শিক্ষার্থীর হত্যার বিচারের দাবিতে জোরালো আন্দোলন হওয়ার পর, প্রশ্ন উঠেছে, ‘তনু তো এই যুগেরই মেয়ে, তার হত্যার বিচার কেন প্রচলিত আইনে হবে না?’

 

কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, তনু হত্যার ঘটনা একটি আধুনিক অপরাধ। পুরনো মানসিকতায় তদন্ত করে এর সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের মিল নেই। একে ঢেলে সাজাতে হবে। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন দিয়ে তনু হত্যার বিচার করা যাবে না।

 

যদিও এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এবং পরে আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রচলিত আইনেই তনু হত্যার বিচার সম্ভব।

 

প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে ভারতের একটি বিষয়। ২০১৩ সালে ভারতে ট্রেনে ধর্ষণের বিচার নিয়ে এ ধরনের কথা উঠেছিল। তখন দেশটিতে খুব কম সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার আইন পাশ করা হয় এবং ওই ঘটনার বিচার করা হয়।

 

কিন্তু আমাদের দেশে দ্রুত বিচার আইন আরও আগেই করা হয়েছে। রয়েছে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনও। তবুও তনু হত্যার বিচার দাবিতে আইনের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা অবশ্যই শঙ্কার জন্ম দেয়।

 

তনু হত্যার বিষয়ে তদন্ত চলছে, এর সুষ্ঠু এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও কার্যকর হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

এবার একটু নজর দেয়া যাক, আইন বাস্তবায়ন এবং আইনের সুফল পাওয়ার দিকে। একটু লক্ষ্য করলেই আমাদের চোখে পড়ে, আমাদের দেশে আইন প্রয়োগের যেমন সীমাবদ্ধতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে আইন বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতাও। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণের মধ্যেও আইন মেনে চলার প্রতি উদাসীনতা রয়েছে। এতে সার্বিকভাবে আমরা বঞ্চিতের কাতারে রয়ে যাচ্ছি।

 

প্রয়োজনের তুলনায় খুব একটা কম আইন নেই আমাদের দেশে। কিন্তু আইন থাকা সত্ত্বেও আমরা কি খুব একটা ভাল আছি? হয়তো আছি, হয়তো নেই। তবে ‘ভালো নেই’ এই শব্দটিই বেশি উচ্চারিত হয়।

 

এর মূল কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ আইন থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন। আমরা আইন বাস্তবায়ন হতে দেখি খুব কম। এরও কারণ রয়েছে। যেমন, অধিকাংশ আইন পাশ হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন ও কার্যকরের জন্য বিধিমালা নেই। আবার অনেক আইন রয়েছে যেগুলো যুগোপযোগী নয়। আর মোটা দাগে যে সমস্যা রয়েছে তা হলো, জনগণের মধ্যে আইন মেনে চলার মানসিকতা খুব কম।

 

ধরুন সড়ক দূর্ঘটনার কথা। এটি বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যা। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে চলছে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা। যদিও চলতি মাসের ২৪ তারিখ শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন আইন উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে এখনই এই আইন পাশ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

 

অথচ এতো বড় একটি জাতীয় সমস্যা সমাধানে আইন তৈরির বিষয়টি নীতি নির্ধারকরা গত ৩৮ বছর ভাবেননি। এ জন্য সড়ক দূর্ঘটনা লাঘবে আগের বিভিন্ন অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের হতশ্রী অবস্থা আমরা দেখেছি।

 

কয়েকদিন আগের কথা। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে একটি যাত্রীবাহী বাস। এর মধ্যে চালকের মোবাইল ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। চালক বাম হাতে মোবাইল ফোন ধরে কথা বলতে থাকে। এর মধ্যেই সিগন্যাল ছেড়ে দিলে চালক মোবাইল ফোনের লাইন না কেটে ডান হাতে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি চালানো শুরু করে। ব্যাপারটি কোনো যাত্রীর নজরে পড়েনি। এমনকি গাড়িটির পথরোধ করে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক কয়েকবার তাকিয়েও বিষয়টি লক্ষ্য করেননি।

 

পেছনে থাকা অন্য একটি গাড়িতে সাইড না দিয়ে আড়াআড়ি চালাতে গিয়ে বাসটি ধাক্কা লাগায় সামনের গাড়িতে। তখন কিছু যাত্রী মাথা গরম করে চালককে বকা দেয়। গাড়ির একেবারে সামনের দিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী খেয়াল করে চালকের কানে মোবাইল ফোন। ওই যাত্রী চালকের ফোনে কথা বলাটাকে ধাক্কা লাগার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে একটি ধমক দেয়। সেই ধমকের রেশ ধরে শুরু হয় চেঁচামেঁচি।

 

বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ২০১১ সালের ১১ জুলাই। সেদিন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন স্কুলছাত্র অকালে প্রাণ হারায়। পৃথিবীটাকে পুরোপুরি দেখার আগে একসঙ্গে অতগুলো কচি প্রাণ ঝরে যাওয়ায় পুরো জাতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয় এই ঘটনায়। পরে জানা যায়, স্কুলের ছাত্রদের বহনকারী ট্রাকটি যখন দুর্ঘটনায় পড়ে তখন চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন।

 

নিয়ম মোতাবেক আমাদের দেশে বড় কোনো ঘটণার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ঠিক তেমনি ওই ঘটনার পর সারাদেশে সব ধরনের যানবাহনে চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

 

বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশ কড়া নির্দেশ দেয়, চলন্ত গাড়ির চালকরা মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবে না। এজন্য শাস্তি ও জরিমানার বিধান করা হলো। এরপর ওই বছরেরই ২৬ জুলাই ফরিদপুরে বাস চালকের জরিমানা করে ট্রাফিক পুলিশ। কারণ, এক হাত দিয়ে মোবাইল ফোন কানে ধরে আর অন্য হাতের আঙুলের ফাঁকে সিগারেট গুঁজে গাড়ি চালাচ্ছেন সেই চালক।

 

মাত্র ১৫ দিনের মাথায় কঠোর নিষেধ ভঙ্গ করার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম নয়।

 

হয়তো অনেকের মনে আছে, ওই বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি চালানো অবস্থায় ড্রাইভারের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করতো। কিন্তু সেই ঘোর কাটতে বেশিদিন সময় লাগেনি। এখন গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়টা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে এখন আর এই বিষয়টি পড়ে না। পড়লেও তারা আমলে নেয় না।

 

প্রতিদিন কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের বাইরে বের হতে হয়, আধুনিক সমাজে এটা নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম কোনো পরিবহন। নিয়ম মোতাবেক, ভাড়ার বিনিময়ে তারা নিরাপদ সেবা দেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো; কোনো প্রকার পর্যবেক্ষণ ছাড়াই সারাদেশের পরিবহনগুলো চলছে। 

 

তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের আইনের বিধানসাপেক্ষে কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবে না, এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ খোদ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অসংখ্য পরিবহনের চালক ও কর্মীরা সবাই আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালানো অবস্থায় অবাধে ধূমপান করে যাচ্ছে। এতে মহিলা, শিশু ও অন্যান্য যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

 

আমরা সবাই জানি, অনেক বাসে চালকের বাম পাশের সারিতে মহিলা যাত্রীদের বসার অবস্থান। ফলে চালক যদি ধূমপান করে মহিলারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরোক্ষ ধূমপানও প্রত্যক্ষ ধূমপানের মতোই ভয়াবহ। কিন্তু হরহামেশাই এই আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

 

পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে, এর আগে প্রাইভেট কারের চালক এবং সামনের আসনে বসা যাত্রীর সিট বেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। একইসঙ্গে মোটরসাইকেল আরোহীরও হেলমেট পরাতেও বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। মাস খানেক ঢাকার রাস্তায় সকল গাড়ির চালক এবং সামনের সিটের যাত্রী সিট বেল্ট বাঁধতেন। অধিকাংশ মোটরবাইক চালক হেলমেট ব্যবহার করতেন। ধীরে ধীরে প্রাইভেট কারের চালক ও সামনের আসনের যাত্রীর শরীর থেকে সিট বেল্ট খুলে পড়েছে। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর মাথা থেকে হেলমেট নেমে গেছে।

 

২০১৩ সালের প্রথম দিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিল, ফুটপাতে মোটর সাইকেল চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের জন্য শাস্তির বিধান হলো। বড় জোর সপ্তাহ দুই এই নিষেধাজ্ঞা সবাই মেনে চলেছে। এমনকি তখন ফুটপাতে মোটর সাইকেল উঠলে পথচারীরাই বাঁধা দিত। এটা এখন কয়জন মেনে চলেন, তা রাস্তায় নামলেই দেখা যায়।

 

পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হওয়ায় ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। শুধু ব্যবহারই নয়, পলিথিন উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ, বিতরণ, পরিবহন ইত্যাদি সবই নিষিদ্ধ। অর্থাৎ আইনটি প্রণয়নের সময় কোনো প্রকার ফাঁক রাখা হয়নি। তবু এই সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে পরিবেশবিদসহ অনেকের মধ্যেই হতাশা কাজ করছে। পলিথিনের ব্যবহার একটুও কমেনি বরং বহুক্ষেত্রে বেড়েই চলছে।

 

আশির দশকে দেশে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। আইন পড়ে আছে, আইনের খাতায়। পলিথিনের ব্যবহার কিন্তু বেড়েই চলেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, পলিথিনের বিপরীতে দেশে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্যও আইন রয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন তো দূরের কথা অনেকে জানেনই না বিষয়টি।

 

অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার লাগানোর কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম নগর এবং দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহর। বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এই প্রচারণা চলছে। যদিও গত কয়েক বছরে সরকারি প্রচারণা অতীতের সব বাণিজ্যিক প্রচারণাকে হার মানিয়েছে। অথচ এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার আইন রয়েছে। স্থানীয় সরকার আইনের (২০০৯) পঞ্চম তফসিলের ৪৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ‘করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে বিজ্ঞাপন, নোটিশ, প্ল্যাকার্ড বা অন্য কোনো প্রকার প্রচারপত্র আঁটিয়া দেওয়া অপরাধ।’ এখানে সরকারের কারণে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি ক্ষতিকর কিছু ইঙ্গিত করে।

 

রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনের স্মৃতি এখনও মানুষের মনে আছে। ২০১০ সালের ৩ জুন আগুনে পুড়ে প্রাণ হারায় ১২৩ জন। অপরিকল্পিত রাসায়নিক গুদাম, প্লাস্টিক কারখানাই ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার মূল কারণ। ঘটনার পর সরকারও উদ্যোগী হয়েছিল আবাসিক এলাকা, বাসাবাড়িতে গড়ে তোলা রাসায়নিক দ্রব্যের অবৈধ গুদাম সরানোর কাজে। গঠিত হয়েছিল কমিটি। তারপর ৫ বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে পারেনি কমিটি।

 

দেশের বিভিন্ন জনবসতি এলাকায় পোড়ানো হচ্ছে ইট। অথচ ইট পোঁড়ানোর জন্য দেশে ৩ বছর আগে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু ওই আইন ভাটা মালিকরা মানছে না। ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ প্রকাশিত হয়। নতুন আইনের ধারা-১ এর উপধারা-২ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন আইন অনুযায়ী দেশের সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার ইটভাটা ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে বন্ধ অথবা অন্যত্র স্থানান্তর করার জন্য নির্দেশনা ছিল। ইট ভাটা মালিকদের এ কাজে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তা প্রদানের ঘোষণা সত্ত্বেও আধুনিক পদ্ধতিতে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা স্থাপনে এগিয়ে আসেনি ভাটার মালিকরা।

 

মানুষের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণকারী কতগুলো সর্বমান্য ও সুসংহত নিয়মকানুনই আইন। কিন্তু দেশে আইন অমান্য করার যেন মহোৎসব চলছে। শিশুশ্রমের দণ্ডনীয় অপরাধকে অমান্য করে প্রতিনিয়ত কোমলমতি ও স্কুল গমনযোগ্য শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মারাত্মক ভূমিকম্প বিপর্যয়ের আশংকা থাকলেও প্রতিনিয়ত রাজধানীসহ সারাদেশে স্থায়ী পাকা স্থাপনা নির্মাণে ইমারত নির্মাণ আইন মানা হচ্ছে না। কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, মানা হচ্ছে না পরিবেশ আইন। আশি ভাগ গার্মেন্টস কারখানায় কোনো আইন মানা হয় না। চিংড়ি পোনা আহরণে কিংবা পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো আইনও মানা হয় না।

 

সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেলের প্রভাব নিরূপণে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসে জাতিসংঘের দুই সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল। তাঁদের মধ্যে একজন রায়ান হুইলার। জাতিসংঘের তেল অপসারণবিষয়ক এই পরামর্শক মন্তব্য করেন, ‘সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় অভিযুক্তকে শাস্তি দিতে বাংলাদেশে যথেষ্ট আইন রয়েছে।’ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২, বন আইন, মংলা বন্দর আইন, বিআইডব্লিউটিএ আইনসহ আরও অনেক আইনে বনে তেল ফেললে কী শাস্তি হবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

 

কিন্তু এসব আইন বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, অনেকে এসব আইনের নামও শোনেনি। কারণ, সরকারিভাবে কোনো প্রচারণা নেই।

 

মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আমরা জানি নতুন একটি আইন পাশ করা দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। জাতীয় সংসদে আইন পাস করার আগে অনেক প্রক্রিয়া পার করতে হয়। মন্ত্রণালয় আইনের খসড়া তৈরি করে। এর উপর মতামত নেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে খসড়া পরিবর্তন করা হয়। সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়। এরপর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর সংসদে যায়। তারপর সংসদীয় কমিটিতে যায়। এর পর তা পাস হয়।

 

তাই নতুন আইন করার বিষয়ে আমাদের খুব আগ্রহ না থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু নিত্যনতুন আইন তো অবশ্যই প্রয়োজন। আইন তৈরি হবে যুগের চাহিদায়। আমাদের মূল চাহিদা হচ্ছে, বিদ্যমান সকল আইনের সুফল যেন জনগণ পায়। যেন ‘আইনগুলো মানুষের জন্য’ বিষয়টি আমাদের উপলদ্ধি হয়।

 

যেসব আইন বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা নেই, সেসব আইন কার্যকরের জন্য যেন  বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। যেন সংশ্লিষ্টরা আইন বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়। আর সর্বোপরি বিদ্যমান আইনের মাধ্যমেই যেন সকল ঘঠনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়। তাহলে বিদ্যমান আইনে তনু হত্যারও বিচার পাওয়া স্বাভাবিক।

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৬/হাসান মাহামুদ/শাহনেওয়াজ