ভ্রমণ

গন্তব্য স্বর্গীয় নাফাকুম

এস এস জামিল : বান্দরবান পৌঁছতে দুপুর বারোটা বেজে গেল। গাইড ঠিক করা ছিল। বাসস্ট্যান্ডে নেমেই চড়লাম চান্দের গাড়িতে। পাহাড়ের কোল ঘেষা রাস্তায় গাড়ি ছুটল দুরন্ত গতিতে। আঁকাবাকা রাস্তা যেন রোলার কোস্টার। উঠছে আর নামছে! পথে গাড়ি থামিয়ে খাবারের কাজটা সেরে নিলাম। তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম থানচিতে। বলে রাখি, থানচির পরে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্কও পাবেন না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, সঙ্গে পাওয়ার ব্যাংক রাখা ভালো। থানচি থেকে রেমাক্রি যেতে মেশিনচালিত ছোট নৌকায় উঠতে হবে। ৩ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হবে জলপথে। এই পথে সাংগু নদী অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, রেমাক্রিতে আপনি পাবেন নতুন এক পৃথবীর সন্ধান। রাতে সেখানে থাকতে আদিবাসিদের কটেজ ভাড়া নেওয়া যাবে। এজন্য জনপ্রতি গুণতে হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। রাতে বারবিকিউ পার্টিও সম্ভব-বিষয়গুলো আমাদের জানা ছিল। কিন্তু আমরা এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে, রাতে খাবারের পালা শেষ করে অল্পসময় ক্যাম্প ফায়ার করলাম। তারপর সাড়ে বারোটা বাজতে না বাজতেই রুমে ঢুকে ঘুম। ভোরেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। গন্তব্য নাফাকুম জলপ্রপাত। বিরতিহীন হাঁটলাম দীর্ঘ পাহাড়ি পথ। বরফের মতো ঠান্ডা সাংগু নদীর হাঁটু পানিতে নামতে হলো কয়েকবার। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা হাঁটার পর পৌঁছলাম আমাদের গন্তব্যে- আহ! নাফাকুম। পৃথিবীর সব স্বর্গীয় সৌন্দর্য এখানে ভিড় করেছে যেন। ফটাফট কিছু ছবি তুলে নিলো সঙ্গীরা। ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে রাখলাম কিছুক্ষণ। গোসলের ইচ্ছে থাকলেও নামলাম না। ঘণ্টাখানেক নাফাকুমে সময় কাটিয়ে ধরলাম ফিরতি পথ। গন্তব্য আবার রেমাক্রি। যদিও ফিরে আসতে কষ্ট হচ্ছিল। স্বর্গ থেকে কেইবা যেতে চায়! যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বাস ছেড়ে যায়। এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাস চলে এ রুটে। ফকিরাপুল ও কমলাপুর রেল স্টেশনের পাশেই বাসের কাউন্টার। বান্দরবান বা থানচি থেকে চান্দের গাড়ি ও গাইড ঠিক করা যাবে। তবে অবশ্যই বিজিবি ও থানার অনুমতি নিতে হবে। রিজার্ভ বোটে পাঁচজন করে যেতে হবে রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে নাফাকুম যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটতে হবে। খরচ : ঢাকা থেকে বান্দরবান বাস ভাড়া নন-এসি ৬৫০ টাকা, এসি ৮৫০ টাকা। বান্দরবান থেকে  থানচী বাজার যেতে হবে, ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। এছাড়া বান্দরবান শহর থেকে থানচী রিজার্ভ চান্দের গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন, ভাড়া ৪-৫ হাজার টাকা। গাইড প্যাকেজ আকারে নিতে হয়, থানচী থেকে নাফাকুম পর্যন্ত যাওয়া আসা ২০০০ টাকা এবং রেমাক্রী থেকে যে গাইড নেবেন তাকে দিতে হবে ১০০০ টাকা। আর ট্রলার ভাড়া ৪-৫ হাজার টাকা। থানচী বাজার থেকে রেমাক্রী বাজার পর্যন্ত ভাড়া ১৫০-১৮০ টাকা জনপ্রতি। সতর্কতা : শিশু, বৃদ্ধদের এসব জায়গায় না নিয়ে যাওয়াই ভালো। ব্যাগ সবসময় হালকা রাখবেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/তারা