ভ্রমণ

থামেলের গলি পথে...

(কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালী আলোয়: ২য় পর্ব) ইকরামুল হাসান শাকিল: থামেল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরের একটি অংশ। এখানেই অধিকাংশ পর্যটকের আবাসস্থল। ভোর ৬টা। মুহিত ভাইয়ে কথামতো সবাই ঘুম থেকে উঠে হোটেলের রিসিপশনে চলে এলাম। সকালের শীতল আবহাওয়ায় থামেলের রাস্তায় হেঁটে চলছি। উদ্দেশ্য অসনবাজার। সেখানে আমরা চা খাবো। থামেলের রাস্তা ও গলি পথে নানান ধরনের মানুষ হাঁটছে। অসনবাজার ছোট একটি বাজার। সকালে আশপাশের মানুষজন কেনাকাটা করে। আমরা সেখানে গাভীর দুধের চা খেলাম। দু’জন নারী সেই চা বিক্রি করছেন। আমরা ঘুরে ঘুরে বাজারটি দেখছি। বাজারে একটি জিনিস বেশি চোখে পড়ল। তা হলো মাসরুম। ছোট বড় নানান ধরনের মাসরুম। ফুলও বিক্রি হচ্ছে বেশ। মন্দিরে মন্দিরে পুজো হচ্ছে। এই অসনবাজার থেকে আমরা পাকা পেঁপে, পেয়ারা কিনে নিলাম। থামেলের পথে হাঁটার সময় চোখে পড়লো ভূমিকম্পের রেখে যাওয়া স্মৃতি। পুরোনো দালানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দালানগুলোও বয়সের ভারে দাঁড়িয়ে থাকার অক্ষমতা প্রকাশ করছে। হোটেলের সামনে বাগানের ভেতরে টেবিল চেয়ার রাখা আছে। সেখানে আমাদের সকালের খাবার দেয়া হয়েছে। খাবারের শেষে পেঁপে ও পেয়ারাও খেলাম। তারপর সবাই কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে গোসল করে আবার বেরিয়ে পরলাম কেনাকাটা করতে। পর্বতারোহণ সংশ্লিষ্ট বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড নর্থ ফেসের শো-রুমটি আমাদের হোটেলের কাছেই। সেখানেই প্রথম এলাম। নর্থ ফেস, মাউন্টেন হার্ডওয়্যার ও অন্যান্য বেশ কিছু শো-রুম ঘুরে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করলাম।  

আজ আমাদের নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডে যাওয়ার কথা। নর্থ ফেসের সামনে থেকে দু’টি ট্যাক্সি করে চলে এলাম ট্যুরিজম বোর্ডে। এখানে আমাদের আগেই চলে এসেছে সুমন ও পুরবা। তারা সকল কাগজপত্র প্রস্তুত করছে। ভবনের ছাদে আমাদের একটি তাবুর নিচে বসতে দিয়েছেন। ছাদেই একটি ছোট টি-স্টল আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের জন্য মাসালা চা ও পাকা পেঁপে এলো। ছাদটা বেশ গোছানো। নানান রঙের ফুল ফুটে আছে। অপেক্ষার সময়টা ভালই কাটলো। দুপুর একটার দিকে আমাদের ডাকা হ’লো। এক অফিসার আমাদের সকলের সই নিলেন রেজিস্ট্রেশন ফরমে। তারপর আমাদের উত্তরীয় দিয়ে স্বাগতম জানানো হলো। দুপুর দু’টার সময় আমরা দুপুুরের খাবার খেলাম। খাবার শেষ করে আবার আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা শুরু করলাম। গলি পথের ভেতর দিয়ে মাউন্টেন হার্ডওয়্যারের কারখানায় এলাম। এই কারখানার মালিকের সাথে মুহিত ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক। তাই শো-রুমে না গিয়ে সোজা কারখানায়। এখান থেকেই আমাদের স্লিপিং ব্যাগ, ডাউন জ্যাকেট ইত্যাদি কেনা হলো। কেনাকাটার ফাঁকে ফাঁকে আমরা থামেলের রাস্তায়, দোকানে ছবিও তুলছি। অবশ্য দুই আপু ছবি একটু বেশিই তুলছেন। ছবি বেশি তোলার কারণও আছে। রাস্তার পাশে নানান রঙের জিনিস সাজিয়ে বিক্রি করছে দোকানিরা। যেমন হাজারো রকমের শোপিস, পোশাক, পুতুল, মালা, কানের দুল, মুখোশ ইত্যাদি। যদিও এসবের কিছুই আমরা কিনছি না। শুধু দেখছি আর সুযোগ পেলেই ক্লিক করে ছবি তুলছি। সন্ধ্যায় একটি দোকান থেকে আমার, বিপ্লব ভাই ও শামীম ভাইয়ের জন্য আইস বুট, ক্র্যাম্পন, ও আইস এক্স ভাড়া নিয়ে হোটেলে চলে এলাম।  

আজ রাতে আমাদের সাথে যোগ দিলেন নিশু (নিশত মজুমদার) আপু ও সাদিয়া আপু। নিশু আপু হলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট আরোহণকারী। তারা আমাদের আগেই নেপালে এসেছেন। মাউন্ট পিসাং (৬০৯১ মি.) নামের একটি পর্বত অভিযানে। নিশু আপুর এটি একটি সফল অভিযান। সাতটার দিকে তারা আমাদের হোটেলে চলে এলেন। তারপর আমরা একটি রেস্টুরেন্টে খেতে এলাম। হোটেলটির দোতলায় আমরা খেতে বসেছি। আমরা নিশু আপুদের অভিযানের গল্প শুনলাম আর রাতের খাবার সেরে নিলাম। খাবার শেষে আমরা সবাই নিশু আপুদের হোটেলে এলাম। তারা থামেল হোটেলে উঠেছেন। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আমাদের হোটেলে চলে এলাম। আমাদের রুমটি জিনিসপত্রে ভরে গেছে। সকাল ৮টার সময় লুকলার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট। তাই জিনিসপত্র রাতেই গুছিয়ে ফেলতে হবে। রাত ২টা বেজে গেলো ৩টি ডাফল ব্যাগ গুছাতে। তারপর সবাই নিজ নিজ বিছানায় গিয়ে ঘুমের সমুদ্রে কিছু সময় সাঁতার কাটলাম। (চলবে)

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জুলাই ২০১৮/তারা