ভ্রমণ

ঈদের ছুটিতে পদ্মার পাড়ে

ফেরদৌস জামান : জীবন ছুটে চলেছে আপন নিয়মে। এখানে যেন কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের গতানুগতিক জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন প্রত্যাশা করে নতুন কিছু। জীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম, যান্ত্রিকতা, কোলাহল, অযাচিত শব্দ ও বায়ু দূষণ- সব যখন আমাদের জীবনের অনুষঙ্গে রূপ নেয় তখনই নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে বিশেষ ছুটিছাটা বা সপ্তাহ শেষে এক চিলতে নির্মল প্রশান্তির দরকার। পদ্মা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে নির্মিত পদ্মা রিসোর্ট হতে পারে আপনার সেই পরিবর্তনের ঠিকানা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে টেউটিয়া ইউনিয়নে এটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজ। মজার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে প্রথম ১২টির নামকরণ করা হয়েছে বাংলা ১২ মাসের নাম অনুযায়ী। বাকি চারটির নাম বাংলা চারটি ঋতুর নামে। কর্তৃপক্ষের এমন ভাবনা প্রশংসার দাবিদার। সেখানে যেতে চাইলে ঢাকাস্থ বুকিং অফিস থেকে পছন্দের কটেজের নাম উল্লেখ করে বুকিং দেওয়া যায়। সারাদিন অথবা শুধুমাত্র রাতের জন্যও আপনি সেখানে যেতে পারেন। পরিবার নিয়ে উপভোগ করতে পারেন রাতের সৌন্দর্য। সারাদিনের জন্য ভাড়া ২ হাজার টাকা। রাতের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। সাথে ১৫ শতাংশ হারে যুক্ত হবে মূল্য সংযোজন কর। প্রতিটি কটেজ বানানো হয়েছে সাত থেকে আটজন থাকার মতো করে। কটেজগুলোর উপরের ছাউনি বা চাল সুন্দরী পাতায় ছাওয়া। দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তালগাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ডুপ্লেক্স প্রতিটি কটেজের নিচ তলায় সাজানো আছে একসেট করে সোফা ও টেবিল। আছে সিঙ্গেল বেড। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর কটেজে প্রবেশ করেই যে জিনিসটি সর্বপ্রথম মন নাড়া দেবে তা হলো, খাবারের ব্যবস্থা। হাত-মুখ ধুয়ে সতেজ হয়ে প্রবেশ করুন রিসোর্টের সুসজ্জিত রেস্টুরেন্টে। প্রবেশের আগে অবশ্য নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে জনপ্রতি ৩০০ টাকা দিয়ে খাবারের টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত খাবার পরিবেশিত হয়ে থাকে সেট মেন্যু অনুযায়ী। উল্লেখ্য, বাইরে থেকে আনা খাবার সেখানে গ্রহণযোগ্য নয়। শরতে গেলে দেখবেন সামনে বিশাল কাশবন। এখন অবশ্য এই সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন না।   এখন কটেজের নিচেই দেখা যাবে পানির প্রবাহ আর দূরে মাঝে মাঝে পদ্মার বালুচর। উপভোগ করা যাবে দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীতে রং-বেরঙের পাল তোলা নৌকার ভেসে যাওয়া এবং বাতাসের প্রাণবন্ত খেলা। আর একটি বিষয় উল্লেখ করার আছে, এখানে সর্বোচ্চ দুইশ লোকের যে কোনো ধরনের খাওয়া ও সমাবেশের আয়োজন করার ব্যবস্থা আছে। ভরা বর্ষায় যখন নদীর পানির স্তর কটেজের পাটাতনের কাছাকাছি পর্যন্ত চলে আসে তখন বোটে বেড়ানো যেতে পারে রিসোর্টের সীমানার জলসীমায়। এ ছাড়াও রিসোর্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নৌ-বিহারের ব্যবস্থা। যেমন স্পিডবোট প্রতি ঘণ্টা ২৫০০ টাকা, সাম্পান আকৃতির নৌকা প্রতি ঘণ্টা ১২০০ টাকা এবং ট্রলার প্রতি ঘণ্টা ৬০০ টাকা। বিনোদনের অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে আছে ঘোড়ার পিঠে চড়ে আশপাশের খানিকটা ঘুরে দেখা। চাইলে রাতের আয়োজনে থাকতে পারে মনোমুগ্ধকর ক্যাম্পফায়ারের ব্যবস্থা এবং বারবিকিউ। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আশপাশে পাবেন না আলোর ঝলকানি, যান্ত্রিক কলরব। আর পূর্ণিমাতে গেলে তো কথাই নেই। ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্টের দূরত্ব প্রায় ৫০ কি.মি.। অনেক ভাবেই সেখানে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি বাস যায়। সেক্ষেত্রে গুলিস্তান থেকে গাংচিল পরিবহনের বাসে উঠতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়াও যাত্রাবাড়ি থেকে ইলিশসহ আরও বিভিন্ন কোম্পানির বাস প্রায় প্রতি দশমিনিট পরপরই মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এই বাসে গেলে নামতে হবে মাওয়া ঘাটে পৌঁছার আগে- চৌরাস্তা। এর বাম দিকে লৌহজং। এখান থেকে রিকশা বা অটো রিকশায় খুব সহজেই লৌহজং থানা ঘাট যাওয়া যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি রাখা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই কারণ লৌহজং থানা প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকটি গাড়ি রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা আছে। পদ্মার নয়ন জুড়ানো দৃশ্য এবং চারপাশের অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য বর্ষা উত্তম মৌসুম। এ কারণে এ সময় পদ্মা রিসোর্টে তুলনামূলক অধিক ভিড় থাকে। লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটে গিয়ে দেখা যাবে সেখানে অতিথিদের জন্য অপেক্ষা করছে ২-৩ টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোট। এগুলোই পৌঁছে দেবে ওপারের রিসোর্টে। থানা ঘাট থেকেই দেখবেন রিসোর্টের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। গতানুগতিক সুবিশাল বহুতল কোনো অট্টালিকা নয়, কুঁড়েঘরের আদলে তৈরি পদ্মা রিসোর্ট আপনাকে মুগ্ধ করবে।  যোগাযোগ রোড-১৯/বি, হাউস-২৮৯, নিচতলা, মহাখালী নিউ ডিওএইচএস, ঢাকা ০১৭১২১৭০৩৩০, ০১৭৫২৯৮৭৬৮৮ info@padmaresort.net রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৭/তারা